উপলক্ষ এক। চিত্রনাট্যও প্রায় এক। শুধু বদলে গিয়েছেন কুশীলবেরা!
শনিবার বিকালে নিউটাউনের হিডকো ভবনের পিছন দিকে সেন্ট্রাল বিজনেস ডিস্ট্রিক্ট (সিবিডি) এলাকায় ফের অর্থতালুকের (ফিনান্সিয়াল হাব)-এর শিলান্যাস করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অনুষ্ঠানে ছিলেন তাঁর মন্ত্রিসভার একাধিক সদস্য, সচিব এবং কয়েকটি ব্যাঙ্ক ও দূতাবাসের কর্তারা। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বা কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীকে এই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। প্রায় ১৭ মাস আগে, ২০১০ সালের ১৩ অক্টোবর নিউটাউনেই অর্থতালুক তৈরির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান হয়েছিল। হিডকো ভবনের সামনে নারকেলবাগান এলাকায় সে দিনের সকালের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়-সহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্তারা। বাম জমানার সেই অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন না মমতা বা তাঁর দলের কেউ।
অর্থতালুক তৈরি হলে রাজ্যের অর্থনীতি, রাজস্ব ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে লাভ কতটা সে দিনের মতো আজও প্রায় একই ভাষায় ব্যাখ্যা করেন বক্তারা। তবে কেন আগের প্রকল্পটি বাতিল করা হল, তার ব্যাখ্যা দিয়ে নতুন সরকারের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “ওই সরকার নির্বাচনের আগে নাম কা ওয়াস্তে একটি প্রাইভেট সংস্থাকে দিয়ে হাব করাবে বলে ঘোষণা করেছিল। কিন্তু আর কিছু করেনি। এই কারণে আমরাই করব বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছি।” |
পাশাপাশি। অর্থতালুকের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। শনিবার। —নিজস্ব চিত্র |
শিলান্যাস অনুষ্ঠান করার আগেই অর্থতালুকে প্রকল্পের জন্য একটি ভবনও ‘রেডি’ করে ফেলেছেন বলে দাবি জানিয়ে মমতা মন্তব্য করেন, “ওই বিল্ডিংয়ে ১ লক্ষ বগর্ফুট জায়গা প্রস্তুত। একেবারে রেডিমেড বিল্ডিং। আজ চাইলে কালকেই তা পাওয়া যাবে।” ঘটনা হল, সিবিডি-তে বেসরকারি সংস্থা শ্রাচি-র সঙ্গে যৌথ ভাবে সিনথেসিস নামের ওই ভবনটি তৈরি হয়েছে বাম আমলে। হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেন জানান, ওই জমিটি হিডকোর। ভবনটি তৈরি করেছে শ্রাচি। শর্ত অনুযায়ী, ভবনের সামনের দিকের ২৩% (১ লক্ষ বর্গফুট) জায়গা পেয়েছে হিডকো। সেই জায়গা অর্থতালুকে বিনিয়োগকারীদের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে।
দেশের দ্বিতীয় অর্থতালুক তৈরির কাজ যৌথ উদ্যোগে শুরু হয় বাম আমলেই। এ জন্য হিডকোর প্রকল্প এলাকার ঠিক বাইরে যৌথ উদ্যোগের অংশীদার বেসরকারি সংস্থার ২৮.৮৪ একর জমি চিহ্নিত করা হয়। সেই জমিতে তিনটি ব্যাঙ্ক প্রকল্প করবে বলে সিদ্ধান্ত নেয়। তাদের মধ্যে দু’টি ব্যাঙ্ককে জমি হস্তান্তরের দিনও ধার্য করা হয়েছিল। যদিও মুখ্যমন্ত্রী-সহ হিডকোর বর্তমান কর্তাদের দাবি, আগের বারে কোনও কাজই হয়নি। কোনও জমি ঠিক না করেই অর্থ তালুকের ঘোষণা করা হয়েছিল।
নিউটাউনে অর্থতালুক তৈরি হলে কী হবে? মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “অর্থতালুক তৈরি হলে রাজ্যের আর্থিক সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসা যাবে।” আর্থিক সঙ্কটের ব্যাখ্যা দিয়ে তিনি বলেন, “কর বাবদ রাজ্যের আয় বছরে ২১ হাজার কোটি টাকা। অথচ ঋণ শোধ আর সুদ মেটাতেই কেন্দ্রকে দিতে হয় বছরে ২২ হাজার কোটি টাকা। তবু এরই মধ্যে চারটি শিল্পাঞ্চলে কমিশনারেট তৈরি করেছি। সরকারি চাকরিতে ২ লক্ষ ৭৫ হাজার পদ তৈরি করা হয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি এবং বেসরকারি সংস্থা মিলিয়ে আরও ২/৩ লক্ষ লোকের চাকরির সুযোগ তৈরি হবে। মাত্র ন’মাসে ৯৯% কাজ করে দেখিয়ে দিয়েছি।”
যৌথ উদ্যোগে না করে হিডকো একা যে অর্থ তালুক তৈরির কথা ঘোষণা করেছে, তাতে প্রথম পর্যায়ে সিবিডি এলাকায় ২৫ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সিনথেসিস ভবনের একাংশ (এক লক্ষ বর্গ ফুট)। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “এটা বিশ্বের অন্যতম আকর্ষণ কেন্দ্র হয়ে গেল। ওয়াল স্ট্রিট, লন্ডন আই-এর মতো আকর্ষণ কেন্দ্র।”
শুধু অর্থতালুক নয়, গোটা রাজ্যেই বিনিয়োগকারীদের জন্য জমির অভাব হবে না বলে এ দিন দাবি করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, “জমি ব্যাঙ্ক তৈরি। বাণিজ্যিক সংস্থাকে বলব, সরকারের উপর বিশ্বাস রাখুন। বিনিয়োগ করুন। আমরা সব রকম সাহায্য করব।” একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “গোয়ালতোড়ে ১০০০ একর জমি তৈরি রয়েছে। সেখানে কোনও উৎপাদন ভিত্তিক শিল্প তৈরি হলে আমি খুশি হব।” প্রসঙ্গত, গোয়ালতোড়ের ওই জমিতে কেন্দ্রীয় কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা তৈরির কথা হয়েছিল। পরে একটি বেসরকারি সংস্থাকেও ওই জমি দেখানো হয়। কিন্তু দু’টি প্রকল্পের কোনওটিই ওই জমিতে হবে না বলে প্রশাসনিক সূত্রের খবর।
অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি রাজ্যের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র বলেন, “লন্ডন-সিঙ্গাপুর-দুবাই-মুম্বইয়ের পর কলকাতায় অর্থ তালুক তৈরি হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীর দর্শন মেনে একটা বড় মাপের যাত্রা শুরু হল।” অনুষ্ঠানের সভাপতি নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, “মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ ছিল, অর্থ তালুক তৈরির ক্ষেত্রে সরকার নিজেই উদ্যোগ নিক। সেই মতো আন্তর্জাতিক অর্থ তালুক তৈরির পরিকল্পনা করা হয়েছে।” |