দুই সিপিএম নেতা খুনে ধৃত যে চার জনকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছিল সিআইডি, তাঁদের ফের ১৪ দিন জেল হাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিল বর্ধমান আদালত। যদিও বুধবারই অন্য একটি মামলায় তাঁদের নতুন করে গ্রেফতার (শোন অ্যারেস্ট) দেখিয়েছে জেলা পুলিশ। কিন্তু সেই মামলার ভিত্তিতে ধৃতদের হেফাজতে নেওয়া বা জেরা করার অনুমতি এখনও চাওয়া হয়নি।
সোমবার হেফাজতে পেয়ে সিআইডি প্রথমে ধৃতদের কলকাতায় ভবানী ভবনে নিয়ে যাওয়ার কথা বলেছিল। কিন্তু শেষমেশ বর্ধমান থানার লকআপেই তাঁদের রাখা হয়। তদন্তকারী সিআইডি অফিসার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “হাতে সময় অল্প ছিল। তাই আমরা ওঁদের থানায় রেখেই জেরা করেছি। ঘটনাস্থলেও নিয়ে গিয়েছি।”
সিআইডি সূত্রের খবর, মঙ্গলবার গভীর রাতে অন্যতম ধৃত পতিতপাবন তা-র বাড়ি থেকে দু’টি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়। খুনের দিনই পুলিশ ধৃতদের থেকে তিনটি মোবাইল আটক করেছিল। সিআইডি সেগুলিও বাজেয়াপ্ত করেছে। কল্যাণবাবু বলেন, “পাঁচটি মোবাইলেরই সিম পরীক্ষা করা হবে।” তবে খুনের জন্য যে ‘ভোঁতা অস্ত্র’ ব্যবহার হয়েছিল বলে চিকিৎসকদের অনুমান, সে রকম কিছু উদ্ধার করে তারা আদালতে পেশ করতে পারেনি।
গত ২২ ফেব্রুয়ারি বর্ধমানের দেওয়ানদিঘিতে সিপিএম নেতা প্রদীপ তা ও কমল গায়েন খুন হওয়ার পরে ঘটনাস্থল থেকেই চার তৃণমূল কর্মীকে ধরেছিল পুলিশ। হাইকোর্টের নির্দেশে তদন্তে নেমে সিবিআই দু’দিনের জন্য তাঁদের হেফাজতে নেয়। কল্যাণবাবু বলেন, “এই দু’দিনে ধৃতদের থেকে কিছু তথ্য জোগাড় করেছি। আরও কয়েক দিন ওঁদের হেফাজতে পেলে সুবিধা হত। কিন্তু আইনমাফিক এ দিন আমরা আর তা চাইতে পারতাম না।”
বর্ধমান জেলা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটার সুব্রত হাটীর ব্যাখ্যা, “গ্রেফতারের পরে ১৫ দিন কেটে গেলে ধৃতদের আর হেফাজতে নেওয়া যায় না।” জোড়া খুনের আগে তৃণমূল সমর্থকদের মারে রূপকুমার গুপ্ত নামে এক সিপিএম কর্মী জখম হন বলে অভিযোগ। অভিযুক্তদের মধ্যে তিন ধৃতের নামও ছিল। এ দিন সেই মামলায় খুনের চেষ্টার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ৩০৮ ধারা যুক্ত করে ধৃতদের ‘শোন অ্যারেস্ট’ দেখানো হয়। ওই মামলায় ধৃতদের ১৬ মার্চ পর্যন্ত জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন ভারপ্রাপ্ত সিজেএম শুভ্রকান্তি ধর। সুব্রতবাবু বলেন, “এই মামলায় সদ্য গ্রেফতার দেখানোয় পুলিশ ১৪ দিনের মধ্যে ধৃতদের ফের জেরা করার অনুমতি চাইতে পারে।” জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, প্রয়োজনে তাঁরা সেই আর্জি জানাবেন।
এ দিন আদালতে অভিযুক্তদের আইনজীবী সদন তা, বিশ্বজিৎ দাসেরা অভিযোগ করেন, গত দু’দিন বর্ধমান থানা লকআপে ধৃতদের খেতে দেওয়া হয়নি। আগামী ১৪ মার্চের মধ্যে সিআইডি-কে এর কৈফিয়ত দেওয়ার নির্দেশ দেন বিচারক। সিআইডি-র হোমিসাইড সেলের অফিসার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও সন্দীপ গঙ্গোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “অভিযুক্তদের না খাইয়ে রাখার খবর ঠিক নয়। উল্টে পতিতপাবনবাবুর গলায় ব্যথা হচ্ছিল, তাঁর চিকিৎসা করানো হয়েছে।” |