উত্তর-পূর্বাঞ্চলের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়ে মাওবাদীরা অসম-সহ এ অঞ্চলের নানা স্থানেই প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, এমন খবর আগেই দিয়েছেন গোয়েন্দারা। এ বার শিলচরের আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওবাদীরা ঘাঁটি গড়ার প্রয়াস চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠল। অসমের রাজ্যপাল জানকীবল্লভ পট্টনায়কের কাছে রীতিমতো নথিপত্র জমা দিয়ে এই অভিযোগের কথা জানালেন অল কাছাড়-করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দি স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের (আকসা) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি প্রদীপ দত্তরায়।
বরাকের বুকে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ে মাওবাদীদের পা ফেলবার সুযোগ করে দিচ্ছেন কেউ কেউ, এমন অভিযোগ আগেও উঠেছিল। তখন মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয় থেকে কাছাড়ের জেলাশাসককে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষকের কাজকর্ম তদন্ত করে দেখতে বলা হয়। পরে আর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনুরূপ অভিযোগ আনে অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। ওই শিক্ষকের নামে অন্ধ্রপ্রদেশের আদালতে এখনও চারটি মামলা ঝুলছে বলে জানায় বিদ্যার্থী পরিষদ। গত ফেব্রুয়ারির গোড়ায় কলকাতার ময়দান এলাকায় ৩০টি কার্তুজ-সহ যে যুবক ধরা পড়ে, তারও বাড়ি কাছাড় জেলার উধারবন্দে। ধৃত বীরেন সিংহের সঙ্গে মাওবাদীদের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে, প্রাথমিক তদন্তের পর এমনটাই দাবি কলকাতা পুলিশের। |
এ বার রাজ্যপালের কাছে আরও গুরুতর অভিযোগ আনলেন ‘আকসা’র নেতা প্রদীপ বাবু। তিনি বিভিন্ন নথিপত্র তুলে ধরে তাঁর দাবি, এখানে বিশেষ উদ্দেশ্যে মাওবাদী তৎপরতা চালানো হচ্ছে। বিদেশি মদতপুষ্ট একটি গোষ্ঠী চাইছে বরাক উপত্যকাকে অসম থেকে বিচ্ছিন্ন করে দিতে। প্রদীপবাবু রাজ্যপাল জানকীবল্লভ পট্টনায়ককে এখানকার ভৌগোলিক অবস্থান ব্যাখ্যা করে জানান, বরাক উপত্যকার চারদিকে মণিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা ও মেঘালয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের সঙ্গে এর নিজের যেমন সীমান্ত রয়েছে, তেমনই আছে মিজোরাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয়েরও। মায়ানমারের সঙ্গে আছে মণিপুর ও মিজোরামের সীমান্ত। আর ওই মায়ানমার থেকেই আলফা সেনাধ্যক্ষ পরেশ বরুয়া উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অশান্ত করার ছক কষছেন। পরেশ বরুয়া কিছুদিন আগে নিজেই বলেছেন, মাওবাদীদের কৌশলগত কারণে ব্যবহার করছেন তিনি ।
রাজ্যপালকে প্রদীপবাবু আরও জানান, আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢিলেঢালা মনোভাবের সুযোগে জনাতিনেক মাওবাদী মনোভাবাপন্ন শিক্ষক ছাত্রছাত্রীদের প্রভাবিত করে চলেছেন। তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রয়েছে জঙ্গলমহল থেকে পালিয়ে আসা ক্যাডারদের। কিষেণজির মৃত্যুর পর তাঁরা শ্রমিক সেজে বরাক উপত্যকার কুড়িটি বাগানে আত্মগোপন করে রয়েছেন।
তবে প্রদীপবাবুর অভিযোগকে তেমন আমল দিতে চাননি কাছাড়ের পুলিশ সুপার দিগন্ত বরা। তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে কারও কারও মাওবাদে বিশ্বাস থাকতেই পারে। কিন্তু মাওবাদী কার্যকলাপ বলতে যা বোঝানো হয়, তেমন কিছু এখানে হচ্ছে না। শুধু শিলচরের এই কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় নয়, বরাকের কোথাও এই ধরনের তৎপরতা নেই।
আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক নিরঞ্জন রায়ও বলেন, মাওবাদীরা ঘাঁটি গাড়তে তৎপর, এমন খবর তাঁর জানা নেই। তবে এটি পুরোপুরি পুলিশের দেখার বিষয়। পুলিশ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে কিছু জানায়নি। |