রমরমা বাড়ছে ভেষজ আবিরের
জ দোল। রঙে রঙে মেতে ওঠার দিন। শুধু একটু খেয়াল রাখা, তা যেন নিজের বা অন্যের ক্ষতির কারণ না হয়ে ওঠে। আর সে জন্যই আছে ভেষজ রঙ।
প্রাচীন গুহাচিত্রে যে রঙের ব্যবহার হত, তা ছিল প্রাকৃতিক রঙ। সিন্ধুসভ্যতায় পোশাক রাঙানোর কাজে ব্যবহৃত হত ভেষজ রঙ। মহেঞ্জোদড়োতে পাওয়া গিয়েছে জলরঙের তুলি। এমনকী এই সে দিন পর্যন্ত আমাদের ঠাকুমা, দিদিমারাও শাড়ি ছোপাতেন শিউলি ফুলের বোঁটার রঙে। ভেষজ রঙের ব্যবহার অন্দর মহলে থাকলেও, উপনিবেশিত দেশের বাজারে বিদেশিদের হাত ধরেই রাসায়নিক রঙের জনপ্রিয়তা বাড়তে থাকে। অন্য দিকে, হারিয়ে যেতে থাকে আমাদের দেশজ প্রাকৃতিক রঙের আকর্ষণ। বিশেষত রঙের বৈচিত্রের টানেই রাসয়নিক রঙ খুব দ্রুত জনপ্রিয়তা পায়।
কিন্তু কিছুদিন পরেই ত্বকের উপর এই রঙের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে কথা উঠতে শুরু করে। দেখা যায়, পোশাকে রাসায়নিক রঙের বাবহারের ফলে ত্বকে অ্যালার্জি হচ্ছে। কমে যাচ্ছে ত্বকের কমনীয়তা। অন্য দিকে, সরাসরি মুখে বা শরীরে রঙ মাখানোর ফলে বিভিন্ন সংক্রমণ থেকে শুরু করে ত্বকের জটিল রোগের প্রভাব বাড়ছে। তাছাড়া এই রঙ যেহেতু মিশে যায় না পরিবেশের সঙ্গে,পরিবেশের উপরে তৈরি হয় বাড়তি বোঝা। তাই ত্বক ও পরিবেশ, দুটোই বাঁচাতে নতুন করে আবার ভেষজ রঙ বা প্রাকৃতিক উপায় তৈরি রঙের আকর্ষণ আবার বাড়ছে।
নিজস্ব চিত্র।
ভেষজ রং তৈরি হয় গাছপালা, লতাপাতা, ফুল, ফলের বীজ প্রভৃতি থেকে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং’ বিভাগের ছাত্রছাত্রীরা ভেষজ আবির তৈরির নানান পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাচ্ছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন রঙের ফুলের পাপড়ি থেকে বিভিন্ন রঙের আবির তৈরি করে ফেলেছেন তাঁরা। সেই আবির বিক্রি হচ্ছে বাজারেও। সাগ্রহে সেই আবির কিনছেন মানুষজন। তাঁদের অনুকরণে বিভিন্ন স্বয়ম্ভর গোষ্ঠী ভেষজ আবির ও রঙ তৈরি করছেন। সেই রঙই বিক্রি হচ্ছে বাজারে।
দুর্গাপুরের বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গিয়েছে, ভেষজ আবির বিক্রি হচ্ছে ব্যাপক হারে। দুর্গাপুর বাজারের ব্যবসায়ী জয়দেব কুন্ডু বলেন, “গত বারের চেয়ে এবার ভেষজ আবিরের চাহিদা অনেক বেশি দেখছি। বছর বছর বিক্রির পরিমাণ বাড়ছে।” পাঁচটি রঙের আবির বিক্রি করছেন তিনি। ছেলের জন্য ভেষজ আবির কিনছিলেন অনিল কুমার সোম। তিনি বলেন, “ভেষজ আবির বা রঙ ব্যবহারে কোনও ঝুঁকি নেই। তাই বছর দুয়েক ধরে এই রঙ কিনছি।” জয়দেববাবু জানান, আগে ক্রেতারা শুধু পরিবারের জন্যই ভেষজ রং কিনতেন। এখন বিভিন্ন ক্লাব বা সংস্থাও ভেষজ রং কিনছে। আর এক বিক্রেতা জীতেন্দ্রপ্রসাদ সাউ জানান, ভেষজ আবিরের চাহিদা এবার আগের তুলনায় অনেক বেশী ভালো। বেনাচিতির বহুদিনের রং বিক্রেতা বিষ্ণু শর্মা বলেন, ‘রাসায়নিক রঙের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে মানুষ অনেক সচেতন হওয়াতেই ভেষজ আবির ও রঙের বিক্রি বাড়ছে।”
দুর্গাপুরের কুমারমঙ্গলম পার্কে প্রতি বছর ‘বসন্ত উৎসব’ পালন করে আসছেন রণজিত গুহ এবং মধুমিতা গুহ। চেনা-অচেনা বহু মানুষ উৎসবের টানে সামিল হন সেখানে। এই দম্পতি জানান, গত কয়েক বছর ধরে তাঁরাও ভেষজ আবির ও রঙ ব্যবহারের উপর জোর দিচ্ছেন। বাইরে থেকে যাঁরা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসছেন তাঁদেরও সেই আবেদন করছেন তাঁরা। তাঁদের কথায়, “রঙের উৎসব বেরঙিন হয়ে যেতে পারে শুধু রঙের প্রকৃতি বা চরিত্রের কারণে। আনন্দে যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে সেজন্যই সঠিক রঙ বাছাই করা জরুরি। ভেষজ রঙে সেই দুশ্চিন্তা অনেকটাই কম।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.