সদর-শহর মেদিনীপুরকে যানজট মুক্ত রাখতে পথে নামল বাস মালিকদের সংগঠন। পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভা যে কাজটা করবে করবে করেও করে না বলে অভিযোগ, যার ফলে নাভিশ্বাস ওঠে পথে বেরোনো মানুষেরসেই কাজটা, শহরবাসীকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার দায়িত্ব সাময়িক ভাবে হলেও হাতে তুলে নিল বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এবং বাস ব্যবসায়ী সমিতি। বাস-মালিক সংগঠনের সদস্যরা প্রতিটি মোড়ে মাইক নিয়ে প্রচার করছেন, কোথায় বাস থামবে, কোথায় থামবে না। সেই সঙ্গে ব্যাজ পরে হাতে লাঠি নিয়ে মোড়ে-মোড়ে যানও সামলাচ্ছেন তাঁরা। নির্দিষ্ট জায়গায় যাতে বাস থামে সেই নির্দেশ দিচ্ছেন। কেউ ভুলে অন্যত্র থামলে সরিয়ে দিচ্ছেন। |
সংগঠনের জেলা সম্পাদক মৃগাঙ্ক মাইতির বক্তব্য, “আমরা একটা উদ্যোগ নিয়ে দেখলাম যে চেষ্টা করলে এই শহরকে জ্যাম থেকে মুক্ত রাখা যায়। আমাদের সংগঠনের যা সামর্থ্য তা দিয়ে বড় জোর টানা এক সপ্তাহ এই কাজ করতে পারি। ফের কিছু দিন পর করা যেতে পারে। পুলিশ-প্রশাসন-পুরসভা না এগিয়ে এলে কিন্তু নিয়মিত আমাদের পক্ষে এই কাজ করা কঠিন।” আর বাস ব্যবসায়ী সমিতির নেতা শিবু সরখেলের আশ্বাস, “এই উদ্যোগ ধরে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাব।”
বাস মালিক সংগঠনের এই উদ্যোগে খুশি প্রশাসন ও পুরসভা। মেদিনীপুরের মহকুমাশাসক সুরজিৎ রায় বলেন, “সব দিক দিয়েই চেষ্টা চালানো হচ্ছে যাতে শহরকে যানজট মুক্ত রাখা যায়। এ নিয়ে বৈঠকও হয়েছে। ১৩ মার্চ ফের বৈঠক হবে।” যানজট আটকাতে হলে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ প্রয়োজন। কিন্তু ট্রাফিক-নিয়ন্ত্রণে বেশি কর্মী দেওয়া সম্ভব নয় বলে জেলা পুলিশ জানিয়েছে। পুরসভা সিদ্ধান্ত নিয়েছিল স্বেচ্ছাসেবী নিয়োগ করবে। যাঁদের যান নিয়ন্ত্রণের প্রশিক্ষণ দেবে পুলিশ। যদিও তা-ও কার্যকর হয়নি। পুরপ্রধান প্রণব বসুর বক্তব্য, “স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগের বিষয়টি বোর্ড মিটিংয়ে বাতিল হয়ে যাওয়ায় তা করা যায়নি। পরে পুলিশের সঙ্গে কথা হয়েছিল যে বিভিন্ন এলাকায় কোথায় বাস দাঁড়াবে, কোথায় রিকশা স্ট্যান্ড, কোথায় অটো থামবে লেখা বোর্ড লাগাতে হবে। আমরা বোর্ড তৈরি করে পুলিশকে দিয়েছি।” বোর্ডে লেখা নির্দেশ না মানলে ব্যবস্থা নেওয়ারও কথা ছিল। কিন্তু সে-সব বোর্ডও এখনও রাস্তায় দেওয়া হয়নি!
যত দিন যাচ্ছে মেদিনীপুর শহর ততই যানজটের ফাঁসে আটকে যাচ্ছে। এক দিকে রাস্তা দখল করে রয়েছে হকার, তার সঙ্গে সাইকেল, রিকশা, মোটর সাইকেল, বাস, লরি ও পথচারী। প্রতিদিনই বাড়ছে গাড়ির সংখ্যা। শহরের গতি রুদ্ধ হয়ে আসছে। শহরকে যানজটের ফাঁস থেকে মুক্ত করে গতি আনার জন্য বারে বারেই মহকুমাশাসক বৈঠক করেছেন। একাধিকবার নানা সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু বাস্তবায়িত হয়নি। সম্প্রতিও বৈঠক হয়েছে। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়, সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত শহরে মালবাহী লরি ঢুকবে না। কেবলমাত্র সরকারি প্রয়োজনে বা গণবণ্টন ব্যবস্থার প্রয়োজনে গাড়ি ঢুকতে পারে। মঙ্গলবার থেকেই যা কার্যকর হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু নির্দেশ অমান্য করে এখনও লরি ঢুকছে! এরই মধ্যে ভাল খবর বাস মালিক সংগঠনের সদস্যদের উদ্যোগ। |