১০০ দিন কাজের প্রকল্পে পক্ষপাতের অভিযোগকে ঘিরে এলাকায় দু’পক্ষে সংঘর্ষ হয়েছিল শুক্রবার। তারই জেরে রবিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের কেশিয়াড়িতে এক সিপিএম নেতাকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠল তৃণমূলের বিরুদ্ধে। নিহত বিমল সেনাপতি (৫৬) কেশিয়াড়ির বাঘাস্তি পঞ্চায়েতের দীপা গ্রামের বাসিন্দা। সিপিএমের দীপা শাখা কমিটির সম্পাদক তিনি। ঘটনার প্রতিবাদে আজ, সোমবার ১২ ঘণ্টা কেশিয়াড়ি বন্ধের ডাক দিয়েছে সিপিএম। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের অবশ্য দাবি, ঘটনায় তাঁদের দলের কেউ জড়িত নন।
কেশিয়াড়িতে গত শুক্রবার সিপিএম-তৃণমূল সংঘর্ষের জেরেই বিমলবাবুকে খুন করা হয়েছে বলে অভিযোগ সিপিএমের। বিরোধী দলনেতা তথা জেলারই সিপিএম বিধায়ক সূর্যকান্ত মিশ্রের অভিযোগ, “এটা পরিকল্পিত খুন। চাষ করছিলেন বিমলবাবু। তখন তো ভাবেননি, খুন হবেন। ওঁর জন্য তৃণমূলের জল্লাদ-বাহিনী অপেক্ষা করছিল।” তাঁর বক্তব্য, “এই নিয়ে বিধানসভা নির্বাচনের পরে এ রাজ্যে আমাদের ৬০ জন নেতা-কর্মী খুন হলেন। বাঁকুড়া, মেদিনীপুর, বর্ধমান, বীরভূমসর্বত্রই আমাদের কর্মীরা খুন হচ্ছেন। এই সরকারের কাছে কিছু প্রত্যাশা করি না।” |
তৃণমূলের স্থানীয় নেতারা অবশ্য দাবি করেছেন, শুক্রবারের সংঘর্ষে ‘নেতৃত্ব’ দেওয়ায় বিমলবাবুর উপরে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন স্থানীয় মহিলারা। দলের কেশিয়াড়ি ব্লক সভাপতি জগদীশ দাসের কথায়, “স্থানীয় মহিলারা ওই নেতাকে মারধর করেছেন বলে শুনেছি। খুনের সঙ্গে আমাদের দলের যোগ নেই। সিপিএম অপপ্রচার করছে।”
কেশিয়াড়ির বিধায়ক সিপিএমের। পঞ্চায়েত সমিতি সিপিএমের দখলে রয়েছে। যে পঞ্চায়েতে ১০০ দিন কাজের প্রকল্পে শুধু সিপিএমের লোকদের নেওয়া হচ্ছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ, সেটিও সিপিএম পরিচালিত। ওই অভিযোগকে ঘিরেই শুক্রবার সংঘর্ষে আহত হন দু’পক্ষের ৮ জন। তাঁদের মধ্যে ৫ জন তৃণমূল কর্মী-সমর্থক, বাকিরা সিপিএমের। তবে থানায় অভিযোগ হয়নি। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ চাষের কাজে দীপা গ্রামের মাঠে গিয়েছিলেন বিমলবাবু। সেই সময় তাঁর উপরে হামলা হয়। সিপিএমের অভিযোগ, আখ খেতের পাশে লুকিয়ে থাকা তৃণমূলের লোকজন বিমলবাবুকে রড, লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটায়। কার্যত আধ-মরা অবস্থায় এই সিপিএম নেতাকে স্থানীয় একটি পুকুরের ধারে ফেলে রেখে যায় হামলাকারীরা। গ্রামবাসীদের কাছে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় পুলিশ। বিমলবাবুকে উদ্ধার করে কেশিয়াড়ি ব্লক হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুপুরে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়। কেশিয়াড়ির সিপিএম বিধায়ক বিরাম মাণ্ডি বলেন, “গত কাল রাতেও তৃণমূলের লোকজন গ্রামে মিটিং করেছিল। গ্রামবাসীরা আতঙ্কে ছিলেন। কিন্তু এমন হবে কেউ ভাবতে পারেনি।” তাঁর অভিযোগ, “নৃশংস ভাবে তৃণমূলের লোকেরা মেরেছে বিমলবাবুকে।” তবে দীপা গ্রামের বাসিন্দারা মুখ খুলতে চাননি। রবিবার রাতে নিহতের আত্মীয়েরা থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। খড়্গপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীরেজ খালেদ বলেন, “অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।”
এ দিনই নারায়ণগড়ের মণিনাথপুর গ্রামে ৬ সিপিএম কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে ভাঙচুর-লুঠপাট চালানোর অভিযোগও উঠেছে তৃণমূলের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূলের দাবি, শনিবার ওই এলাকায় তাদের এক কর্মীকে ‘মারধর’ করেছিল সিপিএমের লোকেরা। এ দিন তারা ফের ‘হামলা’র চেষ্টা করলে প্রতিরোধ করে ক্ষিপ্ত জনতা। |