কাঠফাটা রোদ্দুরে রবিবার দুপুরে শ্রীবৎস, অনুষ্টুপ, সঞ্জীব সান্যালের মতো কয়েকজনকে সঙ্গী করে কোটলায় তিনি। তার পরে ড্রেসিংরুমে একা। কোটলায় কুম্বলের ইনিংসে দশ উইকেট নেওয়ার ছবিটা দেখে সামান্য থমকে দাঁড়ানো। বন্ধুর গাড়িতে যন্তরমন্তরের উল্টো দিকের টিম হোটেলে ফেরা। সঙ্গী শুধু আনন্দবাজার। বাংলার অধিনায়ক হিসেবে একটাও ট্রফি না জেতা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বিজয় হাজারে ট্রফি ফাইনালের আগের দিন একান্ত সাক্ষাৎকারে যা বললেন
|
প্রশ্ন: দীর্ঘ কেরিয়ারে বহু ফাইনাল খেলেছেন। গত কালই সেমিফাইনাল জিতে উঠেছেন, টিমের প্র্যাক্টিস করার কথাই নয়। অথচ আপনি চলে এলেন যে...
সৌরভ: এলাম। কেন, আপত্তি আছে?
প্র: তা নয়। কিন্তু যে লোকটা বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলেছে, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি ফাইনাল খেলেছে, দেশের সফলতম টেস্ট অধিনায়ক, সেই লোক হোটেলের এসি রুম ছেড়ে এই রোদ্দুরে কোটলায় পড়ে আছে দেখে মনে হবে না, এখনও ঘরোয়া ম্যাচে মোটিভেশনটা কোত্থেকে আসছে?
সৌরভ: বিশ্বকাপ ফাইনালের মোটিভেশন এক রকম, এটা আর এক রকম। কিন্তু দুটোই স্পোর্টসম্যানের মোটিভেশন। মাত্রাটা আলাদা। ফাইনাল ম্যাচ, আমি বাংলার ক্যাপ্টেন। নিশ্চয়ই ম্যাচটা জেতার জন্য একটা মোটিভেশন ভেতরে ভেতরে কাজ করছে। কোনও স্পোর্টসম্যানই হারতে চায় না।
প্র: সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেট খেলার পরে অবসর নেওয়া কেউ এ ভাবে ঘরোয়া ক্রিকেটে নিজের সবটা দেয়? না, মেপে মেপে দেয়?
সৌরভ: আমি অতীত নিয়ে বাঁচি না। পাস্ট ইজ পাস্ট। আমি বর্তমানে বাঁচি। এটা জানি, খেলতে নামলে সবটা দিই। কালকের ম্যাচটা জিততে চাই।
প্র: প্রতিপক্ষ মুম্বই বলে বাড়তি একটা তাগিদ কাজ করছে? আপনার সেরা সময়ে মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে দুটো রঞ্জি ফাইনাল খেলেও বাংলা জেতেনি কিন্তু...
সৌরভ: হয়তো। ওদের হারাতে পারলে ভাল লাগবে। ওদের বিরুদ্ধে একটা রঞ্জি ফাইনাল চুরানব্বইয়ে খেলেছিলাম, ক্যাপ্টেন রবি শাস্ত্রীর শেষ ফার্স্ট ক্লাস ম্যাচ ছিল। আমি ৪০ আর ৮৮ করেছিলাম। তবু হেরে যাই। এর পর ২০০৬ রঞ্জি ফাইনালে ৯০-এর মতো রান করেছিলাম ওদের বিরুদ্ধে। মনোজও দারুণ খেলেছিল। কিন্তু হারতে হয়েছিল। বিজয় হাজারে ফাইনাল এক বারই খেলেছি ২০১০-এ আমদাবাদে। তামিলানাড়ুর কাছে হেরেছিলাম। ওরা ৩৫০ তুলে দেওয়ার পরে আমরা ৩২০ করেছিলাম। আমি ৮৭। |
অধরা ট্রফির লক্ষ্যে ব্যাটের সঙ্গে অস্ত্র আত্মবিশ্বাস। বিজয় হাজারে ট্রফি
ফাইনালের আগের দিন কোটলায় সৌরভ। ছবি: রমাকান্ত কুশওয়া |
প্র: কোথাও একটা আক্ষেপ ধরা পড়ছে না? এত বর্ণময় একটা কেরিয়ারে বাংলার ক্যাপ্টেন হয়ে একটাও সর্বভারতীয় ট্রফি নেই?
সৌরভ: বাংলার হয়ে টানা একটা সিজন ক্যাপ্টেন্সি করলাম কোথায়? সে ভাবে সুযোগই হয়নি। এ বারও অনুরোধ ফেলতে না পেরে অধিনায়ক হতে হয়েছে। আবার সামনে মুম্বই। ওদের টিমটা ভাল। অজিত আগরকর ক্যাপ্টেন, জাফর, আজিঙ্ক রাহানে আছে। মুম্বই বরাবর ভাল টিম। কিন্তু আমরাও বেশ ভাল খেলে ফাইনালে এসেছি। আর আমাদের পক্ষে একটা ভাল দিক হল ফাইনালটা পালামে হচ্ছে না।
প্র: তা হলে আপনি স্বস্তিতে?
সৌরভ: নিশ্চয়ই। পালামের উইকেট একেবারেই ওয়ান ডে ট্র্যাক নয়। বল পড়ে লাফাচ্ছে, নিচু হচ্ছে। কোটলার উইকেট অনেক ভাল। যা দেখলাম, বল ব্যাটে আসবে। রান উঠবে। ভাল একটা ওয়ান ডে হবে।
প্র: কোটলায় দেখছি, বড় কর্তা থেকে রাধেশ্যাম মালি, সবাই আপনি বলতে অজ্ঞান। ব্যাখ্যা করবেন?
সৌরভ: কোটলা আমার খুব পয়া মাঠ। কী ক্যাপ্টেন, কী প্লেয়ার, কখনও এখানে কোনও ম্যাচ হারিনি। এখানে আমার টেস্ট সেঞ্চুরি আছে। আশা করি, এ বারও হারব না। |