|
|
|
|
মার খাচ্ছে ছোট সংস্থা |
পরিকাঠামোর চড়া দরও তথ্যপ্রযুক্তিতে লগ্নি টানায় বাধা |
গার্গী গুহঠাকুরতা • কলকাতা |
গোদের উপর বিষফোড়া।
বিশ্ব অর্থনীতির বেহাল দশা আর জমি সমস্যার জাঁতাকলে রাজ্যে এমনিতেই আটকে রয়েছে একাধিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার মোটা অঙ্কের লগ্নি। তার উপর যোগ হয়েছে তৈরি পরিকাঠামোর আকাশছোঁয়া দাম। যার জেরে তথ্যপ্রযুক্তিতে লগ্নির গন্তব্য হিসেবেও রাজ্যের আকর্ষণ কমছে বলে মনে করছেন শিল্পমহলের একাংশ।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবর্ষে অফিস তৈরির জন্য রাজ্যে ১ লক্ষ ৮০ হাজার বর্গ ফুট জায়গা নিয়েছিল বিভিন্ন তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থা। চলতি অর্থবর্ষে তা দাঁড়াবে ২ লক্ষ বর্গ ফুট। অর্থাৎ সামান্য বেড়েছে চাহিদা। কিন্তু চাহিদামাফিক দামে জায়গার জোগান দিতে পারলে, তা আরও অনেক বেশি হত বলেই বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আবার সংশ্লিষ্ট মহলের অভিযোগ, বেশি দর দিয়েও পছন্দসই পরিকাঠামো মেলে না পশ্চিমবঙ্গে।
রিয়েল এস্টেট বিশেষজ্ঞ সংস্থা জোনস লাং লাসেল-এর পূর্বাঞ্চলীয় কর্তা ময়াঙ্ক সাক্সেনার মতে, “পূর্বাঞ্চলে যে পরিমাণ ব্যবসা হয়, তার তুলনায় অফিসের ভাড়া বা লিজ নেওয়ার খরচ অনেকটাই বেশি। জায়গার চাহিদার তুলনায় বেশি তার জোগানও। তবু দাম কমাতে নারাজ নির্মাণ সংস্থাগুলি।” তাঁর অভিযোগ, বেঙ্গালুরুতে যেখানে প্রতি বর্গ ফুটের দর টাকার মতো, সল্টলেক সেক্টর ফাইভে তা ৪৫ টাকা। বহু ক্ষেত্রে চড়া দামের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় পরিকাঠামোর মানও। যা অফিসের চাহিদা বৃদ্ধির গতি ঢিমে হওয়ার অন্যতম কারণ। অনেকেরই মত, চড়া দরের জন্যই বেশি করে আটকে যাচ্ছে ছোট-মাঝারি সংস্থার লগ্নি। কারণ, অনেক বড় সংস্থা নিজেরাই ক্যাম্পাস তৈরি করে নেয়। কিন্তু অর্থের জোর না-থাকায়, ভাড়া-লিজের উপরেই নির্ভর করে ছোট-মাঝারি সংস্থা। তাই সমস্যা বেশি তাদেরই।
চাহিদায় ঘাটতির কথা মেনে নিচ্ছেন পরিকাঠামো নির্মাণ সংস্থার কর্তারাও। যেমন, সেক্টর ফাইভে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের পরিকাঠামো টেকনোপলিস-এর নির্মাতা রাহুল সরাফের অভিযোগ, “চাহিদা রয়েছে। তবে তা জোগানের তুলনায় কম।”
কিন্তু তা সত্ত্বেও কী ভাবে চড়া দাম হাঁকছেন পরিকাঠামো নির্মাতারা?
শিল্পমহলের মতে, রাজ্য-সহ সমগ্র পূর্ব ভারতে একমাত্র মেট্রো সিটি কলকাতাই। তাই বিকল্পের এই অভাবের কথা মাথায় রেখেই এখানে চড়া দাম হাঁকে নির্মাণ সংস্থা। অবশ্য অম্বুজা রিয়্যালটি-র বিপণন কর্তা প্রমোদ দ্বিবেদীর দাবি, “দাম নয়, চাহিদা নির্ভর করে মূলত পরিকাঠামোর গুণমানের উপরেই। যে কারণে, রাজারহাটে দ্রুত ভর্তি হয়েছে আমাদের তৈরি পরিকাঠামো ইকো-স্পেস।”
ইউরোপ-সহ বিশ্ব অর্থনীতির টালমাটাল অবস্থার জেরে পশ্চিমবঙ্গ-সহ সারা দেশেই এখন তলানিতে ঠেকেছে তথ্যপ্রযুক্তির বিশেষ আর্থিক অঞ্চল তৈরির চাহিদা। শুধু রফতানির জন্য ওই ধরনের প্রকল্প গড়লে, এই মুহূর্তে তা লাভজনক না হওয়ার আশঙ্কা থাকছে বলে মনে করছে বেশ কিছু সংস্থা।
তাই অর্থনীতির নিয়ম মাথায় রেখেই শিল্পমহলের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতিতে দামে রাশ না-টানলে, রাজ্যে অবধারিত ভাবেই ভাটা আসবে তথ্যপ্রযুক্তির লগ্নিতে। কারণ, পরিকাঠামোর ভাড়া বা লিজের খরচ বাড়লে, কমবে লভ্যাংশ। যা এড়াতে অন্য রাজ্যের বড় শহরকেই আরও বেশি করে লগ্নির গন্তব্য হিসেবে বেছে নেবে তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থাগুলি। |
|
|
|
|
|