সিআইআইয়ের উদ্যোগে সভা শহরে
পেশাদারিত্বে ডাব্বাওয়ালাদের টেক্কা দেওয়া কঠিন
ডাব্বাওয়ালাদের সঙ্গে দেখা করতে সকাল ১১টা ২০ মিনিট থেকে ১১টা ৪০ মিনিটের মধ্যেই মুম্বইয়ের চার্চ গেট স্টেশনে আসতে হয়েছিল খোদ প্রিন্স চার্লসকে। ডাব্বাওয়ালাদের স্পষ্ট কথা, তিনি বিলেতের ভাবী রাজা হতে পারেন। কিন্তু ডাব্বাওয়ালাদের ‘রাজা’ তাঁদের গ্রাহকেরা, যাঁদের নির্দিষ্ট সময়ে খাবার পৌঁছে দিতে তাঁরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তাই সাক্ষাতের সময় ও স্থান ডাব্বাওয়ালাদের কথা মতোই হবে।
গ্রাহকের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা।
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময়ে অন্য অনুষ্ঠানে নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে দেরিতে পৌঁছলেও ডাব্বাওয়লাদের অনুষ্ঠানে কাঁটায় কাঁটায় ঠিক সময়েই হাজির হয়েছিলেন বিলাসরাও দেশমুখ। দেরি হলে যদি ডাব্বাওয়ালারা চলে যান!
সময়ানুবর্তিতা।
যুবরাজ চার্লস ও ক্যামিলা পার্কারের বিয়ের উপহার বিলেতে পাঠাতে চেয়েছিলেন ডাব্বা- ওয়ালারা। খবর শুনে ক্যুরিয়র সংস্থাগুলির মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। তারা নিখরচায় তা পাঠাতে চেয়েছিল। ডাব্বাওয়ালাদের জন্য কিছু করতে পারলে তাদের সম্পর্কেও যে ভাল প্রচার হবে।
কাজের প্রতি নিষ্ঠা।
মুম্বই ডাব্বাওয়ালা। পেশাগত ক্ষেত্রে যাঁদের নানাবিধ ‘গুণাবলি’ অন্যদের কাছে অনুকরণীয়। কাজের সময় তাঁরা কাউকেই রেয়াত করেন না। বণিকসভা সিআইআই-এর নবীন প্রজন্মের শাখা ‘ইয়ং ইন্ডিয়ান’-এর কলকাতার সদস্যদের সঙ্গে আলাপচারিতায় সম্প্রতি এ ভাবেই ডাব্বাওয়ালা-দের পরিচয় করালেন মুম্বই ডাব্বাওয়ালা এডুকেশন সেন্টারের কর্তা পবন জি অগ্রবাল।
ডাব্বাওয়ালাদের তুলে ধরতে অগ্রবালকে নিয়ে দেশ জুড়ে বিভিন্ন সভা করছে ‘ইয়ং-ইন্ডিয়া’। অন্যান্য শহর ঘুরে তিনি এসেছিলেন কলকাতায়। সভার কাছে তাঁর বার্তা ছিল, ডাব্বাওয়ালাদের জীবন গোটা সমাজের কাছেই অনুকরণযোগ্য। পেশার প্রতি তাঁদের ‘প্যাশন’, সততা, মূল্যবোধ, দায়বদ্ধতা, ভালবাসা, নিষ্ঠা, সবই শিক্ষণীয়। অগ্রবালের কথায়, “যে কাজই করুন না কেন, তাতে যেন প্যাশন থাকে। শুধুমাত্র বড় অঙ্কের বেতন বা উঁচুপদের হাতছানিই প্রাধান্য না পায়।”
১২০ বছর আগে শুরু হওয়া এই ব্যবসায় এখন যুক্ত ৫,০০০ জন। রোজ প্রায় দু’লক্ষ লোকের খাবার পৌঁছে দেওয়া ও ফাঁকা ‘টিফিন’ বাক্স ফেরত আনতে তাঁদের বড় ভরসা মুম্বইয়ের রেল পরিষেবা। শুধুমাত্র কয়েকটি নীতির (যেমন কাজের সময়ে কোনও নেশা চলবে না, মাথায় নির্দিষ্ট সাদা টুপি পরতে হবে, আগাম না-জানিয়ে ছুটি নেওয়া চলবে না ইত্যাদি) উপর নির্ভর করেই ঘড়ির কাঁটা মেনে চলে এই ছবিটা। আজ পর্যন্ত পুলিশের কাছে একজনের বিরুদ্ধেও অভিযোগ নেই।
প্রথাগত প্রশিক্ষণ বা প্রযুক্তি ব্যবহারের বালাই নেই। তবুও যে কোনও কর্পোরেটের কাছে তাঁদের দক্ষতা ঈর্ষণীয়। অগ্রবালের দাবি, দেখা গিয়েছে, ১.৬ কোটিবার খাবার আনা-নেওয়ার মধ্যে ভুল হয়েছে মাত্র একবার।
অন্য শহরে কেন এই ব্যবস্থা ছড়াচ্ছে না? অগ্রবালের বক্তব্য, অন্য শহরে এটা চলবে কিনা, তা নিশ্চিত ভাবে বলা যাবে না। কারণ যে নীতি মেনে মুম্বইয়ের ডাব্বাওয়ালারা কাজ করেন, তা অন্যত্র প্রয়োগ করার সুযোগ ঘটেনি কখনও। তবে আমন্ত্রণ পেলে ডাব্বাওয়ালারা অন্য শহরে গিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। কিন্তু তা কার্যকর করতে হবে সেখানকার মানুষকেই।
বস্তুত, অগ্রবালের মতে, এটা আর পাঁচটা ব্যবসার মতো নিছক আর একটি ব্যবসা নয়। বেশ কিছু সামাজিক রীতিনীতির শক্ত বুনিয়াদের উপর ভিত্তি করে এটি গড়ে উঠেছে। সামাজিক মূল্যবোধও এই ব্যবসার অন্যতম স্তম্ভ। নতুনরাও অগ্রজদের রীতিনীতি ভাঙার কথা ভাবতে পারেন না। তাই রিচার্ড ব্র্যানসনের মতো মানুষও তাঁর কর্মীদের বার্তা দিতে ডাব্বাওয়ালাদের সঙ্গে ছবি তুলতে এ দেশে ছুটে আসেন।
কিন্তু আধুনিক এই পৃথিবীর ‘শপিং মল’ বা ‘ফাস্ট ফুড’-এর রেস্তোরাঁ-র ভিড়ে কি আগামী দিনে বিপন্ন হয়ে পড়বেন না এই ভিন্ন ধারার পেশাদাররা? অন্তত আগামী দু’দশকে নয়, দাবি অগ্রবালের। তাঁর যুক্তি সেই লড়াইয়ে তাঁদের হাতিয়ার মানুষের স্বাস্থ্য সচেতনতা। শরীর ঠিক রাখতে অনেকেই বাইরের খাবার এড়িয়ে বাড়ির খাবারের দিকেই ঝুঁকছেন। আর বাড়ির মতো করেই তৈরি খাবার ঠিক সময়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে ডাব্বাওয়ালাদের চেয়ে মুম্বইয়ে আর ভরসাযোগ্য কে-ই বা আছেন, প্রশ্ন অগ্রবালের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.