এক দিকে জাতীয় রাজনীতিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্রমবর্ধমান গুরুত্বকে লঘু করে দেখানোর চেষ্টা, অন্য দিকে নিজেদের শক্তি ও গুরুত্বের প্রচার। তৃণমূল কংগ্রেসের তুলনায় জাতীয় রাজনীতিতে ‘দুর্বল’ হয়ে পড়া সিপিএম নিজেদের অস্তিত্ব প্রমাণে এখন এই কৌশলই নিচ্ছে।
নয়াদিল্লিতে পলিটব্যুরো বৈঠকের ফাঁকে আজ সারা দিন সে পথেই হাঁটলেন প্রকাশ কারাট, সীতারাম ইয়েচুরি, বিমান বসুরা। পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে মমতাকে বিশেষ ভাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে বিমান বসু একে বাড়তি গুরুত্ব দিতে নারাজ। মমতাকে কেন্দ্র করে যে নতুন তৃতীয় ফ্রন্টের জল্পনা শুরু হয়েছে, তা নিয়ে এখনও মন্তব্য করার সময় আসেনি বলে দাবি করছেন পলিটব্যুরো নেতারা। কারাটের পাল্টা যুক্তি, অ-ইউপিএ, অ-এনডিএ জোটকে শক্তিশালী করার চেষ্টা তাঁরাও করছেন। ইয়েচুরির বক্তব্য, লোকসভায় চার বামদলের সাংসদ-সংখ্যা এখনও তৃণমূল বা সমাজবাদী পার্টির থেকে বেশি। কাজেই অন্তত সংসদের কক্ষে ইউপিএ বা এনডিএ-র বাইরে কোনও বিকল্প জোট তাঁদের বাদ দিয়ে সম্ভব নয়। একই সঙ্গে নিজেদের সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা ভেবে এই মুহূর্তে অন্তর্বর্তী লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাবনাও ধামাচাপা দিতে চাইছেন সিপিএম নেতৃত্ব।
মমতার সঙ্গে ‘ছায়াযুদ্ধ’ চালালেও জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে আজ তাঁর আপত্তিকেই সমর্থন জানিয়েছে পলিটব্যুরো। আবার মমতার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টায় রেল সুরক্ষা বাহিনী আইনের সংশোধনী নিয়েও আপত্তি তুলেছে তারা। দলের যুক্তি, রেল মন্ত্রকের ওই প্রস্তাবিত সংশোধনী সংবিধান-বিরোধী। |
রাজ্যের অধিকারে কেন্দ্রের হস্তক্ষেপ নিয়ে নয়াদিল্লির বিরুদ্ধে প্রায় সব রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদেরই এক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন মমতা। নরেন্দ্র মোদীর মতো বিজেপি মুখ্যমন্ত্রীও একে সমর্থন জানিয়েছেন। রাজনৈতিক শিবির মনে করছে, আপাতত এই জোট যতটা না রাজনৈতিক দলগুলির, তার থেকে অনেক বেশি রাজ্য সরকারগুলির। এই পরিস্থিতিতে তাই স্বাভাবিক ভাবেই সিপিএমের মধ্যে মানিক সরকারের গুরুত্ব বাড়ছে। কারণ তিনিই একমাত্র বাম-শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।
গত কাল ও আজ পলিটব্যুরোতে রাজনৈতিক-সাংগঠনিক রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। সেখানে বারবারই উঠেছে জাতীয় রাজনীতির প্রসঙ্গ। সিপিএম মনে করছে, উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস ও বিজেপি একই সঙ্গে ভাল ফল করতে না পারায় নতুন করে তৃতীয় ফ্রন্ট নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। অন্তর্বর্তী নির্বাচনের প্রশ্নও উঠে গিয়েছে। তবে ইয়েচুরি বলেন, “ইউপিএ-সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়নি। কারণ সমাজবাদী পার্টি এখনও সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করছে।” সিপিএম মনে করছে, মমতা ইউপিএ-র মধ্যে থেকেও কেন্দ্র-বিরোধী অবস্থান নেওয়ায় সপা বা এনডিএ-র থেকে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছেন। কিন্তু তাঁরা ইউপিএ ও এনডিএ-র বাইরের দলগুলির জোটের শক্তিবৃদ্ধির চেষ্টা করছেন বলে মনে করিয়ে দিয়েছেন কারাট। তবে জাতীয় রাজনীতিতে তাঁরা যে আপাতত মমতার তুলনায় পিছিয়ে, তা সিপিএমের নেতারা মানছেন। মমতাকে রাজ্যের গণ্ডিতে বেঁধে রাখতে তাই তাঁর পশ্চিমবঙ্গে মন দেওয়ার প্রয়োজনের কথাও স্মরণ করে দিতে চাইছে সিপিএম। বিমান বসুর পরামর্শ, “রাজ্য সরকার পরিচালনা করার জন্য যে পরিমাণ মনোনিবেশ করা উচিত, তা উনি করুন।” একই সঙ্গে বিমানবাবুর ‘প্রস্তাব’, মমতার রাজত্বে রাজ্যের উন্নয়ন হলে তাঁরা প্রশংসা করতেও তৈরি! |