রঞ্জি ট্রফি? আছে, বাইশ বছর আগে হলেও আছে। দলীপ ট্রফি? তা-ও তো সে দিন জিতে নিয়েছে পূর্বাঞ্চল। টি-টোয়েন্টিতে দেশের সেরা? করে দেখিয়েছে মনোজ তিওয়ারির বাংলা। কিন্তু বিজয় হাজারে ট্রফি জিতে দেশের সেরা ওয়ান ডে টিম হওয়া? হয়নি। গত পাঁচ বছরে চার বার ফাইনালে উঠেও হয়নি!
চল্লিশ ছুঁইছুঁই সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ’৯০-এর রঞ্জি জয় মনে করতে পারেন, কিন্তু স্মৃতি আঁকড়ে ‘কবে ঘি দিয়ে মেখে ভাত খেয়েছিলাম’-এর গল্পে কোনও আস্থা নেই। পরের বছর ঘরোয়া ক্রিকেট খেলবেন কি না জানেন না। কিন্তু এটা বোঝেন, যে কোনও টুর্নামেন্টের ফাইনাল এমন একটা প্রেক্ষাপট, যেখানে ট্রফি নিয়ে বাড়ি ফিরতে গেলে অধিনায়কের আলাদা একটা ভূমিকা থেকেই যায়। সে জন্যই রবিবারের দুপুরে কোটলায় সেই সৌরভকে দেখা যায়, যিনি নিছকই ট্রফি জিততে চান না। জিততে চান ঘরোয়া ক্রিকেটে মুম্বইয়ের ঐতিহ্যপূর্ণ শ্রেষ্ঠত্বে একটু কালির পোঁচ লাগিয়ে দেওয়ার যুদ্ধে। যিনি উইকেট দেখতে দেখতে কোটলার পরিচিত কিউরেটর রাধেশ্যামকে বলেন, “জল দিয়েছ তো? টস কে জিতবে, তার উপর যেন ফাইনালটা ঠিক না হয়!” |
ভারতীয় ক্রিকেটের ইতিহাসের কাটাছেঁড়া মানেই বাংলা-মুম্বই ম্যাচ বলতে মুম্বইয়ের জয়, এই অন্ধ গলি থেকে কোনও দিনই বেরোতে পারেনি বাংলা ক্রিকেট। পলি উমড়িগড়ের সময় যা ছিল, সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের জমানাতেও তাই। কখনও প্রতিবন্ধকতা বলতে রবি শাস্ত্রীর শেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ, কখনও সচিন তেন্ডুলকরের দুর্লঙ্ঘ্য প্রাচীর হয়ে দাঁড়ানো, কখনও বা জাহির খানের নজরকাড়া একটা স্পেল। বড় ম্যাচ মানেই মুম্বই জিতবে। এই বিশ্বাস থেকেই মুম্বই অধিনায়ক অজিত আগরকর বলতে পারেন, “জেতা হারা পরের প্রশ্ন। মুম্বই খেলবে মুম্বইয়ের মতো।”
উল্টো দিকে দুপুর থেকে সন্ধে, বাংলা শিবিরে কাটালে যে কোনও বঙ্গসন্তান কোথাও না কোথাও একটা আশার মোমবাতি খুঁজে পাবেন। যেখানে আগরকরের বক্তব্যের একটা পাল্টা বক্তব্য উঠে আসবে। যে বক্তব্যে থাকবে সারবত্তা, থাকবে হিসেব পাল্টে দেওয়া একটা আত্মবিশ্বাস। যে জন্য বাংলার প্রাক্তন অধিনায়ক লক্ষ্মীরতন শুক্ল বলবেন, “জিততে হলে ভাল খেলতে হয়। এ ছাড়া কোনও কথা বলার কোন মানেই হয় না।”
যে ভাল খেলবে, সে জিতবে। কী সহজ এক বিবৃতি। কিন্তু টস তো সুবিধে-অসুবিধে একটা তৈরি করেই দিচ্ছে। এটাও পরিষ্কার, বাংলাকে জিততে হলে ঋদ্ধিমান সাহার সঙ্গে সৌরভকেও খেলতে হবে। পারবেন?
পারলে ভাল। না পারলে? শঙ্খ ঘোষের থেকে ধার করে বলতে হবে, “সহজ কথা ঠিক ততটা সহজ নয়!” |