রাহুলই প্রতিপক্ষ মেনে নেতা খুঁজছে বিজেপি
ক দলের সামনে নেতৃত্বের সঙ্কট। অন্য দল খুঁজছে সরকারের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের পথ। এক কথায় এটাই হল উত্তরপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যের ভোটের ফল প্রকাশের চব্বিশ ঘণ্টা পরে দুই বড় দলের প্রাথমিক উপলব্ধি।
প্রথম দল বিজেপি। দ্বিতীয়টি কংগ্রেস।
ভোটের ফল প্রকাশের পরে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্ব দু’টি জিনিস বিশেষ ভাবে অনুধাবন করেছেন। প্রথমত, উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনের ফল যতটা না রাহুল গাঁধীর ব্যক্তিগত বিপর্যয়, তার চেয়েও বেশি মায়াবতী-বিরোধী ঝড়ের প্রকোপ। গত কাল দলের সভাপতি নিতিন গডকড়ী দলীয় বৈঠকেও সতীর্থ নেতাদের জানান, ভোটাররা মায়াকে সরাতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। কিন্তু তাঁরা মনে করেছেন, কংগ্রেস বা বিজেপির মতো জাতীয় দল দলিত নেত্রীকে সরাতে সক্ষম হবে না। তাই আঞ্চলিক নেতা মুলায়ম সিংহ যাদবের উপরেই তাঁরা ভরসা রাখলেন। বিজেপি নেতারা তাই মনে করছেন, সে কারণেই এ যাত্রায় ‘রাহুল ম্যাজিক’ কাজ করেনি। কিন্তু ২০১৪ সালে লোকসভা ভোটের সময় সনিয়া-পুত্রের এই পরিশ্রমের ফসল ঘরে তুলতে পারে কংগ্রেস। বিশেষত বিজেপির শতকরা ভোটের হার কমলেও কংগ্রেসের শতকরা ভোটের হার কিন্তু ৬ শতাংশ বেড়েছে উত্তরপ্রদেশে। তাই বিজেপি প্রকাশ্যে রাহুল-বিরোধী বিবৃতি দিলেও ভিতরে ভিতরে দলের শীর্ষ নেতারা বলছেন, কংগ্রেসে রাহুল গাঁধীই ভবিষ্যতের ‘মুখ’ থাকবেন। তিনি পরিশ্রম করেছেন, ব্যর্থতার দায়িত্ব স্বীকার করেছেন। আগামী দিনে মানুষ তাই বলতেই পারেন, এই যুবকটিকে এ বার সুযোগ দিন।
বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের দ্বিতীয় বোধোদয়, গোটা দেশের নানা রাজ্যে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের যে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, তা মূলত মনমোহন সিংহ সরকারের প্রশাসনিক ব্যর্থতার জন্য। মূল্যবৃদ্ধি, দুর্নীতির মতো বিষয় তিলতিল করে গোটা দেশে এই হাওয়া তৈরি করছে। বিধানসভা নির্বাচনেও তার প্রভাব পড়ছে।
বিজেপির শীর্ষ নেতা লালকৃষ্ণ আডবাণী বলেন, “কংগ্রেস-বিরোধী এই হাওয়াকে সুষ্ঠু ভাবে কাজে লাগানোই আপাতত বিজেপির প্রধান কাজ।” তবে বিজেপি নেতারা বলছেন, দ্বিতীয় কারণটির ক্ষেত্রেও রাহুল দায়ী নন। ফলে ভবিষ্যতে রাহুলকেই মোকাবিলা করতে হবে তাঁদের। প্রচারে রাহুলকে আক্রমণ করে দুর্বল করার চেষ্টা হতে পারে। কিন্তু ভিতরে ভিতরে আডবাণীর মতো নেতারা মনে করছেন, বিজেপিকে দ্রুত এক নেতার মুখ খুঁজে বের করতেই হবে। না হলে কংগ্রেস-বিরোধী হাওয়া বিজেপি কাজে লাগাতে পারবে না।
সমস্যা হচ্ছে, বিজেপি কিন্তু এখনও কংগ্রেস-বিরোধী প্রচারের চেয়েও অনেক বেশি ব্যস্ত, কে প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থী হবেন, তা নিয়ে কলহ চালিয়ে যেতে। আডবাণী, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ, নরেন্দ্র মোদী ও নিতিন গডকড়ী ইচ্ছুক প্রার্থীর সংখ্যা কম নয়। আডবাণী দলীয় নেতাদের জানাচ্ছেন, প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী যদি এখনই ঠিক করা সম্ভব না-ও হয়, তা হলেও দলের মধ্যে কে সিদ্ধান্ত নেবেন, সেটা অন্তত ঠিক করা হোক। এখন অবস্থা এমনই যে, দলের সভাপতিও একা সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। অন্য দিকে, নরেন্দ্র মোদীও অবিলম্বে বৈঠক ডেকে পরিস্থিতি পর্যালোচনার দাবি জানাচ্ছেন।
সনিয়া গাঁধী তথা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্বও পরিস্থিতি পর্যালোচনা করছেন। কংগ্রেসও মনে করছে, ২০১৪ সালের মধ্যে বিজেপি ঘর গোছানোর আগেই মনমোহন সিংহ সরকারের উচিত আরও আক্রমণাত্মক হয়ে বেশ কিছু সামাজিক কর্মসূচি ও আর্থিক সংস্কারে হাত দেওয়া। গোটা দেশে ইউপিএ সরকারের ছবিকে দ্রুত বদলাতে চাইছেন তাঁরা।
কিন্তু বিজেপির শীর্ষ নেতারা জানেন না, কী ভাবে নেতৃত্বের সঙ্কটের সমাধান করবেন। আর কংগ্রেস শীর্ষ নেতারাও জানেন না, আবার মনমোহন সিংহ সরকারের ভাবমূর্তিতে কী ভাবে বদল আনবেন তাঁরা।
আর এই দুই বৃহৎ জাতীয় দলের টানাপোড়েনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, নীতীশ কুমার, জয়ললিতা, নবীন পট্টনায়কের মতো আঞ্চলিক নেতারা সেই পরিসর দখলের চেষ্টায় আরও সক্রিয় হবেন, তা-ও স্পষ্ট।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.