|
|
|
|
|
|
উত্তর কলকাতা
|
অগ্নিবিধি শিকেয় |
বিপন্ন বাস |
দীক্ষা ভুঁইয়া |
কোনওটি চার ফুট বাই চার ফুট। কোনওটি একটু বড়। আবার কোনওটায় মাত্র এক জন লোকই ঢুকতে পারেন। সরু অলিগলির ভিতরে ছোট ছোট ঘর। এই ঘরগুলিতেই চলছে ছাপাখানার ব্যবসা। আবার কোথাও ছাপাখানার কাজে ব্যবহৃত জিনিসের গুদাম হয়ে উঠেছে বাড়ির নীচের তলাগুলি। এলাকায় গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি বড় ধরনের আগুন লেগেছে।
তার পরেও পুরো ওয়ার্ড জুড়ে অগ্নিনির্বাপণের কার্যত কোনও ব্যবস্থাই নেই। পাশাপাশি, দমকল ও পুরসভার পক্ষ থেকে নজরদারির অভাব রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
বৈঠকখানা রোড, পটলডাঙা স্ট্রিট, কার্তিক বোস স্ট্রিট, পাটোয়ারি বাগান, বুদ্ধ ওস্তাগর লেনের বাসিন্দাদের অভিযোগ, হাতে গোনা কয়েক জন ব্যবসায়ী ব্যক্তিগত উদ্যোগে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা রেখেছেন বটে, কিন্তু সেগুলি কতটা কার্যকরী তা নিয়েই সন্দেহ আছে। তাঁদের অভিমত, গোটা অঞ্চলই কার্যত অরক্ষিত। কলকাতা পুরসভার ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডের পুরো অংশ জুড়েই রয়েছে ছাপাখানা সংক্রান্ত যাবতীয় ব্যবসা। প্রায় প্রতিটি জায়গাতেই বংশপরম্পরায় চলে আসছে এই ব্যবসা।
কোথাও পিসবোর্ড তো কোথাও নানা কাগজের গুদাম। চলছে ফয়েল তৈরির কাজ। এমনকী, ফয়েল ডাঁই করেও রাখা হয়।
|
|
বর্তমানে পাটোয়ারি বাগানের বেশ কিছু জায়গায় প্লাস্টিক তৈরির কাজও চলছে। চলছে অফসেট প্রিন্টিংয়ের কাজ। কিন্তু অতি দাহ্য বস্তু নিয়ে ব্যবসা চললেও কোনও অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থাই নেই। এলাকার এই বিপজ্জনক পরিস্থিতি প্রসঙ্গে দমকলের ডিরেক্টর জেনারেল দুর্গাপ্রসাদ তারানিয়া বলেন, “আমাদের কাছে নির্দিষ্ট অভিযোগ এলে আমরা ব্যবস্থা নিই।
এই এলাকার ব্যাপারে আমি অবশ্যই খোঁজ নিয়ে দেখব।”
বৈঠকখানা রোডে প্রাধান্য মূলত কাগজ ব্যবসায়ীদের গুদাম আর দোকানের। প্রতিটি দোকান আর বাড়ির তলায় ছোট ছোট ঘরেই কাগজ আর পিসবোর্ড ডাঁই করে রাখা। কাগজ, পিসবোর্ডের গুদাম ছাড়াও কাটিংয়ের ব্যবসা চলে এই জায়গায়। অন্য দিকে, পটলডাঙা স্ট্রিট জনবসতিপূর্ণ এলাকা। কিন্তু বেশির ভাগ বাড়ির নীচের তলাগুলি ভাড়া দেওয়া হয়েছে গুদাম হিসেবে। আবার পাটোয়ারি বাগানে তৈরি হয়েছে গাম, ডায়েরি, খড়ম, চপ্পলের সোল অর্থাৎ প্লাস্টিক জাতীয়
জিনিসের ব্যবসা। সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের আলাদা আলাদা সংগঠন রয়েছে। কিন্তু ঘিঞ্জি এলাকায় গোটা ওয়ার্ড জুড়ে বিভিন্ন দাহ্য বস্তুর ব্যবসা চললেও আগুনের হাত থেকে বাঁচার জন্য কোনও জলাশয় নেই। |
|
স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে জানা গিয়েছে, এলাকায় আগে যত বার আগুন লেগেছে, তত বারই দমকল কলেজ স্কোয়্যার থেকে জল নিয়ে কাজ করেছে। এমনকী, আগে রাস্তার মোড়ে মোড়ে গঙ্গার জলের পাইপ লাইন থাকলেও সেগুলি কয়েক বছর আগে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “পরিকাঠামোগত সমস্যা থাকায় পুরসভার একার পক্ষে পুরোটা দেখা সম্ভব হচ্ছে না। তবে দমকল ও পুরসভা যৌথ ভাবে পরিদর্শন শুরু করছে।”
কিন্তু এই বিপজ্জনক পরিস্থিতির মধ্যে ব্যবসা চালাতে গিয়ে ব্যবসায়ীরা কি আতঙ্কিত নন? ওয়ার্ডে মূলত দু’টি ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। ‘বৈঠকখানা বঙ্গীয় পুস্তক গ্রন্থন ব্যবসায়ী সমিতি’ এবং ‘বৈঠকখানা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ব্যবসায়ী সমিতি’। বৈঠকখানা সংশ্লিষ্ট আঞ্চলিক ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোপাল সাহা বলেন, “এখানকার বই বাঁধাইয়ের ব্যবসা আজকের নয়। প্রায় একশো বছরের পুরনো। এই মুহূর্তে এলাকা বিপজ্জনক হয়ে উঠেছে। কিন্তু দমকলের বর্তমান যে সব নিয়ম রয়েছে, তা মানা সম্ভব নয়। কারণ বাড়িগুলি বহু বছরের পুরনো। ফলে চারপাশে চার মিটার করে জায়গা ফাঁকা নেই। ফলে দমকলের ওই শর্ত মানা সম্ভব নয়। এখানে কোনও জলাশয় নেই। আমরা এই মুহূর্তে বড়জোর অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখতে পারি।” |
|
বৈঠকখানা বঙ্গীয় পুস্তক গ্রন্থন ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক প্রবীরকুমার দে বলেন, “আমাদের অনেক ব্যবসায়ী অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা শুরু করেছেন। তবে গুদামগুলি আমাদের হলেও জিনিসপত্রগুলি আমাদের নয়। প্রকাশন সংস্থাগুলি বই বাঁধাতে দিয়ে যায়। কিন্তু সব বই একঙ্গে না নিয়ে যাওয়ার জন্য বইগুলি আমাদের দোকানে জমতে থাকে। কিন্তু তার জন্য প্রকাশন সংস্থাগুলি টাকাও দেয় না। আমাদের নিজেদের পক্ষে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখা সবসময় সম্ভব হয় না। তা সত্ত্বেও আমরা নিজেদের খরচে অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র রাখার চেষ্টা করছি।”
ওয়ার্ডের বিপজ্জনক পরিস্থিতির কথা স্বীকার করে স্থানীয় কাউন্সিলর স্বপ্না দাস বলেন, “সম্প্রতি আমি এলাকার বিভিন্ন ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে কথা বলেছি। অনেকেই অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র লাগাবেন বলে জানিয়েছেন। তবে সকলের কাছ থেকেই যে সাড়া পেয়েছি তা নয়। এই এলাকার ব্যবসাও বহু বছরের পুরনো। ফলে সব সমস্যা মেটানো সম্ভব নয়।” তিনি জানান, এলাকায় বেশ কিছু বেআইনি প্লাস্টিক কারখানা গড়ে উঠেছে। খবর পেয়ে ইতিমধ্যে আমি কয়েকটি কারখানা বন্ধও করে দিয়েছি।
|
|
|
|
|
|