এ বার আর লক্ষ্য সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় নন, বীরেন্দ্র সহবাগ। তাঁর হাবভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলার পাশাপাশি মহেন্দ্র সিংহ ধোনির প্রশংসায় পঞ্চমুখ গ্রেগ চ্যাপেল। তাঁর মতে, ধোনি একেবারেই অ-ভারতীয় মনোভাবাপন্ন এবং ভারতের ক্রিকেট সংস্কৃতির জন্য ধ্বংসের দিকে চলে যাচ্ছেন। নিজের বই ‘ফিয়ার্স ফোকাস’-এর প্রচার সম্পর্কিত এক অনুষ্ঠানে ভারতীয় সংস্কৃতিকেও কড়া আক্রমণ করেছেন চ্যাপেল।
টেস্ট ক্রিকেট এবং ভারত: অস্ট্রেলিয়া সফরের গোড়া থেকেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছিল, ভারতীয়রা টেস্ট খেলতে আগ্রহী নয়। যেই অস্ট্রেলিয়া বোঝাতে শুরু করল ওরা কঠিন ঠাঁই, তখন ভারতীয়রা ধরা পড়ে গেল। ওদের দেখে আমি খুব হতাশ হয়েছি। ওদের সঙ্গে কাজ করেছি, ড্রেসিংরুমে থেকেছি বলে জানি, ওদের অনেকের কাছে টেস্ট ক্রিকেটটা বড্ড শক্ত পরীক্ষার মতো। ওরা ২০ ওভারের ক্রিকেট খেলে অনেক টাকা করতে পারে, সঙ্গে ৫০ ওভারের ক্রিকেটটা বড় জোর সঙ্গী হিসেবে থাকবে।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে তফাত: ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া প্রতি বছর স্রেফ টেস্ট ক্রিকেটার তোলার জন্য ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামে ২ কোটি ডলার খরচ করে। ভাল টেস্ট দল গড়ার জন্য উপযুক্ত বিনিয়োগ করতে হয়। টেস্ট ক্রিকেটের চাই শক্তিশালী ভারতীয় দল। এটা ভারতীয় বোর্ডকে বুঝতে হবে।
ভারতীয় সংস্কৃতি: এই সংস্কৃতির মুশকিল হল এটা ‘টিম কালচার’ নয়। টিমে নেতা নেই কারণ ভারতে নেতা তৈরি করা হয় না। শৈশবে এখানে বাবা-মা সব সিদ্ধান্ত নেন। স্কুল শিক্ষকরা সব সিদ্ধান্ত নেন। পরে ক্রিকেট কোচেরা সব সিদ্ধান্ত নেন। আপনি একটু অন্য রকম কিছু বলতে গেলে আপনাকে থামানো হবেই। আপনাকে শেষ করে দেওয়া হবে। কাজেই এখানে নীতি হল, মাথা নত করে থাকো এবং কোনও দায়িত্ব নিও না। ব্রিটিশরা মাথা নিচু করে রাখার ব্যাপারটা খুব ভাল শিখিয়েছে ভারতীয়দের। কেউ দায়িত্ব নিয়ে ভুল করলেই তাকে শাস্তি দেওয়া হয়। কাজেই কেউ দায়িত্ব নিতে চায় না।
ধোনি এবং অধিনায়কত্ব: ধোনি ভারতীয় সংস্কৃতির মধ্যে একেবারে অন্য রকম। অ-ভারতীয়। আমি যে সব তরুণের সঙ্গে কাজ করেছি, ধোনি তাদের মধ্যে অন্যতম আকর্ষনীয়। ও যখন ভারতীয় দলে এসেছিল, তখনই জানতাম এক জন নেতা তৈরি হতে যাচ্ছে। ও এমন এক জন যে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। নিজের কথাটা জানাতে পারে। সিনিয়রদের ওদের অবস্থানটা বোঝাতে পারে। ধোনি সাম্প্রতিক কালে ভারতীয় ক্রিকেটের সেরা ঘটনা। এই সফরে ওর সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়নি। দেখে মনে হল মাঠে যে ধোনিকে দেখছিলাম, তাকে আমি চিনি না। ভারতীয় ক্রিকেটের সিস্টেম ওকেও শেষ করছে। বিশেষ করে তিন ধরনের ক্রিকেটে অধিনায়ক করে। মনে রাখতে হবে ভারত অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ৫০ শতাংশ বেশি ক্রিকেট খেলে। এবং ধোনি টানা খেলে যাচ্ছে।
সহবাগের উচ্চাশা: সহবাগ ভেবেছিল অনিল কুম্বলের পর ওর ক্যাপ্টেন হওয়া উচিত। এই নিয়ে একটা সংঘাত ছিলই। ধোনি এখন ক্রমাগত খেলে এমন একটা জায়গায় পৌঁছেছে যেখানে টেস্ট খেলা দিন দিন ওর কাছে কঠিন হয়ে যাচ্ছে। সেখানে ড্রেসিংরুমের চোরাস্রোত ওকে আদৌ সাহায্য করছে না। সহবাগ ও জাহিরের হাবভাব একেবারেই ভাল নয়। এতে টিমের ক্ষতি হচ্ছে।
টেস্ট ক্রিকেটের ভবিষ্যৎ: তিনটে ফর্ম্যাটের মধ্যে টেস্ট ক্রিকেটই সঙ্কটে। দশ বছর পরে টেস্ট ক্রিকেট সম্ভবত একেবারে অন্য রকম হয়ে যাবে। যারা টেস্ট দেখে বড় হয়েছি এবং এই ফর্ম্যাটকে সম্মান করি, তারা হতাশ হবে। |