বাজারে ঢুকবে ৪৮ হাজার কোটি
ফের নগদ জমার অনুপাত কমাল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক
সুদের হার কমানো নয়। ঝিমিয়ে পড়া শিল্পোৎপাদন তথা বৃদ্ধির হারকে চাঙ্গা করতে ফের নগদ জমার অনুপাত হ্রাসের পথেই হাঁটল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। গত দেড় মাসে এই নিয়ে দ্বিতীয় বার।
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের কাছে বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কগুলির এই নগদ জমার অনুপাত ক্যাশ রিজার্ভ রেশিও বা সিআরআর নামে পরিচিত। শুক্রবার এক ঝটকায় যা আরও ৭৫ বেসিস পয়েন্ট নামিয়ে আনার কথা ঘোষণা করল দেশের শীর্ষ ব্যাঙ্ক। ফলে, আগের ৫.৫% থেকে কমে তা দাঁড়াল ৪.৭৫ শতাংশে। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের দাবি, এর ফলে ব্যাঙ্কগুলির হাতে আসবে আরও ৪৮ হাজার কোটি টাকা। যা ঋণ দিতে ব্যবহার করতে পারায় নগদের জোগান বাড়বে বাজারে। চাঙ্গা হবে দেশের অর্থনীতি। প্রত্যাশিত ভাবেই রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এই ঘোষণাকে স্বাগত জানিয়েছে শিল্পমহল।
এই একই লক্ষ্যে গত ২৪ জানুয়ারিও সিআরআর ৫০ বেসিস পয়েন্ট কমিয়েছিল রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। যার দৌলতে ইতিমধ্যেই বাজারে ঢুকেছে ৩২ হাজার কোটি টাকা। ফলে এ বার আরও ৪৮ হাজার কোটি বাজারে আসায় দেড় মাসের মধ্যেই মোট ৮০ হাজার কোটি টাকার জোগান বাড়ল বাজারে। আপাতত নগদের চাহিদা মেটাতে এই অঙ্ক যথেষ্ট বলেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের দাবি।
এক দিকে, মূল্যবৃদ্ধির অসুর দমন। অন্য দিকে, আর্থিক বৃদ্ধির গতি তরান্বিত করার তাগিদ। এই দু’য়ের ভারসাম্য খুঁজতে গিয়ে শীর্ষ ব্যাঙ্ক যে সহজে রেপো রেট (স্বল্পকালীন মেয়াদে ব্যাঙ্কগুলি রিজার্ভ ব্যাঙ্কের থেকে যে সুদে ঋণ পায়) বা রিভার্স রেপো রেট (বাণিজ্যিক ব্যাঙ্কের থেকে রিজার্ভ ব্যাঙ্ক যে হারে ঋণ নেয়) বাড়াবে না, তা মনে করছিলেন অনেকেই। তাই প্রত্যাশিতই ছিল নগদ জমার অনুপাত হ্রাস।
কিন্তু আগামী ১৫ মার্চ যেখানে ঋণনীতি ঘোষণার দিন নির্ধারিত রয়েছে, সেখানে আচমকা এ দিনই এই পদক্ষেপ কেন? ইউকো ব্যাঙ্কের প্রাক্তন এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর ও ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞ বি কে দত্ত-র মতে, “এ ধরনের সিদ্ধান্ত যখন দরকার, ঠিক তখনই তা নেওয়া জরুরি।” কেন এই ঘোষণা এখনই জরুরি ছিল, তা স্পষ্ট এলাহাবাদ ব্যাঙ্কের এগ্জিকিউটিভ ডিরেক্টর দেবব্রত সরকারের কথাতেই। তিনি জানান, “ব্যাঙ্কগুলির হাতে নগদ টাকার অভাব দেখা দিয়েছিল। তাই প্রয়োজন ছিল সিআরআর কমানো।”
বিশেষজ্ঞদের মতে, নগদের ওই অভাব কতটা প্রকট, তা স্পষ্ট ‘কল মানি’র চড়া সুদের হার থেকেই। বহু ক্ষেত্রে সম্পদ ও দায়ের ভারসাম্য রাখতে একটি ব্যাঙ্ক অন্য আর একটি ব্যাঙ্কের থেকে এক-দু’দিনের জন্য যে ঋণ নেয়, তা-ই কল মানি। সম্প্রতি ওই ঋণে সুদ ১১% ছাড়িয়েছে। যা যথেষ্ট উঁচু বলেই মত ব্যাঙ্ক কর্তাদের।
একই সঙ্গে দেবব্রতবাবু মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “আগামী ১৫ মার্চ আগাম আয়কর জমা দেওয়ার শেষ দিন। ফলে এখনই টাকার জোগান না-বাড়ালে, আরও তীব্র হত নগদের সমস্যা। তা মাথায় রেখেই শীর্ষ ব্যাঙ্কের এই পদক্ষেপ।”
রিজার্ভ ব্যাঙ্কের এ দিনের ঘোষণা উস্কে দিয়েছে তার সুদ কমানোর জল্পনাকেও। কেউ কেউ মনে করছেন, ১৫ মার্চ সুদ কমাতে পারে শীর্ষ ব্যাঙ্ক। কিন্তু বি কে দত্ত-সহ অধিকাংশ ব্যাঙ্কিং বিশেষজ্ঞেরই ধারণা, সেই সম্ভাবনা যথেষ্ট কম। অবশ্য পর পর দু’বার সিআরআর কমায় ঘুর পথে সুদ হ্রাসের সুযোগ তৈরি হতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। কারণ, এখন ব্যাঙ্কগুলির হাতে আসছে ৮০ হাজার কোটি টাকা। যা ফেলে রাখার বদলে ঋণ দেওয়ার কাজে ব্যবহার করতে পারবে ব্যাঙ্কগুলি। তাই এ বার সুদ কিছুটা কমিয়েও ওই টাকা ঋণ হিসাবে খাটাতে ব্যাঙ্কগুলি আগ্রহী হবে। বিশেষত শিল্প-ঋণের চাহিদা বাড়াতে ব্যাঙ্কগুলি এই পথে হাঁটতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। তবে এখনও পর্যন্ত সুদ হ্রাসের ইঙ্গিত দেয়নি কোনও ব্যাঙ্ক।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.