|
|
|
|
সিবিআই মামলার অস্বস্তি তবু কাটছে না মুলায়মের |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
লখনউয়ের কুর্সি কংগ্রেসকে ছাড়াই দখল করলেও মুলায়ম সিংহ যাদবের নিয়ন্ত্রণ এখনও কেন্দ্রীয় সরকারের হাতেই থাকছে। মুলায়মের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির মামলা এখনও ঝুলে রয়েছে। সুতরাং এই অভিনন্দনের ঢেউয়ের মধ্যেও নিশ্চিন্ত হতে পারছেন না সমাজবাদী পার্টির প্রধান। মুলায়ম শিবির অবশ্য যুক্তি দিচ্ছে, মানুষের বিপুল ভোট পেয়ে উত্তরপ্রদেশে ক্ষমতায় এসেছে দল। তাই চাইলেও কংগ্রেস এখন তার ‘পুরনো অস্ত্র’ ব্যবহারের সাহস দেখাবে না।
পাঁচ বছর আগে সিবিআইকে মুলায়ম ও তাঁর পরিবারের হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তির তদন্ত করার নির্দেশ দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। সিবিআই সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল, শুধু মুলায়ম নয়, তাঁর দুই ছেলে অখিলেশ-প্রতীক এবং অখিলেশের স্ত্রী ডিম্পলেরও প্রচুর হিসাব বহির্ভূত সম্পত্তি থাকার প্রমাণ মিলেছে। ১৯৯৭ সালে মুলায়ম যখন প্রথম রাজ্যের মন্ত্রী হন, তখন তাঁর ব্যাঙ্কে ছিল মাত্র ১২ হাজার টাকা। ১০ বছর পরে ২০০৭ সালে তাঁর ঘোষিত সম্পত্তির পরিমাণ দাঁড়ায় ২ কোটি ২০ লক্ষ টাকা। তাই আরও তদন্ত করা প্রয়োজন। সুপ্রিম কোর্টকে তার নির্দেশ পর্যালোচনার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন অখিলেশ। তাঁর যুক্তি ছিল, কেন্দ্র সিবিআইকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে। কিন্তু আদালতে নিজেদের ‘স্বাধীন সংস্থা’ বলে দাবি করে সিবিআই। আদালত তখন সিবিআইকে কেন্দ্রের কাছে প্রাথমিক তদন্ত রিপোর্ট জমা দিতে বলে।
রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, এর পরে যখনই কেন্দ্রে মুলায়মের সাহায্য প্রয়োজন পড়েছে, তখনই এই সিবিআই-অস্ত্রকে কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস। মায়াবতীর বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের দুর্নীতির মামলাকেও বসপা-র বিরুদ্ধে কাজে লাগিয়েছে কংগ্রেস। তাই উত্তরপ্রদেশের মাটিতে মায়াবতী বনাম কেন্দ্র দ্বৈরথ চললেও, সতীশ মিশ্রকে দিল্লিতে এসে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের সঙ্গে বৈঠক করতে হয়েছে। আবার রাহুল গাঁধী যখন উত্তরপ্রদেশে গিয়ে মায়াবতী-মুলায়মকে আক্রমণ করেছেন, তখন সংসদে স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি নিয়ে পিএসি-র বৈঠকে মনমোহন-সরকারকে সাহায্য করেছেন সপা ও বসপা-র সাংসদরা।
উপকারের ‘প্রতিদান’ অবশ্য কংগ্রেসও দিয়েছে। ২০০৮-এ পরমাণু চুক্তির বিরোধিতা করে বামেরা সমর্থন তুলে নিলে আস্থা ভোটে মনমোহন-সরকারকে বাঁচিয়ে দেন মুলায়মই। দলের ৩৯ জন সাংসদের সমর্থন নিয়ে কংগ্রেসের পাশে দাঁড়িয়ে সরকারের পতন রুখে দেন। এর পরে ওই বছরই ডিসেম্বরে সর্বোচ্চ আদালতে তাদের ২০০৭ সালের বিবৃতি তুলে নেওয়ার আবেদন জানায় সিবিআই। সিবিআই যুক্তি দেয়, মুলায়ম ও তাঁর পরিবারের সম্পত্তির মূল্যায়ন করতে গিয়ে হিসেবের গরমিল হয়েছিল।
কিন্তু সেই আবেদনের ভিত্তিতে সুপ্রিম কোর্ট নিজের আদেশ ‘সংরক্ষিত’ রেখেছিল। এখনও সে বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি সর্বোচ্চ আদালত। যে বেঞ্চে এই মামলা চলছিল, তার এক জন বিচারপতিও অবসর নিয়েছেন। ফলে নতুন করে শুনানি হবে মামলার।
এখন প্রশ্ন উঠেছে, মুলায়মের ক্ষমতা বৃদ্ধির পর তাঁকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সিবিআই আবার ডিগবাজি খাবে না তো? সপা নেতাদের অবশ্য আশা, এই বিপুল জনাদেশের পরে কেন্দ্র আর তা করার চেষ্টা করবে না। কিন্তু তা শুধুই আশা। কেন্দ্র তথা কংগ্রেসকে পুরোপুরি ভরসা তারা করে উঠতে পারছে না। |
|
|
|
|
|