আবাসিকদের মতে, আগে চালু হোক বাস পরিষেবা। তবেই আবাসনগুলিতে আরও বেশি করে বাসিন্দারা আসতে শুরু করবেন। অন্য দিকে হিডকোর মতে, আগে আসুন আবাসিকেরা। তাঁদের সংখ্যা বাড়লেই বাস পরিষেবা চালু হয়ে যাবে।
এই দুইয়ের টানাপোড়েনে নিউ টাউনে বাস পরিষেবা কার্যত তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। সেখানকার বিভিন্ন আবাসনে যাঁরা ইতিমধ্যেই থাকতে শুরু করেছেন, তাঁদের অন্তত এমনই অভিযোগ। আবাসিকদের আরও অভিযোগ, তাঁরা ফ্ল্যাট কিনেও ঢুকতে পারছেন না মূলত পরিবহণ সমস্যার জন্য। এই নিয়ে হিডকোকে বারবার জানিয়েও কোনও ফল হয়নি। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, “নিউ টাউনে বাস পরিষেবা আরও ভাল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পরিবহণ দফতরের সঙ্গে আমরা শীঘ্রই বৈঠকে বসছি। বর্তমানে নিউ টাউনে হিডকোর ১০টি বাস এজেন্সির মাধ্যমে চলছে। সেই সংখ্যাও বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।’’ সেই সঙ্গেই তাঁর বক্তব্য, “আবাসিকের সংখ্যা কম বলেই বাসগুলির রুট লাভজনক হয় না। তাই বাস চালানোর কিছু সমস্যা আছে। আরও লোক এলে বাসের সংখ্যা বেড়ে যাবে।’’
তবে, বাসের সংখ্যা না বাড়লে যে আবাসনগুলিতে বাসিন্দাদের সংখ্যা বাড়বে না, তা অনেকটাই স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দিয়েছেন নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া থ্রি-এর পাথরঘাটা এলাকার একটি আবাসনের বাসিন্দারা। গত বছর ওই আবাসনটি উদ্বোধন করেছিলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু নিম্ন-মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের জন্য তৈরি ওই আবাসনের অধিকাংশ ফ্ল্যাটেই এখনও তালা ঝুলছে। যাঁরা থাকতে শুরু করেছেন, তাঁদের বক্তব্য, ওই আবাসনে নিম্ন-মধ্যবিত্তদের জন্য ফ্ল্যাট রয়েছে তিন হাজার। তার মধ্যে আবাসিক রয়েছেন ৬০-৭০ জন। মধ্যবিত্তদের জন্য তৈরি ফ্ল্যাটগুলিতে লোকসংখ্যা আরও কম। ঝাঁ চকচকে ওই আবাসনে লোক আসেননি কেন? আবাসনেরই এক বাসিন্দা বলদেবরাজ আনন্দ বলেন, ‘‘আমাদের এই এলাকা থেকে কোনও বাস ছাড়ে না। বাস ধরতে অটো ভাড়া করে যেতে হয় তিন কিলোমিটার দূরে পাথরঘাটা বাজারের কাছে। রাতে মেলে না অটো। নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাসিন্দাদের সকলের গাড়ি নেই। কী ভাবে যাতায়াত করব? আমরা বহু বার হিডকোর কাছে বাস পরিষেবা চালু করার দাবি জানিয়েছি। চেয়ারম্যানকে চিঠি দিয়েছি। চিঠি দেওয়া হয়েছে পরিবহণ দফতরেও। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’ ওই আবাসনেরই আর এক বাসিন্দা দীপান্বিতা ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমার দুই ছেলের স্কুল সল্টলেকে। কিন্তু বাস বা অন্য কোনও পরিবহণ না থাকায় স্কুল শুরুর দু’ঘণ্টা আগে বেরোতে হয়। ফিরতেও লাগে প্রায় আড়াই ঘণ্টা।’’
নিউ টাউন অ্যাকশন এরিয়া দুই-এর একটি আবাসনের অবস্থাও অনেকটা পাথরঘাটার ওই আবাসনের মতোই। সেখানকার বাসিন্দা রতন সরকারের বক্তব্য, ‘‘বাজার করতে যাতায়াতেই আমাদের ৫০ টাকা খরচ হয়। কখনও অটো, মাঝেমধ্যে ম্যাটাডর ভাড়া করে বাজার করতে যেতে হয়।’’ বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিউ টাউনের মূল রাস্তা ঝকঝকে হলেও ভিতরের রাস্তাগুলির হাল খুব খারাপ। ফলে অটো বা ছোট গাড়ি করে বাজার করতে গেলেও কার্যত প্রাণ হাতে করে যেতে হয়।’’ যদিও, বাস পরিষেবা চালু হওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস বাণী শুনিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রী মদন মিত্র। তিনি বলেন, ‘‘নিউ টাউন একটা বড় জায়গা। অনেকগুলি এলাকায় বিভক্ত। রাজ্য সরকার পুরো নিউ টাউন জুড়েই সরকারি বাস চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছে। আগামী ছ’মাসের মধ্যে প্রচুর সরকারি বাস নিউ টাউনের প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও যাতায়াত শুরু করবে।’’ |