গাড়ি বিস্ফোরণের ঘটনায় ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য চাপ বাড়াতে চায় ইজরায়েল। মাসখানেক আগে ইজরায়েলের কূটনীতিকের গাড়িতে ওই বিস্ফোরণ-কাণ্ডে ভারতের বন্ধু দেশ ইরান জড়িত বলে ইজরায়েলের অভিযোগ। কিন্তু ভারত এই বিষয়ে ইরানের দিকে আঙুল তো তোলেইনি। বরং বলে দিয়েছে কোনও দেশের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার মতো প্রমাণ এখনও তাদের হাতে নেই। ফলে ভারতের উপরে প্রবল চাপ তৈরি করছে ইজরায়েল।
আগামিকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমের সঙ্গে ইজরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ইয়াকভ আমিদ্রর বৈঠকে বসছেন। ইজরায়েলি কূটনীতিকের গাড়ি বিস্ফোরণ সম্পর্কে ভারত সরকারের গোয়েন্দা বিভাগ কী কী তথ্য পেয়েছে বা কী কী পদক্ষেপ করেছে, বৈঠকে তা জানতে চাইবেন আমিদ্রর। ওই বিস্ফোরণের সূত্রে সম্প্রতি যে দু’জনকে দিল্লি থেকে ধরা হয়েছে, তাদের ব্যাপারেও জানতে চাইবে ইজরায়েল। দিল্লি পুলিশ ওই দু’জনকে গ্রেফতার করলেও তাতে ইজরায়েল যথেষ্ট সন্তুষ্ট নয়। তারা মনে করছে, ভারত এখনও যথেষ্ট ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এবং ইজরায়েলের দাবি, ইরান নিয়ে ভারত প্রকাশ্যে বিবৃতি দিক।
চিদম্বরমের সঙ্গে বৈঠকের পাশাপাশি ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা শিবশঙ্কর মেননের সঙ্গেও কথা বলবেন ইজরায়েলি উপদেষ্টা। মূলত মেননের আমন্ত্রণেই আমিদ্রর ভারতে আসছেন। মাস দেড়েক আগেই এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিস্ফোরণে তা পিছিয়ে যায়। নতুন পরিস্থিতিতে এই বৈঠক নতুন মাত্রা পেতে চলেছে। |
তবে ইজরায়েল এবং আমেরিকা ইরানের বিরুদ্ধে যতই সুর চড়াক, ভারত কিন্তু এখনই ইরান-বিরোধিতার পথে হাঁটতে নারাজ। সম্প্রতি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আমেরিকা সফরে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্কিন গোয়েন্দা বাহিনীও সেই সময় ইজরায়েলকে কিছু তথ্য দিয়েছিল যাতে ইরানের দিকে অভিযোগের ইঙ্গিত রয়েছে। ওবামা এবং নেতানিয়াহুর বৈঠকের পরিপ্রেক্ষিতে আমেরিকাও যে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে চাপ দিচ্ছে, তা আমিদ্রর আগামিকালের বৈঠকে বোঝানোর চেষ্টা করবেন। আমেরিকাও যে এই বিষয়ে ইরানের বিরুদ্ধে কড়া ব্যবস্থারই পক্ষপাতী, সেই যুক্তি দেখিয়ে ইজরায়েল চাইবে ইরানের সঙ্গে সংঘাতের কূটনীতিতে ভারতকে সামিল করতে। তবে ভারত এখনই ইজরায়েলের উপদেশ মেনে এগোতে চাইবে না। যে কারণে চিদম্বরম এই বৈঠকের আগে ইরান প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং বিদেশমন্ত্রী এস এম কৃষ্ণর সঙ্গে বিস্তারিত আলোচনা করে বৈঠকে কী অবস্থান নেওয়া হবে, তা ঠিক করে ফেলেছেন।
ইউপিএ সরকার তার প্রথম পর্বে ইরানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল ঠিকই। কারণ তখন আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা (আইইএই) ইরানের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিল। আমেরিকার সঙ্গে সদ্য পরমাণু চুক্তি করেছে ভারত। কিন্তু ইউপিএ সরকার তার দ্বিতীয় পর্যায়ে দেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি এবং বৈদেশিক নীতির স্বার্থেই ইরানকে চটাতে চাইছে না।
কারণ লোকসভা ভোটের আর মাত্র দু’বছর বাকি। তাই সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কের কথা মাথায় রাখতে হচ্ছে সরকারকে। ইরানকে শত্রু করলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে তার প্রভাব পড়বে। ইরানের তেলের উপরে ভারত অনেকটাই নির্ভরশীল। এ ছাড়া, আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সেনা সরে যাওয়ার পরে সেখানে কী অবস্থা হবে, সেই বিষয়টিও ভাবাচ্ছে ভারতকে। নয়াদিল্লির আশঙ্কা, সেনা সরে গেলে আফগানিস্তানের তালিবানিকরণ হতে পারে এবং তা ভারতের পক্ষে বড় বিপদের কারণ। এ ছাড়া, আফগানিস্তানে পাকিস্তানের প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা ভারতকে বরাবরই চিন্তায় রেখেছে। সে জন্য এই ক্ষেত্রে পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ইরানকে পাশে রাখতে চায় ভারত। আমেরিকা বা ইজরালেয়ের কথা না শুনে ইরান থেকে আফগানিস্তান পর্যন্ত সরাসরি সড়কপথ নির্মাণ করছে ভারত। তা এই দু’দেশই ভাল চোখে না দেখলেও দিল্লি আপাতত তাদের অবস্থান পরিবর্তন করার পক্ষপাতী নয়। |