|
|
|
|
পরীক্ষা মুলায়ম-অখিলেশের |
বেহাল কোষাগার, প্রতিশ্রুতি রক্ষার খরচ নিয়ে চিন্তায় সপা |
অনমিত্র সেনগুপ্ত • নয়াদিল্লি |
আস্থা অর্জনের কঠিন পরীক্ষায় উতরেছেন আশাতীত সাফল্যের সঙ্গে। ‘বহেনজি’র হাত থেকে লখনউয়ের তখ্ত পুনরুদ্ধার করা গিয়েছে। কিন্তু তাতেও চিন্তা কমছে না মুলায়ম-অখিলেশের।
সামনে যে আরও বড় পরীক্ষা। উত্তরপ্রদেশের মসনদের সঙ্গে সেখানকার কোষাগারের ১৯ হাজার কোটি টাকা ঘাটতির বোঝাও পেয়েছেন মুলায়ম সিংহ যাদব। এই পরিস্থিতিতে সপা শীর্ষ নেতৃত্বের প্রধান চিন্তা, ‘মায়াজাল’ ছিন্ন করতে তাঁরা যে প্রতিশ্রুতির ডালা সাজিয়েছিলেন, তা কী ভাবে বাস্তবায়িত হবে।
দেশে নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পালন না করার উদাহরণ প্রচুর। অধিকাংশ রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধেই অভিযোগ, ভোটের আগে প্রতিশ্রুতির বন্যা বইয়ে দিলেও ক্ষমতায় এসে তার ধারকাছ দিয়ে হাঁটে না। সদ্যসমাপ্ত বিধানসভা নির্বাচনের আগেও প্রচারে নেমে কৃষকদের বিনামূল্যে বিদ্যুৎ, ঋণ মকুব থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের ল্যাপটপ ও ‘ট্যাবলেট’, বেকার ভাতা দেওয়াবিপুল ভর্তুকির তালিকা শোনান অখিলেশরা। সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে দরকার অতিরিক্ত প্রায় পঞ্চাশ থেকে ষাট হাজার কোটি। অথচ রাজ্যের আর্থিক হাল পশ্চিমবঙ্গের মতোই খারাপ। প্রতিশ্রুতি পূরণে বাড়তি অর্থের জোগান কোথা থেকে আসবে, প্রশ্ন উঠছে।
যদিও দলের একাংশ মনে করছে, দু’বছরের কম সময়ে লোকসভা নির্বাচন। পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফলই বুঝিয়ে দিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি কেউই ভাল অবস্থায় নেই। কেন্দ্রে তৃতীয় ফ্রন্টের সরকার গড়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছে না রাজনৈতিক মহল। সপা শিবিরের বক্তব্য, উত্তরপ্রদেশে যে বিপুল জনাদেশ দল পেয়েছে তা আগামী লোকসভা ভোটে ধরে রাখা গেলে কেন্দ্রে সরকার গড়ার সময় গুরুত্বপূর্ণ দাবিদার হবেন মুলায়ম। তাই দল চায়, যে ভাবেই হোক আগামী দু’বছর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অক্ষরে অক্ষরে পালন করা হোক।
কী প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সপা? রাজ্যের কৃষক ও তাঁতি সমাজের (যাদের অধিকাংশই মুসলিম) সমর্থন পেতে বিনামূল্যে বিদ্যুৎ ও সেচের জল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল সপা নেতৃত্ব। আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল কৃষকদের উপর থেকে ঋণের বোঝা কমানোরও। মুলায়মদের এই রণকৌশল যে খেটে গিয়েছে, তা স্বীকার করে নিয়েছেন বিএসপি নেতারাও। হারের কারণ খুঁজতে নেমে প্রাথমিক ভাবে বিএসপি শিবির মনে করছে, কৃষক ও সংখ্যালঘু সমাজ সম্পূর্ণ ভাবে তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। বিদায়ী মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর কথায়, “মুসলিম সমাজ এ বার মুলায়ম সিংহকে সমর্থন জানানোয় সপা’র এই ভোট বৃদ্ধি।”
বিনামূল্যে সেচের জলের প্রতিশ্রুতির পাশাপাশি কৃষকদের প্রায় পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ মকুব করার আশ্বাস দিয়েছিল সপা। এই প্রতিশ্রুতিগুলির জন্যই যে কৃষকদের সমর্থন তাদের পক্ষে গিয়েছে, এ কথা মেনে নিয়েছেন সপা নেতৃত্বও। দলের বক্তব্য, এমন না হলে বুন্দেলখণ্ডে ভাল ফল হত না। দলীয় সূত্রের খবর, রাহুল বা মায়াবতী বুন্দেলখণ্ড নিয়ে তরজায় ব্যস্ত থাকলেও স্থানীয় কৃষক সমাজ ভরসা রেখেছে মুলায়মেই।
দশম শ্রেণির পড়ুয়াদের ‘ট্যাবলেট’ ও দ্বাদশ শ্রেণির ক্ষেত্রে ল্যাপটপ দেওয়ার যে প্রতিশ্রুতি অখিলেশকে ছাত্র-যুব সমাজের সমর্থন জুগিয়েছে, তার ‘বোঝা’ও কম নয়। রাজ্যে প্রতি বছর মাধ্যমিকে গড়ে ২০ থেকে ২২ লক্ষ এবং উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় ১৫ লক্ষ পড়ুয়া উত্তীর্ণ হন। এই বিপুল সংখ্যক পড়ুয়ার কাছে প্রতিশ্রুতি ধরে রাখাটাও সরকারের কাছে চ্যালেঞ্জ। রয়েছে ভাতার প্রতিশ্রুতিও। যুব সমাজের একটি বড় অংশকে মাসিক হাজার টাকা বেকার ভাতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সপা।
তাঁদের সব প্রতিশ্রুতিতেই আস্থা রেখেছে উত্তরপ্রদেশ। মুলায়ম-অখিলেশের সামনে এ বার আস্থাভাজন হওয়ার পরীক্ষা। |
|
|
|
|
|