|
|
|
|
দুর্বল সংগঠন আর ভুল প্রার্থী বাছাইকে দোষ দিলেন সনিয়া |
শঙ্খদীপ দাস • নয়াদিল্লি |
ভোট বিপর্যয়ের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই প্রাথমিক ময়নাতদন্ত সেরে কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী জানিয়ে দিলেন, “সাংগঠনিক দুর্বলতা ও প্রার্থী বাছাইয়ে ভুলের জন্যই বিপর্যয় হয়েছে। পাঁচ রাজ্যের এই ভোট থেকে শিক্ষা নেবে কংগ্রেস।”
আপাত ভাবে এই বক্তব্য সাদামাটা বলে মনে হলেও, দলের শীর্ষ নেতৃত্বের মতে কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির নিরিখে সনিয়ার এই মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেসের খারাপ ফলের জন্য ব্যক্তিগত ভাবে রাহুল গাঁধী যে দায়ী নন, সেই ব্যাখ্যাই উঠে আসছে এই মন্তব্য থেকে। গত কাল ভোটের ফল প্রকাশের পর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে পরাজয়ের দায় স্বীকার করে নিলেও, উত্তরপ্রদেশে সাংগঠনিক দুর্বলতার কথা তুলে ধরেছিলেন রাহুল। আজ সনিয়াও সেই কথাই বললেন। পাশাপাশি প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি ও রাজনৈতিক ব্যবস্থাপনার অভাব নিয়ে তিনি যে ভাবে প্রকাশ্যে সরব হয়েছেন, সেটাকে দলের রাজনৈতিক ম্যানেজারদের উদ্দেশে কঠোর বার্তা বলেই মনে করা হচ্ছে। এমনকী সনিয়া আজ এ-ও বলেন, “কংগ্রেসে নেতৃত্বের অভাব নেই। বরং বড্ড বেশি নেতাই সমস্যা।”
আজ সকাল সাড়ে দশটা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত দলের সদর দফতরে আহমেদ পটেল, দিগ্বিজয় সিংহ, মোহন প্রকাশ, গুরচ্যান সিংহ চড়ক, বীরেন্দ্র সিংহের মতো নেতাদের সঙ্গে আলাদা আলাদা বৈঠক করেন সনিয়া। পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি- সাধারণ সম্পাদক শাকিল আহমেদকে ডেকে পাঠিয়ে তৃণমূলের মনোভাব বোঝার চেষ্টা করেন। কংগ্রেস সূত্রে বলা হচ্ছে, দিগ্বিজয় ও মোহনের কাছে প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটি নিয়ে কৈফিয়ত চান সনিয়া। প্রশ্ন করেন, কেন সপা ও বিএসপি থেকে বেরিয়ে আসা নেতাদের প্রার্থী করা হল? কারণ তাঁরা কেউই জেতেননি। দ্বিতীয়ত, প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে স্বজনপোষণ করা হল কেন? কংগ্রেসের জনপ্রিয়তা হারানো বিধায়কদের ফের প্রার্থী করার যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন সনিয়া। পরে তিনি বলেন, “রায়বরেলী, অমেঠীতে কংগ্রেস যে বরাবর সব আসনে জেতে তা নয়। আগেও সেখানে হেরেছি। কিন্তু এ বার যে আসনে দলীয় বিধায়কের বদলে নতুন প্রার্থী দেওয়া হয়েছিল, সেই জগদীশপুরেই কংগ্রেস জিতেছে। পুরনো বিধায়কদের বিরুদ্ধে মানুষের অসন্তোষ থাকায় তাঁরা জিততে পারেননি।” |
|
নয়াদিল্লিতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি। ছবি: পিটিআই |
দশ জনপথ ঘনিষ্ঠ এক নেতা আজ জানান, উত্তরপ্রদেশে প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত হওয়ার পরেও ৫০ জন প্রার্থী বদলানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন সনিয়া। তার পরেও প্রার্থীদের নিয়ে তাঁর কাছে বহু অভিযোগ আসে। ঠিক যে ভাবে বিহারে প্রার্থী বাছাই নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছিল মুকুল ওয়াসনিকের বিরুদ্ধে। কিন্তু সনিয়া এ বার আর চুপ করে থাকলেন না। কারণ, তিনি বুঝতে পারছেন যে, এখনই রাশ না টানলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। তাঁর এই উদ্যোগে দলে দিগ্বিজয়-বিরোধীরা খুশি। রাহুল-ঘনিষ্ঠ এই নেতার ডানা ছাঁটার চেষ্টায় ইতিমধ্যেই আসরে নেমে পড়েছেন অনেকে।
উত্তরপ্রদেশের পরেই আজ পঞ্জাবের দায়িত্বপ্রাপ্ত কংগ্রেস সাধারণ সম্পাদক গুরচ্যান সিংহ চড়কের সঙ্গে বৈঠক করেন সনিয়া। পঞ্জাবে এক ডজনের বেশি বিক্ষুব্ধ নেতা নির্দল প্রার্থী হয়ে কংগ্রেসের যাত্রা ভঙ্গ করেছেন। বিক্ষুব্ধদের শান্ত করতে দল কেন সক্রিয় হয়নি, সেই প্রশ্ন তোলেন সনিয়া। পরিসংখ্যান হাতে নিয়ে চড়ককে সনিয়া বলেন, পঞ্জাবে কংগ্রেসের ভোটের হার কমেনি। স্রেফ কিছু আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে ত্রুটির জন্য হারতে হয়েছে কংগ্রেসকে। চড়ক তাঁকে বলেন, আসলে মনপ্রীত বাদলের পঞ্জাব পিপলস পার্টি ভোট কাটায় ২৩টি আসনে হেরেছে কংগ্রেস। |
সনিয়ার বিশ্লেষণ |
• জনতার রায় মানছি।
তবে কেন্দ্রে ইউপিএ
দুর্বল হবে না। |
• বিপর্যয়ের অন্যতম
কারণ ভুল প্রার্থী বাছাই। |
• মূল্যবৃদ্ধিও একটা
কারণ হতে পারে। |
• কেন্দ্রীয় ও রাজ্য
নেতাদের সঙ্গে
পর্যালোচনায় বসব। |
• উত্তরপ্রদেশবাসীর
কাছে বিএসপি-র
বিকল্প ছিল সপা। |
• গুজরাত, হিমাচল,
কর্নাটকের ভোটে
ঝাঁপাব। |
• নেতৃত্বের অভাব
নয়, বরং বড্ড বেশি নেতাই সমস্যা। |
|
শুধু পঞ্জাব নয় উত্তরাখণ্ডেও কংগ্রেসের দশ জন বিক্ষুব্ধ নেতা নির্দল প্রার্থী হিসাবে ভোটে লড়েছেন। তিন জন জিতেওছেন। স্বাভাবিক ভাবেই প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক বীরেন্দ্র সিংহকে সনিয়ার রোষানলে পড়তে হয়েছে। তবে বীরেন্দ্রকে সনিয়া নির্দেশ দিয়েছেন, উত্তরাখণ্ডে সরকার গড়তে যেন তৎপর হয় কংগ্রেস। এই দীর্ঘ ময়নাতদন্তের পর সনিয়া বলেন, “কংগ্রেস যে সর্বত্র হেরেছে তা নয়। একটি রাজ্যে জিতেছে। একটি রাজ্যে সরকার গঠনের পথে। যে সব রাজ্যে বিপর্যয় হয়েছে, সেখানে সাংগঠনিক ত্রুটি খতিয়ে দেখতে এটাই শেষ বৈঠক নয়। পরাজয়ের কারণ বিশ্লেষণ এর পরেও চলবে।” সনিয়া জানান, ৫ রাজ্যের ফল থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে এগোবে কংগ্রেস। এ বছরের শেষের দিকে গুজরাত ও হিমাচলে ভোট। কর্নাটকেও বিশেষ দেরি নেই।
সনিয়ার আজকের বৈঠক থেকে আর একটা বার্তা উঠে এসেছে বলে কংগ্রেস নেতাদের অভিমত। সেটা হল, অসুস্থতা কাটিয়ে ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী। দলের সঙ্কটের মুহূর্তে ফের রাশ তুলে নিয়েছেন নিজের হাতে। |
|
|
|
|
|