শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছিল যেখানে, ঠিক সেখান থেকেই শুরু হতে চলেছে আগামিকালের বাজেট অধিবেশন।
গত বছরের ২৯ ডিসেম্বর মধ্যরাতে লোকপাল বিল নিয়ে তুমুল বিতর্কের মধ্যে শীতকালীন অধিবেশন শেষ হয়েছিল। সে বারও যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর প্রশ্নে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তীব্র আপত্তিতে লোকপাল বিল পাশ করাতে পারেনি মনমোহন সরকার। এ বারও বাজেট অধিবেশনের শুরুতে সেই যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়েই সরব ইউপিএ-র প্রধান শরিক তৃণমূল। এমনিতেই মণিপুর বাদে, উত্তরপ্রদেশ-সহ বাকি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের খারাপ ফল যথেষ্ট চাপে ফেলেছে কংগ্রেস নেতৃত্বকে। তার সঙ্গে প্রধান শরিক দল ও প্রধান বিরোধী দল একই মেরুতে চলে যাওয়ায় বাজেট অধিবেশনের শুরুতেই যথেষ্ট চাপের মধ্যে রয়েছে মনমোহন সরকার। কারণ, আর্থিক ও রেল বাজেট ছাড়াও বহু গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করাতে হবে সরকারকে।
যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামো নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারগুলির বিরোধকে সংসদে নিয়ে এসে রাজনৈতিক ফায়দা তুলতে চাইছে বিজেপি। গত অধিবেশনেও লোকপাল বিল নিয়ে মমতার পিছনে অন্যান্য দলের সমর্থন সরকারের মাথাব্যথা বাড়িয়েছিল। এ বার মমতা প্রশ্ন তুলেছেন জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র নিয়ে। এই ক্ষেত্রেও প্রায় সমস্ত আঞ্চলিক দল মমতার পিছনে। এবং বিজেপিও। আজ বিজেপি এবং এনডিএ-র নেতারা আলাদা আলাদা ভাবে বৈঠকের পর জানিয়ে দিয়েছেন, কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্ক নিয়েই তাঁরা ইউপিএ সরকারকে কোণঠাসা করতে চান। জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র (এনসিটিসি) এবং জাতীয় তদন্ত সংস্থা (এনআইএ)-র কাজকর্ম নিয়ে সংসদে আলোচনাও চাইবেন তাঁরা। লোকপাল বিলের প্রসঙ্গটিও তাঁরা ছাড়বেন না বলে বিজেপি নেতৃত্ব জানিয়ে দিয়েছেন। বিজেপি মনে করছে, কংগ্রেস লোকপাল নিয়েও তৃণমূলের সঙ্গে কোনও সমঝোতায় পৌঁছতে পারেনি। ফলে এ নিয়ে প্রশ্ন তুলে মনমোহন সরকারকে অস্বস্তিতে ফেলার সুযোগ ছাড়বে না বিজেপি। |
মনমোহন সরকারের পক্ষে একমাত্র স্বস্তির কারণ হল এ বারের অধিবেশনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরমকে বয়কট না করারই সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপি তথা এনডিএ।
টুজি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারিতে জড়িত থাকার অভিযোগে গত অধিবেশনে চিদম্বরমকে বয়কট করেছিল বিজেপি। আজ বিজেপি নেতা সুরিন্দর সিংহ অহলুওয়ালিয়া বলেন, “চিদম্বরমকে আর বয়কট করা হবে না
কারণ, আমরা এনসিটিসি ও এনআইএ-র কাজকর্ম নিয়ে আলোচনা চাইছি। সেখানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীই জবাবি বক্তৃতা দেবেন।”
আগামিকাল স্বরাষ্ট্রসচিব রাজ কুমার এনসিটিসি নিয়ে রাজ্যের শীর্ষ আমলা ও পুলিশকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন। সেখানে এনসিটিসি নিয়ে কেন্দ্রের অবস্থান ব্যাখ্যা করা হবে। রাজ্যগুলির বক্তব্যও শোনা হবে। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকই মনে করছে, এই বৈঠক থেকে কোনও সমাধানসূত্র বেরিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ। কেন্দ্রীয় সরকার মনে করছে, রাজনৈতিক স্তরে, মুখ্যমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেই এর সমাধান করতে হবে। তার আগে বাজেট অধিবেশনের সংসদে এ বিষয়ে আলোচনা হয় কি না, কিংবা সেখানে কোন দল কতটা কড়া অবস্থান নিচ্ছে, তা বুঝে নিতে চাইছে কেন্দ্র।
ইউপিএ সরকারের আর এক চিন্তার কারণ হল, উত্তরপ্রদেশ ও অন্যান্য রাজ্যে কংগ্রেস ও বিজেপি একই ভাবে খারাপ ফল করায় মমতাকে কেন্দ্র করে তৃতীয় ফ্রন্টের ভাবনাচিন্তা তো বটেই, অন্তর্বর্তী লোকসভা নির্বাচনের সম্ভাবনাও ভেসে উঠেছে। নিজেদের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে কংগ্রেস, বিএসপি, ডিএমকে, সিপিএম-সহ চার বাম দল বা আরজেডি অন্তর্বর্তী নির্বাচন চায় না। কিন্তু মমতা, মুলায়ম সিংহ যাদব, নীতীশ কুমার, নবীন পট্টনায়েক, জয়ললিতা বা অকালি দলের নেতারা এতে খুব বেশি আপত্তি জানাবেন না। কারণ, প্রত্যেকেই নিজের রাজ্যে জনসমর্থনের দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থায় রয়েছেন। কাজেই এই মুহূর্তে লোকসভা নির্বাচন হলে প্রত্যেকেই সংসদে নিজেদের আসন বাড়াতে পারবেন বলেই মনে করছেন।
প্রধান বিরোধী দল বিজেপি এখনও নির্বাচনের জন্য তৈরি নয়। তবে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া কাজে লাগতে চাইছে তাঁরাও। বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি বলেন, “বিধানসভা নির্বাচনের ফল থেকেই স্পষ্ট ইউপিএ সরকার জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। আর্থিক পরিস্থিতিও সামাল দিতে পারছে না এই সরকার। বিনিয়োগের পরিবেশ খুবই খারাপ। মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সরকার ব্যর্থ। তাই শিল্পপতি থেকে শ্রমিক, সকলেই উদ্বিগ্ন। এ সব সত্ত্বেও ইউপিএ সরকারের ঔদ্ধত্য আমজনতা ও রাজ্যগুলির ক্ষোভ উসকে দিয়েছে।” কিন্তু তৃতীয় ফ্রন্টের সম্ভাবনা উদয় হওয়ায় এনডিএ শরিকদের ধরে রাখা নিয়েও চিন্তায় রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। নীতীশ কুমার বা প্রকাশ সিংহ বাদলের সঙ্গে মমতার ঘনিষ্ঠতা বিজেপিকে ভাবাচ্ছে।
আজ তাই সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর জনতা পার্টিকে এনডিএ-র শরিক করে নেওয়া হয়েছে। বিজেপি, জেডি (ইউ), শিবসেনা, অকালি দল ছাড়াও এর আগে রামদাস আঠওয়ালের আরপিআই-কে এনডিএ-তে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। |