আগুন জ্বলছিল ময়দানে, জঞ্জালের স্তূপে। সেই ধোঁয়া মেট্রোর সুড়ঙ্গে ঢুকে আতঙ্ক ছড়াল যাত্রীদের মধ্যে।
শুক্রবার দুপুর সওয়া ১২টা নাগাদ পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের সুড়ঙ্গ থেকে গলগল করে ধোঁয়া বেরোতে দেখে দমদমগামী ট্রেনের চালকও ভয় পেয়ে ট্রেন থামিয়ে দেন। আমরি হাসপাতালের মতো কাণ্ড ঘটেছে ভেবে আতঙ্কে ট্রেন থেকে নেমে দৌড়তে শুরু করেন বহু যাত্রীই। এর জেরে পদপিষ্ট হওয়ার মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়। পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে দু’দিকের ট্রেন চলাচল সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দেন মেট্রো রেল-কর্তৃপক্ষ।
তড়িঘড়ি ধোঁয়ার উৎস খুঁজতে বেরোন মেট্রোর ইঞ্জিনিয়ারেরা। শেষে জানা যায়, ময়দান এলাকায় জওহরলাল নেহরু রোডের ধারে জমে থাকা জঞ্জালে আগুন ধরানো হয়েছিল। সেই আগুনের ধোঁয়া এসপ্ল্যানেড এবং পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের মাঝখানে মেট্রোর ‘ভেন্টিলেশন’ যন্ত্র মারফত সুড়ঙ্গে ঢুকে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। সপ্তাহখানেক আগে একই রকম ঘটনা ঘটেছিল পার্ক স্ট্রিট ও ময়দান স্টেশনের মাঝখানে। সে বারও ময়দান এবং পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের মাঝে জওহরলাল নেহরু রোডের পাশে এমনই একটি ‘ভেন্টিলেশন’ যন্ত্র দিয়ে ধোঁয়া ঢুকেছিল সুড়ঙ্গে। |
এ দিন বড় দুর্ঘটনার হাত থেকে রেহাই পেলেও বারবার এমন ঘটায় যাত্রীদের প্রশ্ন, ভেন্টিলেশন যন্ত্রের পাশে রাস্তার জঞ্জালে আগুন ধরানো রুখতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ?
কী ঘটেছিল এ দিন? যাত্রীরা জানান, দমদমমুখী ওই ট্রেনে ওঠা-নামার নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও পার্ক স্ট্রিট থেকে ট্রেনটি এসপ্ল্যানেডের দিকে রওনা না-হওয়ায় প্রথমে মনে করা হয়েছিল, যান্ত্রিক গোলমাল হয়েছে। হঠাৎ দেখা যায়, ওই ট্রেনটির সামনের দিক থেকে বেশ কিছু যাত্রী নেমে উপরে ওঠার সিঁড়ির দিকে ছুটছেন। পোড়া গন্ধও নাকে আসে। যাত্রীদের কেউ কেউ বলতে থাকেন, সম্ভবত ট্রেনের সামনের দিকের কোনও কোচে আগুন লেগেছে। সেই সময়েই দেখা যায়, ক্রমেই ধোঁয়াচ্ছন্ন হয়ে পড়ছে ট্রেনের সামনের দিক। চালকও বুঝতে পারছেন না, ধোঁয়ার উৎস কোথায়। কয়েক জন যাত্রী ট্রেন থেকে নেমে চালককে জিজ্ঞাসা করেন, ট্রেন ছাড়তে দেরি হচ্ছে কেন। চালককে বলতে শোনা যায়, “কোথা থেকে ধোঁয়া আসছে, তা না বুঝে ট্রেন ছাড়ব কী করে?” ততক্ষণে প্ল্যাটফর্মে মেট্রোর অফিসার ও নিরাপত্তারক্ষীদের ছোটাছুটি শুরু হয়ে গিয়েছে। আতঙ্কিত যাত্রীদের অনেকেই ট্রেনের দরজা খোলা পেয়ে প্ল্যাটফর্ম ধরে দৌড়তে থাকেন উপরে ওঠার জন্য। তাড়াহুড়োয় পদপিষ্ট হওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়।
ইতিমধ্যে পার্ক স্ট্রিট স্টেশনে মাইকে মেট্রো-কর্তৃপক্ষ ঘোষণা করেন, পার্ক স্ট্রিট ও এসপ্ল্যানেড স্টেশনের মধ্যে মেট্রো চলাচল সাময়িক ব্যাহত হয়েছে। যাত্রীরা যেন সহযোগিতা করেন। ঠিক কী হয়েছে, তা জানতে একদল যাত্রী ট্রেনটির সামনের দিকে গিয়ে ভিড় করেন। দেখা যায়, ট্রেনের ভিতরে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু এসপ্ল্যানেড স্টেশনের দিকে এগোনোর সুড়ঙ্গ পুরোপুরি ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছে। এর কিছু পরে ফের মাইকে ঘোষণা করা হয়, পরিস্থিতি স্বাভাবিক না-হওয়া পর্যন্ত মেট্রো চলাচল করবে দমদম থেকে গিরিশ পার্ক এবং ময়দান থেকে কবি সুভাষ স্টেশন পর্যন্ত। দুপুর সাড়ে ১২টার পরে স্বাভাবিক হয় মেট্রো চলাচল। তবে, এই বিভ্রাটের জেরে আরও বেশ কিছুক্ষণ ট্রেনের সময়সূচিতে গণ্ডগোল চলতে থাকে।
রাস্তার ধারের জঞ্জাল বা ময়দানের শুকনো পাতায় আগুন ধরানো বন্ধ করতে কী ব্যবস্থা নিচ্ছেন মেট্রো-কর্তৃপক্ষ? মেট্রো রেল সূত্রের খবর, ধর্মতলা বা পার্ক স্ট্রিট এলাকায় ভেন্টিলেশন যন্ত্রগুলি যে সব জায়গায় বসানো রয়েছে, সেই সব জায়গায় কারা আবর্জনা ফেলে যাচ্ছে বা শুকনো পাতা জড়ো করে আগুন ধরাচ্ছে তার কোনও নজরদারিই নেই। ফলে এমন যে আর ঘটবে না, তার কোনও নিশ্চয়তা এখনই দেওয়া যাচ্ছে না।
তবে, মেট্রোর ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার (সাধারণ) প্রত্যুষ ঘোষ বলেন, “আগুন ধরানো কী করে বন্ধ করা যায়, সে ব্যাপারে পুরসভা ও কলকাতা পুলিশের সঙ্গে যৌথ ভাবে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।” |