সম্পাদকীয় ২...
দুয়োরানি
ক্রীড়ার ভিতর জাতবিচার বিস্তর। কোনওটি জনমনোরঞ্জনকারী, ফলে বাণিজ্যলক্ষ্মীর প্রসাদধন্য। পরিণামে, ‘গ্ল্যামার’ নামক দ্যুতি তাহার সর্বাঙ্গ হইতে বিচ্ছুরিত হয়। কোনওটি আড়ালেই থাকে, দুয়োরানির ন্যায়। হাজার সাফল্যেও তাহার প্রতি কৃপাদৃষ্টি বর্ষিত হয় না। সম্প্রতি, হোলি উৎসবের মাত্র কয়েক দিন পূর্বে ভারতীয় মহিলা কবাডি দল প্রথম কবাডি বিশ্বকাপটি জিতিলেন। এই খবর অবিলম্বে হোলির রং ও গুলালের সহিত ধুইয়া গিয়াছে। ইহাই প্রান্তিকতার সংকট। যে খেলাটি লইয়া ‘খবর’, তাহা প্রান্তিক। যাঁহারা জিতিয়াছেন, তাঁহারা মহিলা, সুতরাং প্রান্তিক। এই যৌথ প্রান্তিকতা আসিয়া এমনকী বিশ্বজয়ের সাফল্যকেও কার্যত বিবর্ণ করিয়া রাখে। অন্য দিকে, ভারতীয় (পুরুষ) ক্রিকেট দলের নজিরবিহীন ব্যর্থতাও নিয়মিত সংবাদ শিরোনাম হয়। যে দল বৎসরখানেক পূর্বে বিশ্বজয়ের গরিমা, এবং সঙ্গে প্রভূত অর্থ ও প্রতিপত্তি লাভ করিয়াছিল, উপর্যুপরি বিদেশ সফরে তাহাদের অবিরাম পরাজয় বিসদৃশ হইলেও কিছু যায় আসে না। দেশে ফিরিয়া একটি খেলায় জয়লাভ করামাত্র জনতা ফের জয়ধ্বনি তুলিবে, গণমাধ্যমে প্রতি ঘণ্টায় দৃশ্যমান হইবে তাঁহাদের মুখ, তাঁহাদের গুণকীর্তন ফের গগন বিদীর্ণ করিবে! তাহার প্রতিফলিত রশ্মি বাজারেও পড়িবে। সুতরাং, বাজারের নিয়মে, অর্থ বিনিয়োগ করিতে হইলে এই ক্ষেত্রেই করা ভাল। প্রান্তিকের কথা ভাবিয়া লাভ নাই।
কেহ কেহ অবশ্য প্রান্তিকের কথা ভাবেন। পরিস্থিতিসাপেক্ষে কিছু ভাবনার জন্ম হয়। তাহাতে সংকট বাড়ে বই কমে না। মহারাষ্ট্রের তিন জন খেলোয়াড় বিশ্বকাপজয়ী মহিলা কবাডি দলের সদস্য। তাঁহাদের জন্য এক কোটি টাকা করিয়া পুরস্কার ঘোষণা করিয়াছে মহারাষ্ট্র সরকার। সাধু উদ্যোগ, সন্দেহ নাই। পরে জানা গিয়াছে, ইহা কার্যত দায়ে পড়িয়া ঘোষণা। মুখ্যমন্ত্রীকে না-বলিয়াই উপমুখ্যমন্ত্রী মহোদয় তিনি কবাডি সংস্থার কর্তাব্যক্তিও বটে এই অর্থ দাবি করিয়া বসিয়াছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী, পরিস্থিতির চাপে, ‘না’ বলিতে পারেন নাই। প্রশ্ন হইল, কোনও খেলার জন্য অর্থের বন্যা বহিবে, কোনও খেলার বিশ্বজয়ীদের কার্যত খিড়কি দুয়ার দিয়া পুরস্কার প্রদান করিতে হইবে, ইহা কি কোনও ভাবেই দেশের ক্রীড়ানীতির ভাল বিজ্ঞাপন? তাহাতে অবশ্য ক্রীড়া-বাণিজ্যের কিছু যায় আসে না। কারণ, সরকারি ক্রীড়া পরিকাঠামো বলিয়া যাহা আছে, তাহা না-থাকিবারই শামিল। ব্যক্তিগত উদ্যমে, বা বেসরকারি পরিকাঠামোর ভিত্তিতে কেহ যদি কিছু সাফল্য লাভ করেন, তৎক্ষণাৎ সেই আলোটি ধার করিবার জন্য নেতা ও মন্ত্রীগণ আসরে নামিয়া পড়েন। পুরস্কার ঘোষিত হয়। কোথাও নামমাত্র, কোথাও অঢেল। এই গোলমালের ভিতর কেহই খেয়াল করেন না যে, নিছক পুরস্কারের উপর ভিত্তি করিয়া কখনওই কোনও সুসমন্বিত ক্রীড়ানীতি গড়িয়া উঠিতে পারে না। সর্বাগ্রে প্রয়োজন পরিকাঠামো, ভারতে যাহার অভাব নিদারুণ। সরকার বা জনতার সেই দিকে নজর দিবার সময় কোথায়? প্রান্তিকের দীর্ঘশ্বাস বাতাসেই মিশিয়া যাক, ক্ষতি নাই।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.