কমছে বেসরকারি বাস, বিপাকে যাত্রীরা
লকাতা এবং শহরতলির পথে বেসরকারি বাসের সংখ্যা কমছে। গণ-পরিবহণের এই বেহাল দশায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। বাস মালিকদের একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, গত কয়েক মাসে কলকাতার রাস্তায় অন্তত ৪০ শতাংশ বাস বন্ধ হয়ে গিয়েছে। জেলায় বন্ধ হয়েছে ৩০ শতাংশ বাস। ভাড়া না বাড়ালে বেসরকারি বাস ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে বলে আশঙ্কা মালিকদের। বাস কমে যাওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই ভোগান্তি বাড়ছে সাধারণ মানুষের।
সে কথা জানেন পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র। কিন্তু সমস্যা সমাধানে উপায়? মন্ত্রীর দাওয়াই, “রাস্তায় আরও বেশি সংখ্যায় সরকারি বাস নামাব। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আরও সরকারি বাস রাস্তায় নামানো হবে।”
নিজস্ব চিত্র
তবে প্রায় দেউলিয়া হয়ে যাওয়া সরকারি পরিবহণ সংস্থার বাস রাস্তায় নামালে বেসরকারি বাসের অভাব মিটবে কি না, সেই সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। কিন্তু বাস মালিকদের সবচেয়ে বড় অভিযোগ, ডিজেলের দাম ক্রমাগত বাড়তে থাকলেও ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও কথা শুনতেই রাজি হচ্ছে না সরকার। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে এ পর্যন্ত ডিজেলের দাম বেড়েছে সাত বার। তার ফলে কলকাতা শহরে বাস চালাতে প্রতি দিন প্রায় আটশো টাকা বাড়তি খরচ করতে হয়। বাস মালিকদের সংগঠন ‘জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস্’-এর যুগ্ম সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বাস চালানোর খরচ রোজই বেড়ে যাচ্ছে। অথচ সরকার ভাড়া বাড়ানোর ব্যাপারে কোনও কথা শুনতেই রাজি নয়। এ ভাবে চললে কারও পক্ষেই বাস রাস্তায় বার করা সম্ভব নয়।” যে গাড়ি এক বার বসে যাচ্ছে, সেটি মেরামত করে আর রাস্তায় নামাতে আগ্রহী হচ্ছেন না মালিকেরা।
কেবল ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি নয়, বাসে যাত্রী সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলেও আয় কমেছে। ১৯৯০ সালে গঠিত প্রবুদ্ধনাথ রায়ের নেতৃত্বধীন কমিটি জানিয়েছিল, বাসকে লাভজনক করতে গেলে প্রতি দিন অন্তত ১৪৫০ জন যাত্রী বহন করতে হবে। তপনবাবুর বক্তব্য, “এখন বাসে সারা দিনে ৬০০ থেকে ৬৫০ জনের বেশি যাত্রী হয় না। এত কম যাত্রী নিয়ে বাস লাভজনক করা সম্ভব নয়।” বাসে যাত্রী কমে যাওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে তপনবাবু বলেন, “শহর এবং মফস্সলে এখন এত রকমের বিকল্প পরিবহণের ব্যবস্থা হওয়ায় বাসের যাত্রী কমছে।” কলকাতায় অটো মিটারে না চালিয়ে নির্দিষ্ট রুটে চালানোর ফলেও বাস কম যাত্রী পাচ্ছে বলে মনে করেন তিনি। বেশির ভাগ জায়গাতেই অটো চলে বাসের রুট ধরে। যার ফলে বাসের যাত্রীদের একটি বড় অংশ অটো ব্যবহার করেন।
নতুন একটি সমস্যাও নাজেহাল করছে বাস মালিকদের। সম্প্রতি খুচরো পয়সার অভাব তীব্র হওয়ায় বাস মালিকদের তা সংগ্রহ করতে হচ্ছে চড়া হারে ‘বাটা’ দিয়ে। তপনবাবু জানালেন, এক একটি বাসের জন্য প্রতি দিন প্রায় আড়াইশো টাকা ‘বাটা’ গুণতে হয়। তপনবাবু বললেন, “আরও বড় সমস্যা হল পুলিশের জুলুম। প্রত্যেকটি বাসকে মাসে চার থেকে ছ’হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হয় পুলিশকে।” তপনবাবুর বক্তব্য, নানা অজুহাতে পুলিশ বাসের কাছ থেকে জরিমানা আদায় করে। কিন্তু পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেছেন, “বাস চালাতে হবে নিয়ম মেনে। কোনও রকম বেচাল হলে জরিমানা দিতেই হবে। বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে আইন কঠোর করা হবে।”
জেএনএনইউআরএম প্রকল্পে যত বাস রাস্তায় নেমেছিল, তার ৪০ শতাংশই বসে গিয়েছে। তপনবাবু জানালেন, “ওই বাসগুলির ইঞ্জিন অনেক শক্তিশালী বলে তেল খায় বেশি। তা ছাড়া ওই বাসের সামনের কাচ ভাঙলে তা বদলাতে প্রায় ৪২ হাজার টাকা লেগে যায়। সামগ্রিক ভাবে ওই বাসের রক্ষণাবেক্ষণের খরচও বেশি। মদনবাবু বলেন, “যাঁরা কিস্তির টাকা মেটাচ্ছেন না বা বাস বন্ধ করে দিয়েছেন, তাঁদের বাস নিয়ে নেবে রাজ্য সরকার।”
আদালতের রায়ে রাজ্য সরকার পুরনো গাড়ি বাতিলের প্রক্রিয়া আবার শুরু করলে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ আরও বাড়বে বলে অশঙ্কা করেছেন তপনবাবু। ২০০৯ সালে ১৫ বছর বা তার বেশি পুরনো প্রায় দু’হাজার বাস বাতিল করে রাজ্য সরকার। তার পরে পুরনো বাস বাতিলের প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু সম্প্রতি হাইকোর্ট আবার রাজ্যকে পুরনো গাড়ি বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করতে বলেছে। কাজ এখনই শুরু করতে হবে। কিন্তু তা শুরু হলে আরও অন্তত চার হাজার বাস বাতিল হয়ে যাবে বলে মনে করছেন সিন্ডিকেটের ওই কর্তা।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.