অবসরের পরেও কি বিপন্ন ভারতীয় ক্রিকেটের হয়ে সেই তিন নম্বরে ব্যাট করতে নামবেন রাহুল দ্রাবিড়?
ললিত মোদী এবং শ্রীনিবাসন ভারতীয় বোর্ডের যুযুধান দুই কর্তা এমনই বিপরীত মেরুর যে ‘রাহুল’ নামটাও উচ্চারণ করে থাকেন একেবারে ভিন্ন স্টাইলে। অথচ ৯৯৯টা ব্যাপারে দ্বিমত পোষণকারী শুম্ভ-নিশুম্ভ কর্তারা একটা ইস্যুতে একমত: শুক্রবার চিন্নাস্বামীতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে অবসর ঘোষণা করা দ্রাবিড়ের মধ্যে আরও ‘ক্রিকেট’ রয়েছে! সেটা প্রশাসক হিসেবে অবশ্যই। বোর্ডে যাঁরা প্রশাসক অনিল কুম্বলে সম্পর্কে ক্রমাগত আস্থাহীন হয়ে পড়ছেন, তাঁরাও কিন্তু অবসর-পরবর্তী দ্রাবিড় সম্পর্কে প্রবল আস্থাশীল। এঁদের ভাবনার মধ্যে রয়েছে এমন অভিনব প্রস্তাব যা আচমকা হাজির হতে পারে। গোটা দেশের জন্য ‘ডিরেক্টর অফ ক্রিকেট অপারেশনস’ নিযুক্ত হওয়ার অফার পেতে পারেন রাহুল। যাঁর কাজ হবে দেশের অধুনা বিধ্বস্ত ক্রিকেট কাঠামোকে মেরামত করে তার আধুনিকীকরণ। মাঠে যে কাজটা গত দু’দশক ধরে করে আসছিলেন।
এটা তো তবু কাগজে-কলমে আসেনি। ভাবনা অনেক দূর এগিয়েছে এই অবধি। ধারাভাষ্যের টাটকা প্রস্তাব এসেই গিয়েছে। এশিয়া কাপে যদি ভাষ্যকার হিসেবে গরমাগরম যোগ দিতে রাজি থাকেন। সচিনদের নিয়ে বলেন ঢাকার টিভি বক্সে বসে। মাথা ঘুরিয়ে দেওয়ার মতো অঙ্ক দ্রাবিড়ের জন্য অপেক্ষা করছে।
মিডিয়ায় লেখালেখি সেটাও তো বহু বছর ধরে অপেক্ষমান। ক্যাপ্টেন হওয়ার পর লোকে কলম লিখতে শুরু করে। দ্রাবিড় উল্টে বছর সাতেক আগে কলম বন্ধ করে দেন। যেহেতু তাঁর দলে বাকিদের লেখার অনুমতি দেওয়া হয়নি। সেসব পুরনো কথা। নতুন করে লেখালেখির প্রস্তাব অবসরের ছ’ঘণ্টার মধ্যেই ধেয়ে এসেছে। |
বাণিজ্যিক দৃষ্টিকোণ সম্পর্কে সামান্য উৎসাহী কেউ উদ্ভূত পরিস্থিতিকে সোনার খনির মতো দেখবে। ভাববে এখুনি নিয়ে নিই। এক মাস পরে গোটা খনিটাই উধাও হয়ে যেতে পারে। অথচ তিনি রাহুল শরদ দ্রাবিড় পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, আগামী জুন পর্যন্ত কিছু করবেন না। ক্রিকেটজীবনে যেমন আনকোরা পেসারকেও প্রথম ওভারে লিফট করেননি, অবসর জীবনে পদার্পণ করেও তাই। ইচ্ছে এবং ব্যাকরণের বিরুদ্ধে ক্রিকেট মাঠে যাননি। জীবনের দ্বিতীয় ইনিংসেও তাই।
কোনটাকে বেশি অবিশ্বাস্য বলব? সনাতন সেই মধ্যবিত্ত মূল্যবোধকে ষোলো বছর দুর্ভেদ্য প্রাচীরের মতো অক্ষত রাখা? নাকি তাঁর অবসরকে কেন্দ্র করে আচমকা জাতীয় শোকের পরিস্থিতি তৈরি হয়ে যাওয়া? অবসরের গন্ধ ভেসে আসা ইস্তক সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, ওয়েবের দুনিয়া, চায়ের আড্ডা, টিভি চ্যানেল--গত দু’দিন এমন আলোচিত হয়ে চলেছেন দ্রাবিড়। সর্বস্তরের মানুষ। শিল্পী, সাহিত্যিক, পুলিশ অফিসার, অভিনেতা, চিত্রপরিচালক, ব্যাঙ্ক-কর্মী, ডাক্তার, সবাই ডুবে গিয়েছে আগাম বিষণ্ণতায়। মৃত্যুর আগেই যেন সবাই বিহ্বল হয়ে গিয়েছিল মৃত্যুশোকে। পাকা খবর শোনার পরে তার তীব্রতা বেড়েছে মাত্র। পাশে রাখার মতো দ্বিতীয় দৃষ্টান্ত ভারতীয় ক্রিকেটে নেই। অথচ অবসরের সিদ্ধান্ত গোপন রাখার ব্যাপারে, এটা নিয়ে ‘হাইপ’ না তুলতে চাওয়ায় দ্রাবিড় এতটাই দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা ঘনিষ্ঠ ক্রিকেটার এবং চার সাংবাদিক বন্ধুকে আগাম খবর দিয়েও মন্ত্রগুপ্তির শপথ করিয়ে নেন। অন্য অনেকেই এই সময়টায় লাগামহীন প্রচার উপভোগ করত। কিন্তু যে মানুষটা সামরিক ছাউনির ভিতর বিয়ে করেছিল মিডিয়াকে দূরে রাখবে বলে, বন্ধুদের ধাক্কাধাক্কি ছাড়া যে বিয়ের জমকালো পার্টিও দিতে রাজি হচ্ছিল না, তার কাছে এটাই স্বাভাবিক। মানুষটা তো সব সময় নিজের দর্শন অনুযায়ী অনাবেগী ‘পিকচার পারফেক্ট’ থাকতে চেয়েছে। নাটক নয়, বিশ্বাসী থেকেছে ব্রিটিশ ‘আন্ডার স্টেটমেন্টে’।
শ’খানেক টিভি ক্যামেরার সামনে ভারতীয় জার্সিতে নাটকীয় বিদায়। চমকপ্রদ কিছু উদ্ধৃতি আজকের দিনে আরও চিত্তাকর্ষক প্যাকেজ হতে পারত। দ্রাবিড় সভ্যতা অনুযায়ী তিনি ঠিক যেমনটা চেয়েছেন, বরাবরের মতো তেমনই বিপরীতমুখী স্রোতে থেকেছেন। স্যুট-টাই পরে লিখিত বিবৃতি হাতে এমন অবসর ভারতীয় ক্রিকেট কখনও দেখেনি। দেখেনি কাউকে অবসরের পরেও বিশেষ সাক্ষাৎকারের যাবতীয় প্রস্তাব ফিরিয়ে দিতে। ঠিক মধ্যবিত্ত যে দর্শন নিয়ে ক্রিকেট মাঠে এসেছিলেন। জীবনের কোনও সিঁড়িতে ওঠার জন্য যার সঙ্গে আপস করেননি। সেটাই অক্ষত রেখে গেলেন খেলোয়াড় জীবনের অন্তিম দিনেও।
কিন্তু দ্রাবিড় নিজের আবেগই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, মানুষের সেন্টিমেন্ট আটকে রাখার শক্তি তাঁর মধ্যে কোথায়? ভারতীয় ক্রিকেট তো অভূতপূর্ব একটা জিনিস দেখল দ্রাবিড়ের অবসরকে কেন্দ্র করে। বেঙ্গালুরুতে তিনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট পাশে বসে থাকা অবস্থায় রিটায়ার করলেন বেলা সাড়ে বারোটায়। আর তার আগের দিন কি না সন্ধে সাড়ে ছ’টায় সচিন তেন্ডুলকর মুম্বই থেকে তাঁর প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে দিলেন মিডিয়ায়। হোলির সকালে সচিন-রাহুল কথা হয়। রাহুল জানান তাঁর সিদ্ধান্ত। তার পরেই সবচেয়ে বেশি সেঞ্চুরি পার্টনারশিপ দোসরের চলে যাওয়া সম্পর্কে এমনই অভিভূত হয়ে পড়েন সচিন যে চিরকালের আইন মেনে চলা নির্বিরোধী তিনি প্রতিক্রিয়া পাঠিয়ে দেন নিজে। খেয়ালও করেননি বোধহয় যে রাহুলের নিজেরই তো ঘোষণা করা হয়নি। সচিন তেন্ডুলকর নিজে এসএমএস করে মিডিয়ায় আগাম তাঁর প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন, এমন অবিশ্বাস্য কিছু রাহুলের অবসর ঘিরেই প্রথম ঘটল!
অঙ্ক শাস্ত্রে দু’জনই মহা গৌরবজনক মিনার। কী দেশে, কী বিদেশে। যত দিন ক্রিকেট খেলা হবে, তত দিন ম্তম্ভিত হয়ে মানুষ মাপতে চাইবে। আর কোনও তল পাবে না। সচিনের গড় দেশে ৫৬.৩৭, বিদেশে ৫৪.৭৪। রাহুলের দেশে ৫১.৩৫, বিদেশে ৫৩.০৩। তাঁর ৩৬ সেঞ্চুরির ২১টাই বিদেশে। ১৯৯৯ থেকে ২০০৫, এই সময়ের মধ্যে মোট ছ’বার যে আইসিসি-র এক নম্বর ব্যাটসম্যান থেকেছেন, সেটা মুখ্যত বিদেশে রান করার জন্য। গত ক্যালেন্ডার বর্ষে ১১৪৫ রান করে বিশ্বের সর্বোচ্চ রানকারী হওয়ার ভিত্তিস্থলও সেই বিদেশ। বিদেশে গত দশ বছরে যত কঠিন ম্যাচ ভারত জিতেছে, তাতে অনিবার্য ভাবে রাহুলের মর্যাদাজনক অংশগ্রহণ অবশ্য শর্ত হিসেবে থেকেছে। অ্যাডিলেডের ডাবল, হেডিংলের ১৪৮, সাবাইনা পার্কের ৮১ আর ৬৮, রাওয়ালপিন্ডির ২৭০। ক্রিকেট বিশ্লেষকের আবেগহীন কাটাছেঁড়ায় সময় সময় তেন্ডুলকরের জিনিয়াসকে ছাপিয়ে উঠে এসেছে মেহনতী দ্রাবিড়ের ম্যাচ জেতানোর দক্ষতা।
অথচ পারস্পরিক সহাবস্থানে একটা অলিখিত শর্ত যেন সব সময় থেকে গিয়েছে। সচিন চিরকালীন এক, রাহুল চিরকালীন দুই। সচিন বর, রাহুল নিতবর। সচিন মহানায়ক, রাহুল পার্শ্বনায়ক। অনবদ্য সব পারফরম্যান্স-পারফরম্যান্সেও জাতিগত এই বৈষম্যকে হারাতে পারেননি রাহুল। ঘনিষ্ঠরা এই নিয়ে অনুযোগও করেছে, তুমি এত কিছু করার পরেও মিডিয়া দেখে না। একটু নিজের প্রচারটা বোঝো না। রাহুল পাত্তাই দেননি। কর্ণ থেকে আরও ভাল কর্ণ হওয়ার নিরন্তর চেষ্টা চালিয়ে গিয়েছেন। অর্জুনের গাণ্ডীবের দিকে কখনওই হাত বাড়াননি। তাঁর জীবনদর্শনই থেকেছে তুমি যদি যোগ্য হও, অপেক্ষা করো, ন্যায়বিচার কোনও না কোনও দিন পাবে। সহ-খেলোয়াড়দের সাফল্যে চোখ টাটাতে যেও না। অধিনায়ক দ্রাবিড় অবশ্য সিস্টেম সংস্কারের আমূল চেষ্টা করেছেন। চেয়েছেন ব্যক্তিপুজো থামিয়ে সিস্টেমকে অগ্রাধিকার দেওয়ার। সেই যুদ্ধে ব্যর্থ হয়ে কোনও সাংবাদিক সম্মেলন ডাকেননি। পরিচিত সাংবাদিককে ডেকে খবরও খাওয়াননি। নীরবে বোর্ডকে একটা চিঠিও পাঠিয়ে দিয়েছেন। বারমুডা ট্র্যাঙ্গেলের মতোই ভারতীয় ক্রিকেটের অমীমাংসিত এবং অজ্ঞাত সব রহস্যের মধ্যে এটা শীর্ষস্থানীয় যে একুশ বছর পরে ইংল্যান্ডে সিরিজ জিতে ওঠা অধিনায়ক কেন ইস্তফা দিয়েছিল? রাহুল ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছেন, সত্যি কথা আরও বিতর্কের জন্ম দিত। অনেক লাভাস্রোত তৈরি হত। প্রয়োজন নেই সেই ভূমিকম্পের। তার চেয়ে তিনি নিজেকে বলি দিতে রাজি আছেন।
চরিত্র হিসেবে সৌরভ অনেক আকর্ষণীয়। অনেক দৃপ্ত, আরও ডাকাবুকো, আপাদমস্তক কপিবুক বিরোধী। ফিল্মের উপাদান হিসেবে সৌরভ-রাহুলে কোনও প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হবে না। সৌরভ যদি নম্বর তোলার প্র্যাকটিক্যাল পেপার হন, রাহুল আপাত দৃষ্টিতে নীরস তত্ত্ব-কথা।
কিন্তু যে তাঁর দুনিয়ায় ঢুকেছে সে-ই জানে, ওই আপাত নীরস কাঠামোর ভিতর রোমান্সের ভরপুর শাঁস লুকিয়ে রয়েছে। বিরাট কোহলিরা হতে পারেন রাহুল বংশধর। কিন্তু সেই প্রজন্মের মুখে ক্রিকেটলিখিয়ে কি কোনও দিন শুনবে, “কুৎসিত সেঞ্চুরিগুলোই আমার সবচেয়ে প্রিয়। কারণ ওগুলো এসেছে পরিস্থিতির সঙ্গে প্রচণ্ডতম লড়াই করে। ওই লড়াইটাই তো রোমান্স। ওই জঘন্য, হতকুচ্ছিত খেলতে খেলতেও রান বানানো। যে দিন দারুণ খেলছি, ছন্দে আছি সেদিন তো আর কঠিন উল্টো হাওয়ার সঙ্গে লড়তে হয় না। সে দিন জেতার মজা কি আর এক হতে পারে নাকি?” আর কেউ শুনবে? “কলম্বোয় ব্যাগ ফেললাম আর সেই ব্যাগটা পরের দিন অ্যাডিলেডে আমার হোটেল ঘরের সামনে চলে এল, এটা জীবন নয়। ওটা কৃত্রিম। জীবন হল কনভেয়ার বেল্ট থেকে আমি নিজে নিজের লাগেজ তুলে টানতে টানতে পরিবারের সঙ্গে হাঁটছি।”
দিনের শেষে রাহুল দ্রাবিড়ের কাহিনি তাই আপাদমস্তক এক মধ্যবিত্ত কর্মীর। গড়পড়তা পেশাদারের চেয়ে যার প্রতিভা সামান্য বেশি। কিন্তু যার স্বপ্ন অফুরান। উচ্চাশাকে যে মাস্তুল করে পরিবেশ থেকে উদ্ধার চেয়েছিল। চেয়েছিল প্রতিভার সীমাবদ্ধতাকে মেনে নিয়েই নিজের স্বপ্নে হাত রাখতে। কিন্তু সেই দৌড়ে কখনও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দেয়নি। কখনও নিজের সাবেকি মূল্যবোধের সঙ্গে আপস করতে চায়নি। কখনও কার্যকারিতার আগে দেখনদারিকে বসায়নি। নির্ভরতার আগে স্বীকৃতি দেয়নি সৌন্দর্যকে। সচিন জন্মাবধি ভারতীয় ক্রিকেটের ঝাড়লন্ঠন। সুদৃশ্য সব আয়না। ক্রিস্টালের ঝকমকানি। ইন্টিরিয়রের চমক। সবই তিনি। তাই দেশি বিদেশি সবার কাছে প্রথম আদৃত। রাহুল হলেন সেই বাড়ির নিভৃতে থাকা ফিউজ বক্স আর ইলেকট্রিশিয়ান দুটোই। যে কাজ করলে কারও খেয়াল পড়ে না। কাজ না করলেই বিশৃঙ্খলা, হাহাকার আর মিস্ত্রির খোঁজে ব্যাকুল হয়ে পড়া। আজকের জাতীয় শোক তারই প্রতীক। এত দিন ছিল বোঝা যায়নি। এখন লোকের আচম্বিতে মনে পড়ছে, তিন নম্বরে বিষ বোলিং আর চরম মেঘলা পরিস্থিতি সামলাবে কে? প্যাভিলিয়ন থেকে ওই লোকটাই তো বেরোবে না যে ব্যাটিংয়ে ফিউজ তার মিস্ত্রির কাজটা করত।
মধ্যবিত্ত হয়ে যাত্রা শুরু করেছিলেন। প্রাচীর হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েও ছিলেন নির্ভরযোগ্য মধ্যবিত্ত। যার উপর নির্ভর করা যায়, গ্ল্যামারের জন্য বাজি ধরা যায় না। বিদায়বেলার প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, সেই মেহনতী প্রজার জন্যই ক্রিকেট জনতার একুশ গান স্যালুট এসে হাজির হল। একুশ তোপধ্বনি ভারতে মাত্র পাঁচ মহারাজ পান। আধুনিক ক্রিকেটে পান একমাত্র সচিন। রাহুলের নীরব বিবৃতি প্রমাণ করল ঠিক পথে চললে, প্রজাও মহারাজকীয় মর্যাদা নিয়ে শেষ করতে পারে।
অবসরের এটাই সবচেয়ে বড় হ্যান্ডআউট।
|