প্রবীণদের সরিয়ে নতুন প্রজন্মের হাতে যে ভাবে বিজেপির রাশ তুলে দিতে চান মোহন ভাগবত, সেই সমীকরণ মেনেই নিঃশব্দে পালাবদল হল সঙ্ঘে। অশীতিপর অশোক সিঙ্ঘলকে সরিয়ে অন্ধ্রপ্রদেশের মিষ্টি ব্যবসায়ী রাঘব রেড্ডিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদের আন্তর্জাতিক সভাপতির পদ দেওয়া হয়েছে।
প্রবীণ সরসঙ্ঘচালক কে এস সুদর্শনকে সরিয়ে তিন বছর আগে আরএসএস প্রধানের দায়িত্বে এসেছেন মোহন ভাগবত। তার পর থেকেই বিজেপিতে নতুন হাওয়া আনার চেষ্টা করছেন তিনি। আরএসএসের সদর দফতর নাগপুরের ব্যবসায়ী ও বিজেপি নেতা নিতিন গডকড়ীকে দলের সভাপতি করে নিয়ে এসেছেন তিনি। এ বারে বিশ্ব হিন্দু পরিষদেও আমূল পরিবর্তন হল।
কোষাধ্যক্ষের পদ থেকে রাঘবকে সরাসরি সংগঠনের শীর্ষে বসানোর কাজটি সারা হল নিঃশব্দে। এমনকী কট্টরবাদী হিন্দু নেতা প্রবীণ তোগাড়িয়ার ইচ্ছা সত্ত্বেও সেই পদ তাঁকে দেওয়া হয়নি। তাঁকে কার্যনির্বাহী সভাপতি পদেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। তোগাড়িয়ার সঙ্গে একই পদে আনা হয়েছে মহারাষ্ট্রের আর এক জন ব্যবসায়ী অশোক চোগলেকে।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের অবশ্য বক্তব্য, স্বাস্থ্যের কারণেই অশোক সিঙ্ঘলকে সভাপতি পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। তিনি সভাপতি না থাকলেও উপদেষ্টা হিসাবে থাকবেন। তবে সঙ্ঘের নেতারা ঘরোয়া আলোচনায় এ-ও বলছেন যে, যেখানে রাহুল গাঁধী থেকে অখিলেশ যাদবরা যখন রাজনীতির ময়দানের দখল নিচ্ছেন, সেই পরিস্থিতিতে বিজেপিতেও প্রবীণদের পরিবর্তে নবীন নেতাদের দায়িত্বে আসা উচিত। |
সঙ্ঘে যে রকম প্রবীণ নেতারা উপদেষ্টা হিসাবে থাকছেন, বিজেপিতেও সেই ‘মডেল’ অনুসরণ করা উচিত। স্বয়ং মোহন ভাগবতই লালকৃষ্ণ আডবাণীকে ‘মেন্টর’-এর ভূমিকা পালন করার পরামর্শ দিয়েছেন। এবং সেই পথ ধরেই বিরোধী দলনেতার পদে সুষমা স্বরাজকে আনা হয়েছে আডবাণীকে সরিয়ে। এখন প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থীর দৌড় থেকেও আডবাণীকে দূরে থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
সঙ্ঘ নেতৃত্বের মতে, রামমন্দির আন্দোলনের ফলে রাজনৈতিক দল হিসাবে বিজেপির উত্থান হয়েছে। সেই সময়ই বিজেপি দু’শোর বেশি আসন নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে উত্তরপ্রদেশে। পরে কেন্দ্রেও ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেই উন্মাদনাকে ফিরিয়ে আনা মুশকিল। তাই কট্টরবাদী হিন্দুত্বের রাজনীতির অবকাশ আর নেই। এ বারের উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনে খোদ অযোধ্যাতেই বিজেপি হেরে গিয়েছে। অযোধ্যায় রামমন্দির নির্মাণের বিষয়টি দল ও সঙ্ঘের ‘আত্মা’র সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিজেপিকে এখন নবীন মুখ এনে উন্নয়নের কর্মসূচিতেই সওয়ার হতে হবে। সঙঘ নেতারা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করছেন, মহারাষ্ট্রে মন্ত্রী থাকার সময়েও নিতিন গডকড়ী উন্নয়ন করেছেন। রাজ্যে পরিকাঠামো উন্নয়নে জোয়ার এনেছিলেন তিনি। খোদ মোহন ভাগবতও আধুনিক মুখ বলে পরিচিত। তাই বর্তমান প্রেক্ষাপটে যাঁরা আধুনিক ও উন্নয়নমুখী, তাঁরাই প্রাধান্য পাবেন। সেই হিসাবে অশোক সিঙ্ঘল বা প্রবীণ তোগাড়িয়ারাও প্রাসঙ্গিকতা হারাচ্ছেন। |