|
|
|
|
উত্তরপ্রদেশের ফলে হতাশ হলেও গডকড়ীর সাফল্যই দেখছে সঙ্ঘ |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
উত্তরপ্রদেশে স্বপ্নভঙ্গ হওয়ায় দলে প্রশ্নের মুখে পড়লেও আরএসএস নেতৃত্ব এখনই আস্থা হারাচ্ছেন না নিতিন গডকড়ীর উপরে। বিজেপি সভাপতির উত্তরপ্রদেশ-নীতি নিয়ে আগে থেকেই প্রশ্ন উঠছিল দলে। এখন তো লালকৃষ্ণ আডবাণী, সুষমা স্বরাজ, নরেন্দ্র মোদীরা আরও সরব হওয়ার সুযোগ পাবেন তাঁর বিরুদ্ধে। উত্তরপ্রদেশের ফল নিয়ে অসন্তোষ দানা বাধছে আরএসএসেও। সংগঠনের নেতৃত্ব তবু গডকড়ীর সাফল্যের দিকগুলিই সামনে রাখছেন আপাতত।
আরএসএসের শীর্ষ নেতৃত্বের সঙ্গে সমন্বয় রেখেই পাঁচ রাজ্যের নির্বাচনী কৌশল তৈরি করেছিলেন গডকড়ী। তাই উত্তরপ্রদেশে খারাপ ফলের দায়টাও একা তাঁর ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়া সম্ভব নয় তাঁদের পক্ষে। বরং গডকড়ীর সুরেই সঙ্ঘের শীর্ষ নেতারা এখন বলছেন, উত্তরপ্রদেশে মেরুকরণের ভোটে প্রত্যাশিত ভোট খুইয়েছে বিজেপি। সেখানে ফল খারাপ হলেও গডকড়ীর নেতৃত্বেই কংগ্রেসের থেকে গোয়া ছিনিয়ে নিয়েছে বিজেপি। পঞ্জাবে সরকার টিকিয়ে রাখা গিয়েছে। ভোটের আগে উত্তরাখণ্ডে মুখ্যমন্ত্রী বদল করে বিজেপি ভাল টক্করও দিয়েছে। ফলে এক রাজ্যের ফল খারাপের জন্য গডকড়ীর নেতৃত্বকে লঘু করে দেখার কোনও অর্থ হয় না। আরএসএসের শীর্ষ নেতা দত্তাত্রেয় হোসাবলে মনে করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে উত্তরপ্রদেশে খুব বেশি প্রত্যাশা ছিল না।
কিন্তু সঙ্ঘ নেতৃত্ব যা-ই বলুন, বিজেপির মতো আরএসএসের নেতারাও ঘরোয়া স্তরে বলছেন, দু’বছর আগে গডকড়ীকে সভাপতি করা হয়েছে। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ভোটের প্রস্তুতি শুরু হল মাত্র তিন মাস আগে। কম সময়ে কেল্লা ফতে করতে ‘শর্টকাট’ পদ্ধতি নিলেন তিনি। দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত বাবুসিংহ কুশওয়াহাকে দলে আনলেন ওবিসি ভোট টানতে। ফল প্রকাশের পর দেখা গেল, ওবিসি ভোট বিজেপির ঝুলিতে পুরতে ব্যর্থ হয়েছেন কুশওয়াহা। মায়াবতীর দল থেকে বিতাড়িত অন্য নেতারাও হেরে গিয়েছেন। ফলে কাজের কাজ তো কিছু হলই না, উল্টে দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিজেপি যে আন্দোলন চালাচ্ছিল, আঁচ পড়ল তাতেও।
প্রশ্ন উঠছে উমা ভারতীকে ঠিকমতো কাজে না লাগানো নিয়েও। দু’বছর আগে থেকে দলে ফেরার চেষ্টা করছিলেন উমা। যখন তাঁকে আনা হল, দলের নেতাদের কোন্দলে মুখ্যমন্ত্রী পদের প্রার্থী করা গেল না। যারা এতে বাদ সাধলেন তাঁরাও ভোটে কিছু করে দেখাতে পারলেন না। তা ছাড়া, দল এগিয়েছে স্রেফ শ’খানেক আসনের লক্ষ্যে। কংগ্রেসকে তৃতীয় স্থানে উঠতে না দেওয়াটাই যেন প্রধান উদ্দেশ্য হয়ে উঠেছিল। বিজেপি সরকার গড়বে, এমন কোনও বার্তা কখনওই যায়নি ভোটারদের কাছে। ভোটাররাও তাই বিজেপিকে সমর্থন করে ভোট নষ্ট করেননি। উচ্চবর্ণ থেকে ওবিসি ভোট, সবই গিয়েছে মুলায়মের ঝুলিতে। লড়াই যেখানে মায়াবতী ও মুলায়মের মধ্যে, তখন কংগ্রেসের সঙ্গে টক্কর নিতে যাওয়াটা যে ভুল হয়েছে, তা প্রমাণিত হয়েছে।
আরএসএস শিবিরের বক্তব্য, সঙ্ঘের আশীর্বাদ নিয়েই সভাপতি হয়েছেন গডকড়ী। তবে অন্যান্য রাজ্যের মতো উত্তরপ্রদেশেও ভাল ফল করলে দলে গডকড়ীর ওজন বাড়ত। মুখরক্ষা হত আরএসএসেরও। এ বছরের শেষে সভাপতি পদে গডকড়ীর মেয়াদ বৃদ্ধির পথও সুগম হত। বিজেপি ও আরএসএসের সমন্বয়কারী নেতা রামলালের বক্তব্য, “কর্মীদের মনোবল বাড়ানো ও কংগ্রেসকে চাপে রাখার জন্য উত্তরপ্রদেশে অন্তত ৮০ আসন পাওয়া দরকার ছিল। কিন্তু বিজেপির পক্ষে ফল খুবই হতাশার।”
ভোটের ফল বেরোনোর পর আরএসএস নেতৃত্বের এখন দাওয়াই, ২০১৪-র লোকসভা ও তার আগে বিভিন্ন রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি শুরু করে দেওয়া উচিত এখন থেকেই। এ বছরের শেষে হিমাচলপ্রদেশ ও গুজরাতে এবং পরের বছর রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় ও দিল্লিতে বিধানসভা নির্বাচন রয়েছে।
সঙ্ঘের এক নেতার কথায়, “গরম আসার ঢের আগেই দোকানিরা যেমন এয়ারকন্ডিশনার, কুলার, পাখা মজুত করে রাখেন, সেটাই কৌশল হওয়া উচিত। এই দৌড়ে যাঁরা এগিয়ে থাকবেন, তাঁরাই ভাল ব্যবসা করবেন। ২০০৯-এ উত্তরপ্রদেশে মুলায়মের দুর্গেই যখন তাঁর পুত্রবধূ ডিম্পল যাদব লোকসভা উপনির্বাচনে হারলেন, তখন থেকেই অখিলেশরা বিধানসভার প্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। আজ তার ফল পাচ্ছেন তাঁরা।” |
|
|
|
|
|