|
|
|
|
আস্থা মনমোহনেই, তবু রাহুলের পথও খোলা রাখলেন সনিয়া |
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
সরকারের মধ্যমেয়াদে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে মনমোহন সিংহকে সরিয়ে দেওয়ার জল্পনা আজ সপাটে খারিজ করে দিলেন কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। গত কাল ভোট বিপর্যয়ের পর সনিয়া বরং আজ জানিয়ে দিলেন যে, মনমোহনের পরিবর্তে এখনই রাহুল গাঁধীকে প্রধানমন্ত্রী করার ‘কোনও প্রশ্নই ওঠে না’। তবে একই সঙ্গে রাহুলের সম্ভাবনার দরজাও খোলা রেখেছেন কৌশলী সনিয়া। ২০১৪ সালে দল অন্য কাউকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করে ভোটে যাবে কি না, সে প্রশ্নের জবাব তাই এড়িয়ে গেলেন তিনি। শুধু এটুকুই বললেন, “আমরা তো এখন ২০১২-এ দাঁড়িয়ে রয়েছি। ২০১৪-র আগে অনেক সময় বাকি।”
উপর্যুপরি দুর্নীতির অভিযোগ, মূল্যবৃদ্ধি, শরিক সঙ্কট-সহ কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের শতেক ঝঞ্ঝাটের পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে মনমোহনকে সরিয়ে দেওয়া নিয়ে অনেক দিন ধরেই জল্পনা অব্যাহত। মনমোহনের ‘রাজনৈতিক কর্তৃত্বের অভাব’ নিয়ে দলেরই একটা অংশের অসন্তোষ সেই জল্পনাকে জোরদার করে এসেছে। দেখাই যাচ্ছে, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি, জাতীয় সন্ত্রাস দমন কেন্দ্র গঠনের মতো একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আটকে রয়েছে স্রেফ শরিকি বাধায়। তারও আগে অণ্ণা হাজারের আন্দোলন সামলাতে রীতিমতো নাকানিচোবানি খেয়েছে কেন্দ্র। এই পরিস্থিতিতে সরকারে একটা বড়সড় ঝাঁকুনি দেওয়া দরকার বলে সওয়াল করছিলেন কংগ্রেস নেতৃত্বেরই একাংশ। আর তাই দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ এই নেতারা ইদানীং প্রকাশ্যে বা ঘরোয়া আলোচনায় বারবারই রাহুলের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বিষয়টি নিয়ে সওয়াল করছিলেন। তাঁরা এ-ও বলতে শুরু করেছিলেন যে, উত্তরপ্রদেশে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস সফল হলে তাঁর উত্তরণ অনিবার্য হবে।
এমন আলোচনার আবহেই এসে যায় পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন, যাকে ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটের ‘সেমিফাইনাল’ বলে মনে করছিলেন রাজনীতিবিদরা। কিন্তু সেই সেমিফাইনালেই গত কাল বিপর্যয় ঘটে কংগ্রেসের। আজ তা নিয়েই দলের সদর দফতরে ময়না-তদন্তে বসেছিলেন সনিয়া। তার পর তিনি সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করা হয় কংগ্রেস সভানেত্রীকে।
জবাবে সনিয়া এখনই প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের জল্পনা খারিজ করে দেন ঠিকই, কিন্তু পরে ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেসের একাধিক শীর্ষ নেতা আজ বলেছেন, পরিবর্তনের সম্ভাবনা যে একেবারে ছিল না তা-ও নয়। আসলে উত্তরপ্রদেশের ফলাফলই রাহুলের অনুকূলে গেল না। উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ভাল ফল করলেই কিন্তু রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করার দাবিতে দলের সদর দফতরে উপচে পড়ত সমর্থকদের ভিড়। উত্তরপ্রদেশে দলের বিপর্যয়ের পর সেই সম্ভাবনা সাময়িক ভাবে হলেও ধাক্কা খেয়েছে। যদিও রাহুলের পাশে দাঁড়িয়ে সনিয়া আজ বুঝিয়ে দিয়েছেন, এই বিপর্যয় সাময়িক। উত্তরপ্রদেশে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা জানিয়ে বোঝাতেও চেয়েছেন যে রাহুল ব্যর্থ হননি। রাজনীতিতে ওঠাপড়া থাকে। ২০১৪-র আগে সময় রয়েছে।
দলের আর এক শীর্ষ নেতার কথায়, উত্তরপ্রদেশ এবং পঞ্জাবে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রে যে রাজনৈতিক অস্থিরতা তৈরি হয়েছে তা-ও রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করার পক্ষে অনুকূল নয়। বিরোধীরা তো বটেই, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো শরিক নেতারাও সর্বভারতীয় স্তরে কংগ্রেসের উপর চাপ বাড়াতে মুখিয়ে রয়েছেন। ফলে এই অবস্থায় রাহুলকে প্রধানমন্ত্রী করার ঝুঁকি কেনই বা নেবেন সনিয়া!
বরং হাইকম্যান্ডের কাছে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের চেয়ে আসন্ন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনই বড় চিন্তার বিষয় হয়ে উঠতে চলেছে বলে মনে করছেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। উত্তরপ্রদেশে মুলায়ম সিংহের সরকার কেন্দ্রের ওপর নির্ভরশীল থাকলে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে কংগ্রেসের পছন্দসই প্রার্থীর জেতা সহজ হতে পারত। কিন্তু পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে কংগ্রেসকে এখন এক সর্বজনগ্রাহ্য নেতাকে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রার্থী করতে হবে, যাঁকে মায়া-মুলায়ম-মমতা-সহ ইউপিএ-র সমস্ত শরিক-সমর্থক দলের নেতারা মেনে নেবেন। ফলে প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তনের মতো বড় ‘ঝাঁকুনি’ এখনই না দিলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে কার্যত নতুন করেই ঘুঁটি সাজাতে হবে সনিয়া গাঁধীকে। |
|
|
|
|
|