ভার যাচ্ছে বেসরকারি হাতে
টোল-যাত্রার পথে হাঁটছে রাজ্যের প্রায় সব সড়কই
পূর্ত দফতরের হাতে আর কোনও রাজ্য সড়কের দায়িত্ব থাকছে না। সে ক্ষমতা পাচ্ছে সদ্যগঠিত ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল হাইওয়ে ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন।’ এবং প্রাথমিক ভাবে সিদ্ধান্ত হয়েছে, কর্পোরেশনও ওই সব রাস্তার ভার নিজের হাতে রাখবে না। ‘বিল্ড, অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (টোল)’ ভিত্তিতে সেগুলো তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি সংস্থার হাতে। অর্থাৎ, অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যের প্রায় সব রাস্তায় পথ-কর দিয়েই যাতায়াত করতে হবে।
রাজ্য পূর্ত দফতরের এক কর্তা বলেন, বিভিন্ন রাজ্যে মূলত দু’টি পদ্ধতিতে রাস্তা তৈরি ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হচ্ছে। একটা হল ‘বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (টোল)।’ অর্থাৎ যারা রাস্তা বানাবে, তারাই তার রক্ষণাবেক্ষণ করবে ও টোল তুলবে। অন্যটা ‘বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (অ্যানুইটি)।’ এতে রাস্তা নির্মাণ ও দেখভালের দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট সংস্থার হাতে থাকলেও টোল তুলবে সরকার, বিনিময়ে একটা নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা প্রতি মাসে তারা সংস্থাটিকে দেবে। ওই পূর্ত-কর্তার বক্তব্য, রাস্তা নির্মাণে বিশেষজ্ঞ বেসরকারি সংস্থাগুলির অধিকাংশ প্রথম পদ্ধতিতেই কাজ করতে বেশি আগ্রহী। কারণ, টোলের টাকা তারা নিজেরা তুলতে চায়।
অন্য দিকে সরকারও আর টোল তোলার দায়িত্ব নিজের হাতে রাখতে চায় না বলে জানিয়েছেন পূর্ত দফতরের একাধিক ইঞ্জিনিয়ার। একই কথা বলেছেন জাতীয় সড়ক কতৃর্র্পক্ষ (এনএইচএআই)-এর অফিসারেরাও। মুম্বই রোডের উপরে ধুলাগড় ও ডেবরার প্রসঙ্গ টেনে এনএইচএআইয়ের এক কর্তা বলেন, “স্থানীয় তৃণমূলকর্মীদের একাংশের বাধায় দু’মাস যাবৎ ওই দু’টি টোল প্লাজায় টোল আদায় বন্ধ। তাই স্থির হয়েছে, রাজ্যের যে ছ’টি টোল প্লাজায় এনএইচএআই টাকা আদায় করে, টেন্ডার ডেকে সেগুলোর ভার বেসরকারি সংস্থাকে দেওয়া হবে।”
পরিস্থিতি বিবেচনা করে রাজ্য সরকারও তাই ‘বিল্ড অপারেট অ্যান্ড ট্রান্সফার (টোল)’ পদ্ধতিকেই অগ্রাধিকার দিতে চাইছে। অর্থ দফতর-সূত্রের খবর: কর্পোরেশন গঠন ও তার প্রাথমিক খরচ মেটাতে ৫০ কোটি টাকা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। রাজ্য সড়ক নির্মাণকারী যে সংস্থা টোল আদায়ের দায়িত্ব পাবে, তাকে কাজে নামার আগে ‘প্রিমিয়াম’ হিসেবে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ কর্পোরেশনের কাছে জমা দিতে হবে। রাস্তা তৈরি ও দেখভালের পিছনে সংস্থাটি কত খরচ করবে এবং বছরে টোল কত আদায় হবে, তার উপরে নির্ভর করবে প্রিমিয়ামের অঙ্ক। অন্য্যন্য রাজ্যে এই ‘নিয়ম’ই চালু রয়েছে বলে পূর্ত দফতর সূত্রের দাবি।
বর্তমানে ১৯টি রাজ্য সড়কের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের। মোট দৈর্ঘ্য প্রায় ৪০০০ কিলোমিটার। রাজ্যের পূর্ত-সচিব অজিতরঞ্জন বর্ধন বলেন, “প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে, কর্পোরেশন কাজ শুরু করলে প্রথম দফায় তিনটি রাজ্য সড়ক আগাগোড়া নতুন করে বানানো হবে। সে ক্ষেত্রে টেন্ডার ডেকে বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে।” ধীরে ধীরে সব রাজ্য সড়কই নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা নিয়েছে হাইওয়ে ডেভলপমেন্ট কর্পোরেশন। এক পূর্ত-ইঞ্জিনিয়ারের কথায়, “গাড়ির চাপ দিন দিন যে হারে বাড়ছে, তাতে মেরামতির ক’মাসের মধ্যে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। রোজ গড়ে ১৫ হাজার গাড়ির চাপ সহ্য করতে পারবে ভেবে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক বানানো হয়েছিল। এখন ওই রাস্তা দিয়ে রোজ গড়ে ২৩ হাজার গাড়ি চলে!”
বিহার, কেরল, গুজরাত কিংবা মহারাষ্ট্র অবশ্য অনেক আগেই তাদের রাস্তাগুলোর ভার বেসরকারি সংস্থার হাতে ন্যস্ত করেছে। দেরিতে হলেও পশ্চিমবঙ্গ এখন সেই পথেই হাঁটতে চলেছে। মহাকরণ সূত্রের খবর: ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্য সড়কের হাল ফেরানোর লক্ষ্যে কর্পোরেশন গড়তে উদ্যোগী হন। সেই মতো স্বশাসিত সংস্থাটির প্রশাসনিক পরিকাঠামো চূড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর-সূত্রের খবর, ১৪ জনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে বোর্ড। যার চেয়ারম্যান করা হয়েছে প্রাক্তন পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সিকে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.