|
|
|
|
সমন্বয়ের নির্দেশ দিলেন সনিয়া |
শরিক-সমর্থকদের মন জয়ের তোড়জোড় শুরু |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের ভোট-বিপর্যয়ের পর কেন্দ্রে রাজনৈতিক অস্থিরতার আশঙ্কায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ শরিক নেতৃত্বের সঙ্গে আরও আলোচনা এবং সমন্বয় রক্ষা করে চলার নির্দেশ দিলেন সনিয়া গাঁধী। সরকার ও দলের শীর্ষ নেতারা তা ভাল মতো করতে পারলে শরিকদের সমর্থন অটুট থাকবে বলেই ‘আশা’ করছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। তাৎপর্যপূর্ণ হল, আজ সনিয়া এক দিকে যখন এই দিগ্নির্দেশ দিয়েছেন, তখনই গোর্খাল্যান্ড আঞ্চলিক প্রশাসন গঠনে জিটিএ বিলে সই করেছেন রাষ্ট্রপতি প্রতিভা পাটিল।
এই বিলে কেন্দ্র যাতে দ্রুত ছাড়পত্র দেয় সে জন্য সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে আর্জি জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মনমোহন তাঁকে আশ্বাসও দিয়েছিলেন। কিন্তু পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল প্রকাশের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই জিটিএ বিলে ছাড়পত্র দেওয়াকে সুষ্ঠু শরিকি সম্পর্ক বজায় রাখার চেষ্টা হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
গত কাল উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের বিপর্যয়ের চিত্র স্পষ্ট হওয়া মাত্র কেন্দ্রে ইউপিএ সরকারের অস্থিরতার বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে। কংগ্রেসের আশা ছিল, তাদের ফল ভাল হবে এবং সরকার গড়ার জন্য মুলায়ম সিংহ যাদবকে তাদের উপর নির্ভর করতে হবে। যার প্রতিদান হিসেবে কেন্দ্রে সমাজবাদী পার্টির সাহায্য নিয়ে মমতা-শরদ পওয়ারের মতো শরিকদের চাপ মোকাবিলা করবে কংগ্রেস। কিন্তু উত্তরপ্রদেশের ফল কংগ্রেসের সেই আশায় জল ঢেলে দিয়েছে। বরং এখন এই আশঙ্কা তৈরি হয়েছে যে, সংসদের বাজেট অধিবেশনে বিরোধীরা আরও সরব হবে। সেই সঙ্গে শরিকরা প্রতিপদে কংগ্রেসকে বিপদে ফেলবে ও দর কষাকষি বাড়াবে।
আজ এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে সনিয়া অবশ্য দাবি করেন, “পাঁচ রাজ্যে ভোটের ফল কেন্দ্রে ইউপিএ-র উপর কোনও প্রভাব ফেলবে না।” যদিও বাজেট অধিবেশনে বিরোধী ও শরিকরা ঝামেলা করতে পারে এমন আশঙ্কার কথা একই সঙ্গে স্বীকার করে নেন তিনি। কংগ্রেস সভানেত্রীর কথায়, “এটা ঠিকই যে সাম্প্রতিক কালে বিরোধী ও শরিকরা সংসদে কিছু বিষয়ে সাহায্য করেনি। কিন্তু আমি আশা করি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও সরকারের শীর্ষ নেতারা যদি শরিকদের সঙ্গে প্রতিনিয়ত আলোচনা চালিয়ে যান, তা হলে মানুষের সুবিধা হবে এমন সব কর্মসূচিতে তাঁদের সমর্থন পাওয়া যাবে।”
আজ কংগ্রেস কোর গ্রুপের বৈঠকে বাজেট অধিবেশনের রণকৌশল নিয়ে এক প্রস্ত আলোচনা হয়েছে। ঠিক হয়েছে, শরিকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের দাবিদাওয়া বাজেটে কতটা মেটানো যায় তা খতিয়ে দেখবেন অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখোপাধ্যায়।
বস্তুত, লোকপাল বিল, খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি-সহ একাধিক বিষয়ে শরিক-সমর্থকদের বাধার প্রেক্ষাপটে আরও সমন্বয়ের প্রয়োজন এমনিতেই অনুভব করছিলেন কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা। তৃণমূল নেতৃত্বকে সেই আশ্বাসও দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী। আজ ঘরোয়া আলোচনায় কংগ্রেস শীর্ষ নেতারা বলেন, শুধু মমতা-শরদ নয়, এখন মুলায়ম-মায়াবতীর সঙ্গেও সমন্বয় বাড়াতে হবে কংগ্রেসকে। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে ফলের ভিত্তিতে রাজ্যসভায় যখন মুলায়মের শক্তি বাড়তে চলেছে।
সেই সমন্বয়ে কতটা ফল দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। বাম-বিজেপির আশা, রাজ্যে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার পরে মুলায়ম আর আগের মতো কংগ্রেসকে সাহায্য করবেন না। যার জবাবে কংগ্রেসের এক শীর্ষ নেতার যুক্তি, মমতা আর মুলায়ম এক নন। মুলায়ম অনেক পোড় খাওয়া রাজনীতিক। উত্তরপ্রদেশের মতো বড় একটি রাজ্যে সুশাসন কায়েম করতে গেলে প্রতিপদে তাঁর কেন্দ্রের সাহায্য প্রয়োজন। সে কথাটা মায়াবতীও বুঝেছিলেন। তাই তিনি নিজে প্রকাশ্যে কংগ্রেসকে আক্রমণ করলেও, তলে তলে কংগ্রেস শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলতেন তাঁর আস্থাভাজন ব্রাহ্মণ নেতা সতীশ মিশ্র। এমনকী উত্তরপ্রদেশের ভোটের তিন মাস আগেও টুজি স্পেকট্রাম নিয়ে পাবলিক অ্যাকাউন্টস কমিটির রিপোর্ট খারিজ করতে কংগ্রেসের পক্ষে ভোট দেয় বিএসপি।
তা হলে লোকপাল বিল বা খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে সংসদে কেন আপত্তি তুলেছিল সপা-বিএসপি? কংগ্রেস নেতৃত্বের মতে, এ ছাড়া তাদের উপায়ন্তর ছিল না। কারণ, উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে রাহুল গাঁধীর তীব্র সমালোচনা সত্ত্বেও সংসদে কংগ্রেসকে সমর্থন করলে তাদের রাজনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা ছিল। কিন্তু এখন আর সেই সমস্যা নেই। তা ছাড়া, সপা ক্ষমতায় আসার পর মায়াবতী স্বাভাবিক ভাবেই কংগ্রেসের সঙ্গে ভাল সম্পর্ক রাখতে চাইবেন। কেননা তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে বিভিন্ন মামলা যে ভাবে শুরু হয়েছে, তাতে খুব একটা স্বস্তিতে নেই দলিত নেত্রী।
তবে অনেকে আবার বলছেন, এ সবই কংগ্রেসের আশা। কেন্দ্রে কংগ্রেসকে দুর্বল বলে মনে হলে মায়া-মুলায়মও ভোল পাল্টাতে পারেন। ফলে কেন্দ্রে রাজনৈতিক স্থিরতা বজায় রাখতে গেলে এখন এঁদের প্রতিনিয়ত তোয়াজ করে চলা ছাড়া আর উপায় নেই। তার পরেও শেষ রক্ষা হবে কিনা তা সময়ই বলবে। |
|
|
|
|
|