পশ্চিমবঙ্গের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিধি তৈরি হতে চলেছে লিংডো কমিশনের সুপারিশ সামনে রেখেই। সেই বিধি তৈরির লক্ষ্যে উচ্চশিক্ষা সংসদের গড়া কমিটির চেয়ারম্যান, তথা কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সুরঞ্জন দাস বুধবার এ কথা জানিয়ে বলেন, এ জন্য ইতিমধ্যে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ)-এর ছাত্র সংসদ নির্বাচনের বিধি চেয়ে পাঠানো হয়েছে।
লিংডো কমিশনের সুপারিশের মূল লক্ষ্য ছিল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে হিংসা ও রাজনৈতিক দলাদলি বন্ধ করা। এ ব্যাপারে ২০০৬-এ গুরুত্বপূর্ণ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। কিন্তু এখনও পশ্চিমবঙ্গে তার কিছুই কার্যকর হয়নি। বরং দীর্ঘ কালের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে রাজ্যের প্রায় প্রতিটি কলেজে ছাত্র নির্বাচন কার্যত সাধারণ নির্বাচনের চেহারা নিয়েছে। অভিযোগ, নামে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হলেও প্রায় সব ক্ষেত্রে নেপথ্যের কারিগর হয়ে দাঁড়ান বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা। রাজনৈতিক পালাবদলের পরেও সে ঐতিহ্যে ছেদ পড়েনি।
শিক্ষাপ্রেমীদের অনেকেই মনে করছেন, ছাত্র সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে দলীয় রাজনীতির প্রত্যক্ষ যোগাযোগ বন্ধ না-হলে হিংসায় লাগাম টানা কঠিন। যে বিষয়টা মাথায় রেখে লিংডো কমিশনও বলেছিল, ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের কোনও রকম যোগ থাকা চলবে না। কলেজে-কলেজে নির্বাচন ঘিরে লাগাতার হাঙ্গামার প্রেক্ষিতে রাজ্য সরকার ফের লিংডো-সুপারিশের ভিত্তিতে ছাত্র সংসদ ভোট-বিধি তৈরির কথা ঘোষণা করে। যে কারণে উচ্চশিক্ষা সংসদ কমিটি গড়েছে। কমিটির চেয়ারম্যান সুরঞ্জনবাবু এ দিন বলেন, “লিংডো কমিশনের সুপারিশ নিয়ে কমিটি ভাবনা-চিন্তা শুরু করেছে। তার সুপারিশের ভিত্তিতে বিধি বানিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচন করেছে জেএনইউ। ওদের কাছে সেই বিধি চেয়েছি। ওড়িশার কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়েও লিংডো-সুপারিশ মানা হয়। সেখানকার রেজিস্ট্রারদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে।”
সুরঞ্জনবাবু জানান, ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি নিয়ে কমিটিতে আলোচনা হবে। তাঁর কথায়, “কমিটির তৈরি নিয়ম মেনে ছাত্র সংসদ নির্বাচন হবে আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে। এই এক বছরে সব দিক দেখে, ভেবেচিন্তে নিয়ম তৈরি হবে।” |
লিংডোর সুপারিশ |
• ছাত্র সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের সংস্রব নয় |
• নির্বাচনের সময় বহিরাগতদের প্রবেশ নিষেধ |
• পরীক্ষায় অকৃতকার্য পড়ুয়া প্রার্থী নয় |
• প্রার্থী হতে ক্লাস-হাজিরা চাই অন্তত ৭৫ শতাংশ |
• ফৌজদারি বা বিশ্ববিদ্যালয় আইনে সাজা হলে প্রার্থী নয় |
• স্নাতক স্তরের প্রার্থীর বয়স ১৭-২২ বছর |
• স্নাতকোত্তরে বয়সের ঊর্ধ্বসীমা ২৪/২৫ বছর |
• পদাধিকারী হতে এক বার, কার্যকরী সমিতির জন্য দু’বার ভোটে লড়া যাবে |
• পঠনপাঠনে ব্যাঘাত ঘটিয়ে প্রচার নয় |
• পোস্টার হবে হাতে লেখা, সাঁটতে হবে নির্দিষ্ট জায়গায় |
• নির্বাচনের ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে খুলে ফেলতে হবে পোস্টার |
• বিধি ভাঙলে শাস্তি: ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা, দু’বছর পর্যন্ত জেল |
|