মাত্র ৩৮ বছর বয়সে দেশের বৃহত্তম রাজ্যে কনিষ্ঠতম মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন অখিলেশ সিংহ যাদব। উত্তরপ্রদেশের সমাজবাদী পরিবারে স্বাভাবিক ভাবেই তাই আজ উৎসবের আবহ। অথচ সেই আবহেই অখিলেশের অভিষেক মুহূর্তে আজ বড় প্রশ্নও উঠে গেল— ‘অখিলেশ পারবেন তো!’
মুলায়ম-পুত্রের বয়স কম, প্রশাসনিক দক্ষতার পরীক্ষাও এখনও হয়নি। তার ওপর উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর থেকে যে ভাবে রাজ্য জুড়ে রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটতে শুরু করেছে মূলত তার প্রেক্ষাপটেই এমন সংশয়-সন্দেহ এবং প্রশ্ন তৈরি হয়ে গিয়েছে সর্বস্তরে। নেপথ্যে অবশ্যই রয়েছে উত্তরপ্রদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শুধরে সুশাসন কায়েম হওয়ার প্রত্যাশা। সপা ও বিএসপি সমর্থকদের মধ্যে গুলি বিনিময়ে আজও এক জন নিহত হয়েছেন। আহত পাঁচ। ঘটনাটি সান্ডিলা অঞ্চলে টিকরা বারার গ্রামের। সান্ডিলার সদ্য প্রাক্তন বিএসপি বিধায়ক তথা মায়াবতী সরকারের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী আবদুল মান্নানের দাবি, হতাহতেরা সকলেই তাঁর দলের সমর্থক। তাঁদের উপর গুলি চালিয়েছে সপা কর্মীরা।
পাশাপাশি, আরও প্রত্যাশা জাতপাতের সমীকরণ ভেঙে সার্বিক উন্নয়নের। সমাজবাদী পার্টির স্লোগানের বাস্তবায়ন ঘটে ‘উত্তমপ্রদেশে’ পরিণত হবে দেশের বৃহত্তম রাজ্য। সুতরাং সন্দেহ নেই, মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ নিয়ে আগামী ১৫ মার্চ শপথ নিতে চলেছেন মুলায়ম-পুত্র।
বস্তুত, অখিলেশই যে মুখ্যমন্ত্রী হতে চলেছেন তা গত কাল দুপুর থেকেই স্পষ্ট হয়ে যায়। দলের মধ্যে যাঁরা (আজম খান ও শিবপাল যাদব) পুত্রের পরিবর্তে পিতাকেই মুখ্যমন্ত্রী পদে দেখতে চাইছিলেন, গত কয়েক দিন ধরে তাঁদের বুঝিয়ে রাজি করান মুলায়ম। তার পর আজ সপা-র বিধায়ক দলের বৈঠকের পর রাজ্যের পরবর্তী মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে অখিলেশের নাম ঘোষণা করেন দলীয় নেতৃত্ব। |
লখনউয়ে সেই ঘোষণা হতেই দিল্লিতে বিজেপি নেতা অরুণ জেটলি থেকে শুরু করে কংগ্রেসের শীর্ষ নেতা জনার্দন দ্বিবেদী তাঁকে শুভেচ্ছা জানান। জনার্দন বলেন, “অখিলেশের ওপর বড় দায়িত্ব চাপল। উত্তরপ্রদেশকে উন্নয়নমুখী করে তোলার চ্যালেঞ্জ রইল তাঁর সামনে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে আইনের শাসন ফিরবে বলে আশা করছেন মানুষ।”
রাজ্যপাল বি এল জোশীর কাছে সরকার গঠনের দাবি জানিয়ে আসার পর লখনউয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করে অখিলেশও আজ স্বীকার করে
নেন তাঁর সেই দায়িত্বের কথা। সাংবাদিকদের বলেন, “উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা হবে অগ্রাধিকার। মেধাবী ও দক্ষ আমলাদের শীঘ্রই গুরুত্বপূর্ণ সব পদে আনা হবে।” জানিয়েছেন, ভোটের ইস্তেহারের সব প্রতিশ্রুতি পালন করা হবে।
দিল্লির রাজনৈতিক নেতৃত্বের কথায়, এমন নয় যে ৩৮ বছরে বয়সে এই প্রথম কেউ মুখ্যমন্ত্রী হলেন। অসমে প্রফুল্ল মহন্ত বা মহারাষ্ট্রে শরদ পওয়ারও এমন কম বয়সেই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন। হালফিলে ৩৮ বছর বয়সেই জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী পদের দায়িত্ব নিয়েছেন ওমর আবদুল্লা। কিন্তু অসম, মহারাষ্ট্র বা জম্মু-কাশ্মীরের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের বিস্তর ফারাক। আয়তনে বিশাল এই রাজ্যে জেলার সংখ্যাই ৮০টি। তার ওপর জাত-পাত ও ধর্মের শত বিভাজন। সেই সঙ্গে অনুন্নয়ন। ফলে রাজ্যকে উন্নয়নমুখী করে তোলা অবশ্যই বড় চ্যালেঞ্জ।
রাজ্যে কাজের সুযোগ নেই। মানুষ কাজ খুঁজতে অন্য রাজ্যে যাচ্ছেন। আবার উত্তরপ্রদেশের প্রত্যন্ত জেলা ও গ্রামাঞ্চলে উন্নয়নের কাজকে ত্বরান্বিত করাও খুব সহজ কাজ নয়। তাঁদের মতে, পশ্চিমবঙ্গের যে অর্থ-সংকট রয়েছে, উত্তরপ্রদেশের পরিস্থিতিও কতকটা সে রকমই। তার ওপর রয়েছে সর্ব স্তরে দুর্নীতির প্রকোপ। ফলে রাজ্যের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর পাশাপাশি অর্থের জন্য কেন্দ্রের সঙ্গেও সুসম্পর্কও রাখতে হবে অখিলেশকে।
কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার বক্তব্য, অখিলেশের উচিত হবে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারকে অনুসরণ করার। কেন্দ্রের অর্থে বিহারের রাস্তাঘাটের হাল ফিরেছে ঠিকই, তা বই বড় কোনও উন্নয়ন এখনও পর্যন্ত হয়নি। কিন্তু নীতীশ রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কঠোর হাতে নিয়ন্ত্রণ করে মানুষকে একটা ইতিবাচক বার্তা দিতে পেরেছেন। সেই সঙ্গে দুর্নীতি দমন করতে ব্যবস্থা নিয়েছেন। স্বাভাবিক ভাবেই উন্নয়নের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে। প্রথম পাঁচ বছরে অখিলেশ সেটুকু সুনিশ্চিত করতে পারলে এ যাত্রায় তিনি উত্তীর্ণ হয়েছেন বলে মনে করবে মানুষ।
সমাজবাদী পার্টির এক শীর্ষ সারির নেতা আজ বলেন, এটা ঠিকই, উত্তরপ্রদেশে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখা বিরাট দায়িত্ব। সপা সমর্থকদের সঙ্গে দলিতদের সংঘর্ষ শুরু হওয়ায় কাজ আরও শক্ত হয়েছে অখিলেশের। কিন্তু তিনি যে কঠোর হাতে হিংসা দমন করতে চান, সেই বার্তা অখিলেশ ইতিমধ্যেই দিয়েছেন। তিনি জানেন, মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে সাফল্যের ওপরেই নির্ভর করছে তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। |