এএফসি চ্যালেঞ্জ কাপ
রঙিন কাঠমান্ডুতে স্বস্তিতে নেই ভারত
রাজা বীরেন্দ্রর রক্তাক্ত সেই নারায়ণহিতি রাজপ্রাসাদ এখন মিউজিয়াম। তার সামনের শান্ত বড় রাস্তায়, কয়েক পা অন্তর ল্যাম্পপোস্টে ঝুলছে শেপ ব্লাটারের হাসিমুখের হোর্ডিং। “ফিফা প্রেসিডেন্ট, আপনাকে নেপালে স্বাগত!”
বৃহস্পতিবারই চার পাহাড় ঘেরা কাঠমান্ডুতে অতিথি ব্লাটার।
রাজপ্রাসাদের সামান্য দূরে থামেল। হিপিদের আমল থেকে কাঠমান্ডুতে বিদেশিদের ঠেক এখানেই। পুরো অঞ্চলটা ওয়াই ফাই জোন। বিকেল ছটা পর্যন্ত থামেলের রাস্তায় রং মেখে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন অজস্র বিদেশি। স্থানীয়দের সঙ্গে সারা দিন হোলি চলেছে। স্থানীয় তরুণীরাও সাইকেলে ঘুরছেন সন্ধ্যের দিকে। রং করা মুখ।
কাঠমান্ডুতে উৎসবের পরিবেশ। পুলিশের কর্তারা উচ্ছ্বসিত, এত শান্ত হোলি নাকি সাম্প্রতিক কালে হয়নি এখানে।
স্যাভিও মিদেইরা, সুনীল ছেত্রী, রহিম নবিরা ওই উৎসবের মেজাজ উপভোগ করার জায়গায় নেই।
এ এফ সি চ্যালেঞ্জ কাপ শুরুর আগের দিন ভারতের জন্য দুশ্চিন্তাই থাকছে! স্যাভিও থেকে শুরু করে প্রতিযোগিতার সব কোচ যে দলটাকে ফেভারিট ধরছেন, সেই উত্তর কোরিয়া অনেক বিশ্বকাপার নিয়ে হাজির এখানে। যাদের অনেকে ধর্তব্যে রাখছিল না, সেই ফিলিপাইন্সে অনেক ইউরোপে খেলা ফুটবলার। জার্মানি, ইংল্যান্ড, নেদারল্যান্ডস, আয়ার্ল্যান্ডে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে চেনা নাম ফুলহ্যামে খেলা গোলকিপার নীল অ্যাথেরিস। এবং দুটো দেশই ভারতের গ্রুপে।
সুনীল-নবি: ভারতের দুই ভরসা
আপাতত এ দুটো দেশ নিয়ে না ভাবলেও চলবে। শুক্রবার সামনে রাশিয়ান অঞ্চলের দল তাজিকিস্তান। মাস পাঁচেক আগে জাপানের কাছে ৮ গোলে হেরে বসনিয়ার কোচ কেমাল আলিসপাহিচকে গত মাসেই এনেছে তারা। চার বছর আগে দিল্লিতে এদেরই ৪-১ হারিয়ে চ্যালেঞ্জ কাপ চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল হাউটনের ভারত। এ বার এত সহজ হবে না।
হোলির দিন ললিতপুরে নেপাল ফুটবল ফেডারেশনের মাঠে ভারতের প্র্যাক্টিসে যে এগারো জন ছিলেন, সেটা জেনারেশন ওয়াইয়ের ভারত। মাঝমাঠে স্পোর্টিং ক্লুবের আদিল খান, সালগাওকরের ফ্রান্সিস ফার্নান্ডেজ, রোকাস লামেরে, ডেম্পোর অ্যান্টনি পেরিরাপুরোদস্তুর গোয়ান মাঝমাঠ। রেনেডি, ক্লাইম্যাক্স, স্টিভন, ক্লিফোর্ডএত দিন যে নামগুলো পরিচিত ছিল, সব ধুয়ে মুছে সাফ। বদলে নতুন মুখ।
দেখেশুনে মনে হচ্ছে, এই অনভিজ্ঞ মাঝমাঠের উপরই নির্ভর করছে স্যাভিওর ভারতের ভাগ্য। সামনে ও পিছনে তবু পরিচিতরা। সুনীল, সুশীল। গৌরমাঙ্গি, রাজু, নবি, সমীর। ভারতীয় কোচ সাংবাদিকদের বলছিলেন, “ডিফেন্সের শেপটা নষ্ট করা চলবে না। ভিডিওতে উজবেকিস্তান আর কোরিয়ার সঙ্গে তাজিকিস্তানের ম্যাচ দেখেছি। ওরা প্রতি আক্রমণে খেলে।” হাউটনের মুখে দলের ‘শেপ’ কথাটা বারবার শোনা যেত। তাঁর দীর্ঘ দিনের সহকারী স্যাভিও তো তাতে জোর দেবেনই।
দলে এত নতুন মুখ যখন, ভারতীয় মিডিয়ার সমস্ত উৎসাহ শুষে নিচ্ছেন দুটো পরিচিত মুখ। সুনীল ছেত্রী ও রহিম নবি। ভারতের এগারোয় একমাত্র বাঙালি প্রতিনিধি নবি এ দিন সাংবাদিকদের সামনে একটা কথা বলেছেন, যা বলার লোভ সামলানো যাচ্ছে না। নবিই এই দলে একমাত্র ফুটবলার, যিনি মনের কথা প্রাণ খুলে বলে দিতে পারেন। তাঁর কথায়, “শুক্রবার আমরা মনস্তাত্ত্বিক দিক দিয়ে এগিয়ে থাকব। ওরা চার বছর আগে আমাদের কাছে হেরেছে। ওটাই ওদের মাথায় ঘুরবে।” এত অনভিজ্ঞ তরুণ নিয়ে সমস্যা হবে না? নবি ডিফেন্সে বল ক্লিয়ার করার স্টাইলে সটান জবাব দেন, “ক্লাব পর্যায়ে সবাই একসঙ্গে এত খেলেছি, মিলে মিশে খেলা সমস্যা হবে না।”
নিজেকে তাতানোর জন্য এই মরসুমের সেরা বাঙালি ফুটবলার পরিবেশ পাচ্ছেন নিজের মতো। সন্ধে থেকে লোডশেডিং। কাঠমান্ডুর রেস্তোরাঁয় শ্রেয়া ঘোষাল, মোহিত চৌহানের গান সহযোগে ভারতীয় খাবার পাওয়া যাচ্ছে। রাস্তায় দোকানে একেবারে ভারতীয় স্টাইলে ডাকাডাকি, দরাদরি। প্রচুর ভারতীয় ট্যুরিস্ট। সংগঠকদের মধ্যেও তো ভারতীয় স্পর্শ থাকছে।
ইস্টবেঙ্গলে খেলে যাওয়া গণেশ থাপা দীর্ঘ দিন নেপাল ফুটবল সংস্থার প্রেসিডেন্ট। মাঝে রাজনৈতিক পালাবদলে, নেপালের সর্বকালের সেরা ফুটবলারের গদি যাচ্ছিল। এখন তিনি গুছিয়ে নিয়েছেন। নেপালের মাটিতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এই কাপের বাজেট শুনলে ভারতের ফুটবল কর্তারা হেঁচকি তুলবেন। ৬ কোটি টাকা। তার মধ্যে নেপাল সরকার দিয়েছে ১ কোটি। রঙ্গশালা স্টেডিয়াম সাজাতে চিন সরকারের অর্থ সাহায্য নিয়েছেন গণেশরা। সবার উপরে বৃহস্পতিবার উদ্বোধনী দিনে ব্লাটারকে পাশে পাওয়া গণেশের বাড়তি পাওনা।
গণেশের মানের একটা স্ট্রাইকারই যদি স্যাভিওর ভারতে থাকত! সুনীল প্র্যাক্টিসে বাড়তি দৌড় ঝাঁপ করছিলেন ভাইচুংয়ের মতো। তবে পুরনো চোট নিয়ে কিন্তু কিন্তু ভাব আছেই। তার পরে তো আবার পাশে সুশীল সিংহ! এখনও অ্যাটাকিং থার্ডে যিনি সুশীল বালক। হায়, গণেশ থাপাকে তো এঁরা খেলতে দেখেননি!




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.