উত্তরপ্রদেশের ফল দেখে রণকৌশল বদলাচ্ছেন সনিয়া গাঁধী। ‘একলা চলো’ নীতি আপাতত বর্জন করে মুলায়ম সিংহ যাদবকে গোপনে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে মনমোহন সিংহের মন্ত্রিসভায় যোগ দেওয়ার জন্য।
অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হবেন বলে আজ সমাজবাদী পার্টির তরফে ঘোষণা করে দেওয়ার পরেই মুলায়মকে গুরুত্বপূর্ণ দফতর দিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় সামিল করার ব্যাপারে তৎপর হয়ে উঠেছে কংগ্রেস। কিন্তু সেই কৌশল সফল করতে গেলে সব চেয়ে আগে প্রয়োজন মুলায়মকে রাজি করানো। কংগ্রেসের একাংশের মতে, রেলের মতো গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দিলে তবেই মুলায়মকে রাজি করানো সম্ভব।
সে ক্ষেত্রে আবার প্রশ্ন হল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কী করবেন। সম্প্রতি বিভিন্ন বিষয়ে রেলমন্ত্রী দীনেশ ত্রিবেদীর সঙ্গে মমতার যে মতবিরোধ হচ্ছে, তাতে আশার আলো দেখছেন কংগ্রেস নেতাদের একাংশ। তাঁদের মতে, রেল মন্ত্রক ছেড়ে দেওয়ার অনুরোধ রাখলেও রাখতে পারেন মমতা। কিন্তু দলের অন্য অংশ আবার এতটা আশাবাদী নন। তাঁদের বক্তব্য, যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায় যে রেল বাজেট পেশ হওয়ার পরে দীনেশকে সরাতে চান মমতা, তা হলেও মন্ত্রকটি তিনি ছাড়বেন কিনা সন্দেহ। তৃণমূলেরই আর কোনও সাংসদকে রেলমন্ত্রী করতে চাইবেন তিনি। তবু এখনই হাল না ছেড়ে মমতাকে বাজিয়ে দেখার পক্ষপাতী কংগ্রেস নেতৃত্ব।
কিন্তু সব চেয়ে বড় প্রশ্ন হল, মুলায়ম রাজি হবেন কি? সে ক্ষেত্রে মমতা রাজি না হলে তাঁকে অন্য কোনও গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রক দেওয়া যেতে পারে। সেই কারণে মুলায়মের মনোভাব আন্দাজ করার চেষ্টা শুরু করেছেন কংগ্রেস নেতৃত্ব।
প্রথম ইউপিএ সরকার যখন গঠন হয়, তখন কংগ্রেসের শরিক হওয়ার চেষ্টা করেছিলেন মুলায়ম। অমর সিংহ তখন মুলায়মের সঙ্গে। সিপিএম নেতা হরকিষেণ সিংহ সুরজিতের সঙ্গে গাড়িতে চেপে দশ জনপথে নৈশভোজে চলে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু মুলায়মের প্রস্তাব তখন প্রত্যাখ্যান করেছিল কংগ্রেস। এমনকী, এ বার উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে যখন মুলায়ম কংগ্রেসের সঙ্গে জোট বাঁধার ব্যাপারে গররাজি ছিলেন না, তখনও রাজি হয়নি কংগ্রেস।
ফলে এখন সমাজবাদী পার্টি যখন একার জোরে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতা দখল করেছে, তখন কংগ্রেসের ডাকে মুলায়ম কতটা সাড়া দেবেন, সেই প্রশ্ন থাকছেই। বিশেষ করে সপা-র একটা অংশের জোরালো অভিমত যখন এই যে, কংগ্রেস ডুবন্ত জাহাজ। তাদের সঙ্গে যাওয়া মোটেই রাজনৈতিক বুদ্ধিমত্তার পরিচায়ক নয়। বরং অবিলম্বে অন্তর্বর্তী নির্বাচন হলে সপা-র লাভ হবে বলেই দলের ওই অংশের মত। এই সপা নেতারা চান, মুলায়ম এখন কংগ্রেস-বিরোধী রাজনীতির নেতৃত্ব দিন।
মুলায়ম এই পথে হাঁটতে পারেন বলে ভয় রয়েছে কংগ্রেসেরও। দলের একটি অংশের মতে, রাহুল গাঁধী গোটা উত্তরপ্রদেশে প্রচার করে দলের ভোট-শতাংশ কিছুটা বাড়িয়েছেন ঠিকই, কিন্তু আসন সংখ্যা বাড়াতে পারেননি। তার উপর তারুণ্যের যে স্লোগান রাহুল দিয়েছিলেন, তাঁর থেকেও তরুণ অখিলেশ মুখ্যমন্ত্রীর আসনে বসার পর তা ভোঁতা হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। অখিলেশ যদি কংগ্রেসের বিরুদ্ধেই আন্দোলন শুরু করেন, তা হলে আরও সমস্যা হবে। সেই কারণে মুলায়মকে শরিক করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় নিয়ে নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ হবে বলেই মনে করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব।
কংগ্রেস সেনাপতিরা সেই লক্ষ্যে কাজে নেমেও পড়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রচার থেকে মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি মুলায়ম সবই ছেলে অখিলেশের হাতে তুলে দিয়েছেন সত্যি, কিন্তু তাই বলে তিনি নিজে তো রাজনীতি থেকে অবসর নেননি। ফলে চেষ্টা করলে তাঁকে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় আনা সম্ভব। মুলায়মকে বোঝানো হচ্ছে, ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে কংগ্রেস এবং সপা যদি জোট বেধে লড়াই করে তা হলে মায়াবতীকে কোণঠাসা করার চেষ্টা আরও ফলপ্রসূ হবে। মুলায়ম কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভায় এলে যৌথ ভাবে মায়াবতীকে আক্রমণ
করা যাবে। সপা নেতা রামগোপাল যাদবের অবশ্য বক্তব্য, “কংগ্রেসের সঙ্গে আমরা জোট বেধে লড়াই করিনি। ফলে এই জল্পনার কোনও মূল্য নেই।” আর কংগ্রেসের মুখপাত্র শাকিল আহমেদের কথায়, “কংগ্রেস ও সমাজবাদী পার্টি উত্তরপ্রদেশে পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে লড়েছে। মুলায়ম সিংহ যাদব কেন্দ্রীয় সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন দিচ্ছেন। এখন তিনি সরকারে আসবেন কি না, সেটি আলোচনাসাপেক্ষ।” |