সম্পাদকীয় ১...
পুতিন পুনর্বার
তৃতীয় বারের জন্য রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পদে নির্বাচিত হইয়াছেন ভ্লাদিমির পুতিন। চার বছরের মেয়াদে দুই দফায় মোট আট বছর প্রেসিডেন্ট থাকার পর বশংবদ দিমিত্রি মেদভেদেভকে সেই পদে বসাইয়া পুতিন নিজে দেশের প্রধানমন্ত্রী হন, যাহাতে চার বছর পর পুনরায় প্রেসিডেন্ট পদে ফিরিয়া আসিতে পারেন। তাঁহার সংশোধিত রুশ সংবিধান এ ভাবেই তাঁহাকে ‘গণতান্ত্রিক’ উপায়ে দীর্ঘ কাল ধরিয়া দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা হইবার অধিকার দিতে থাকিবে। কিছু কিছু এশীয় বা লাতিন আমেরিকান স্বৈরতন্ত্রের মতো রাশিয়ার গণতন্ত্রও এই ভাবে পুতিনকে কার্যত আজীবন বা আমৃত্যু দেশশাসনের অধিকার দিয়া যাইবে। অথচ গত ৪ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রুশ পার্লামেন্ট ‘দুমা’র নির্বাচনেই পুতিনের দল ইউনাইটেড রাশিয়া পার্টির জনসমর্থনের ভিত্তি আল্গা হওয়ার সঙ্কেত মেলে এবং দল জয়ী হইলেও তাহার বিরুদ্ধে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ তোলেন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকগণ। রাশিয়ার বিভিন্ন শহরে প্রচণ্ড শীত ও তুষারপাত উপেক্ষা করিয়াও হাজার-হাজার মানুষ পুতিনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ দেখান এবং রুশ পুলিশ ও নিরাপত্তারক্ষীরা কঠোর ভাবে তাহা দমনও করে।
এ সবই দেখাইয়া দেয়, শহুরে মধ্যবিত্ত শ্রেণির এক উল্লেখযোগ্য অংশ ভ্লাদিমির পুতিনের শাসনে ক্লান্ত, বীতশ্রদ্ধ, বিরক্ত ও হতাশ। তাঁহারা এমনও দাবি তুলিতেছেন, পুতিন ছাড়া আর যে-কেহ শাসনকর্তা হউন। পুতিন যে তাঁহাদের বাধিত করিবেন না, তাহা বলাই বাহুল্য। তিনি সোভিয়েত জমানার অভ্যাস মতো এই যাবতীয় প্রতিবাদ ও বিক্ষোভকে পশ্চিমী ‘সাম্রাজ্যবাদের ষড়যন্ত্র’ আখ্যা দিয়াছেন। সোভিয়েত গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি-র প্রাক্তন প্রধানের পক্ষে ইহার অধিক উচ্চতর কোনও ভাবনা বোধহয় সম্ভবও নয়। তবে ৬৪ শতাংশ ভোট পাইয়া তাঁহার এ বারের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়া লইয়াও প্রশ্ন উঠিয়াছে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ জনাদেশ প্রতিফলিত করার প্রক্রিয়ায় সরকারি অন্তর্ঘাতের প্রশ্ন। পুতিন সে সব উড়াইয়া দিয়াছেন। তবে শিক্ষিত মধ্যশ্রেণি যে তাঁহার প্রতি বিরূপ, তাহা উপলব্ধি করিতে তাঁহার অসুবিধা হয় নাই। এই শ্রেণিই একদা জারের রাশিয়ায় বলশেভিক বিপ্লব ঘটাইয়াছিল, ভবিষ্যতেও এই শ্রেণি বিষয়ে সতর্ক থাকা দরকার। তাই এক ধাক্কায় পুতিন সরকারি কর্মচারী, সৈনিক, শিক্ষক ও চিকিৎসকদের বেতন-ভাতা ও পেনশনের পরিমাণ কয়েক গুণ বাড়াইবার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু রুশ অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল নয়। তাহার মোট জাতীয় আয়ের ৪০ শতাংশই সরকারি খাতে ব্যয়িত হয়। পুতিনের প্রাক্-নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করিতে হইলে বার্ষিক বাজেটে আরও ১৬ হাজার কোটি ডলারের সংস্থান করিতে হইবে। কাজটি সহজ নয়। তাই মধ্য শ্রেণিকে তুষ্ট রাখিতে গিয়া পুতিন যে-সব আশ্বাস দিতেছেন, তাহা শেষাবধি কতটা পূরণ হইবে, বলা কঠিন।
সত্য, আপাতত পুতিন মোটের উপর নিষ্কণ্টক। কিন্তু গণতন্ত্রের ক্ষেত্রটি প্রসারিত করার জন্য তাঁহার উপর চাপ উত্তরোত্তর বাড়িতেই থাকিবে। অন্নবস্ত্রের সংস্থান হইলেই মানুষ সুখী ও নিরাপদ হয় না। তাহার আরও কিছু নাগরিক অধিকারের দাবি থাকে। ক্রমশ সে দাবি বাড়িতে থাকে। চিন্তার স্বাধীনতা, মনন ও সৃষ্টির স্বাধীনতা, কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ জানাইবার স্বাধীনতা, এমনকী জমানা বদলের সম্ভাবনা লইয়া প্রকাশ্যে আলোচনা ও প্রচারের স্বাধীনতাও গণতান্ত্রিক অধিকারের মধ্যে পড়ে। রাশিয়ায় এই স্বাধীনতা বা অধিকারগুলি খুব সুলভ, এ কথা বলা যাইবে না। অথচ ইউরোপীয় সংস্কৃতি ও চেতনাবিশ্বের ঐতিহ্যগত উত্তরাধিকার ও ঘনিষ্ঠ নৈকট্যের কারণে শিক্ষিত, পরিশীলিত রুশ মানসিকতাও বহুত্ববাদী ইউরোপীয় সত্তার অংশীদার হইয়া উঠিতে চায়। এশীয় স্বৈরাচারীর মতো পুতিনের আচরণ, ঘুরিয়া-ফিরিয়া, কলমে-বকলমে নিজেকেই রাষ্ট্রক্ষমতার কর্তৃত্বে অধিষ্ঠিত করার তাঁহার প্রয়াস রুশ জনগণের কাছে দীর্ঘ কাল গ্রহণযোগ্য না হইতে পারে। তাহার লক্ষণগুলি এখনই প্রকাশমান। সততার সহিত গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে অগ্রসর না হইলে সঙ্কট আরও বাড়িতে পারে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.