খনির কাজকর্মের কোনও হিসেবই রাখে না মধ্যপ্রদেশের খনি দফতর। এক আরটিআই (তথ্য জানার অধিকার) আন্দোলনকারীর চিঠির উত্তরে গত বছর ডিসেম্বরেই এ কথা জানিয়েছিল সংশ্লিষ্ট দফতর। যে রাজ্যে বেআইনি পাচার আটকাতে তৎপর এক আইপিএস অফিসারকে দিনের আলোয় খুন করতে খনি মাফিয়ারা কসুর করে না, সেখানে খনি দফতর তথা রাজ্য সরকারের এমন ঔদাসীন্য যে বিস্ময় জাগায়, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে প্রশ্ন তুলে দেয় মাফিয়া, মন্ত্রী ও পুলিশের গোপন আঁতাতের।
বৃহস্পতিবার হোলির দিনে বেআইনি পাচার আটকাতে গিয়ে ট্রাক্টরের চাকায় পিষ্ট হয়ে আইপিএস অফিসার নরেন্দ্র কুমার সিংহ (৩০) মোরেনে খুন হওয়ার পরই প্রশাসনের ফ্যাকাসে চেহারাটা নতুন করে সামনে চলে এসেছে। কাল ভিন্দ জেলায় বালি মাফিয়াদের হামলার মুখে পড়েছিলেন অন্য এক আইপিএস অফিসার। আজও অজয়গড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে বালি মাফিয়ারা।
২০১১ সালের ডিসেম্বরে অজয় দুবে নামে এক আরটিআই আন্দোলনকারী খনি দফতরের কাছে চিঠি পাঠান। ওই বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত খনি সংক্রান্ত কাজের যে রিপোর্ট রাজ্যের খনিমন্ত্রী রাজেন্দ্র শুক্লকে দেওয়া হয়েছে, তার কপি চেয়ে পাঠান তিনি। সঙ্গে চান অবৈধ খননের মাস প্রতি হিসেব। ২৮ জানুয়ারি খনি দফতরের সচিব তাঁকে জানিয়ে দেন, এমন কোনও হিসেব রাখাই হয় না। অর্থাৎ খনি থেকে কতখানি আকরিক সংগৃহীত হয়েছে, তার কতখানি গুদামে জমা রাখা হয়েছে এবং কী পরিমাণ আকরিক লরিতে বা ট্রেনে অন্যত্র পাঠানো হয়েছে তার কোনও নথি নেই। ফলে, মোট কত আকরিক মাফিয়াদের হাত ঘুরে পাচার হয়ে যাচ্ছে তার হিসেব পাওয়াও সম্ভব নয়। অজয় দুবে বলেন, “অবৈধ খনন ও বেআইনি পাচার নিয়ে রাজ্য সরকার যে চোখ বুজেই থাকতে চায় তা স্পষ্ট। সেই সঙ্গে এটাও বোঝা যাচ্ছে যে তাঁরা খনি এলাকার হিসেব-নিকেশ সাধারণ মানুষকে জানাতেও রাজি নন।”
অবৈধ খনন ও বেআইনি পাচারের প্রশ্নে রাজ্য সরকারের উদাসীনতা নিয়ে গত বিধানসভা অধিবেশনেই শিবরাজ সিংহ চৌহানের সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উঠেছিল। এমনকী এ ব্যাপারে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবিতে সরব হয়েছিলেন বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকারের জোট শরিকরাও। গত বছর ডিসেম্বরে এনডিএ জোটের সভাপতি শারদ যাদব এক সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছিলেন, বল্লারি খনি কেলেঙ্কারির মতো ঘটনা প্রায় রোজই ঘটছে মধ্যপ্রদেশের জব্বলপুর-কাটনি-সাতনা এলাকায়। তাই রাজ্য সরকার যেন অবিলম্বে ব্যবস্থা নেয়। আইপিএস অফিসার নরেন্দ্র কুমার খুন হওয়া প্রসঙ্গে যাদব আজ বলেন, “সে দিন আমার কথা শুনে রাজ্য সরকার যদি সতর্ক হয়ে মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিত, তবে হয়ত এমন ঘটনা ঘটতোই না।”
মাফিয়াদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া তো দূরে থাক, উল্টে বিজেপি বিধায়কদের বিরুদ্ধেই পাচারে মদতের অভিযোগ তুলেছেন নিহত নরেন্দ্রর বাবা কেশব সিংহ। তিনি বলেন, “শুধু পুলিশ নয়, বিজেপি বিধায়কদের মদতও ছিল। এদের মিলিত মদতে মাফিয়ারা খুন করেছে আমার ছেলেকে।” মধ্যপ্রদেশে রাজনীতিকদের সঙ্গে মাফিয়াদের যোগসাজসের অভিযোগ নতুন নয়। গত অক্টোবরেই জগদীশপ্রসাদ শর্মা নামে এক বন আধিকারিক সাতানা জেলার অবৈধ খনন ও বেআইনি পাচার নিয়ে গোপন রিপোর্ট জমা দেন। তাতে বলা হয়, গোটা চক্রটির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন দুই সাংসদ নরেন্দ্র সিংহ নাগোদ ও রাজেন্দ্র শুক্ল। তাই সব দিক বিবেচনা করে মুখ্যমন্ত্রী চৌহান ঘটনার বিচারবিভাগীয় তদন্তের আশ্বাস দিলেও তাতে সন্তুষ্ট নন কেশব। তিনি চান, সামগ্রিক ভাবে অবৈধ খনন ও বেআইনি পাচার বন্ধে ব্যবস্থা নিন মুখ্যমন্ত্রী। তাতে তাঁর মন্ত্রিসভার কোনও সদস্য যুক্ত থাকলে তাদেরও যেন রেয়াত করা না হয়। |