সাড়ে তিন দশক আগের কথা। কাটোয়া শহর থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে জগদানন্দপুর গ্রামে শুরু হয়েছিল ‘দোল উৎসব’। স্থানীয় রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দিরকে ঘিরে ওই উৎসবের অঙ্গ হিসেবে এখন মেলাও বসে। আজ, বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হচ্ছে মেলা। চলবে সোমবার পর্যন্ত।
এই মেলার অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা, বোলপুরের বাসিন্দা কাশীনাথ দে-র দাবি, “আশান্ত সাতের দশকে স্থানীয় বেশ কিছু যুবক এলাকাছাড়া হয়ে গিয়েছিল। তাঁদের ফিরিয়ে আনতেই আমরা কয়কে জন নিজেদের উদ্যোগে দোল উৎসব শুরু করি।” পাশাপাশি ওই গ্রামের বাসিন্দা বটকৃষ্ণ দে, ধনঞ্জয় দে-রা বলেন, “রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির প্রায় দেড়শো বছরের পুরনো। মন্দিরের স্থাপত্যশিল্প দেখে রাজ্য সরকার পুরাতত্ত্ব বিভাগ মন্দিরটি অধিগ্রহণ করে। কিন্তু এই মন্দিরের কোনও প্রচার ছিল না। প্রচারের আলোয় আনতে দোল উৎসব করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”
‘দোল উৎসব’কে কেন্দ্র করে আশপাশের ৭-৮টি গ্রামের বাসিন্দারা জগদানন্দপুর গ্রামে আসেন। ভিড় জমান আত্মীয়-স্বজনেরাও। মেলা কমিটির অন্যতম সদস্য তরুণ দে বলেন, “এই উৎসব ঘিরে গ্রামে বসে মিলন মেলা।” রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির লাগোয়া মাঠে বসে মেলা। নানা সামগ্রীর পসরা সাজিয়ে আসেন বিক্রেতারাও। পাঁচ দিন ধরে বিকিকিনির পাশাপাশি থাকে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। |
গ্রামবাসীরা জানান, রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির ঘিরে উৎসব হলেও মন্দির সংলগ্ন এলাকায় রং খেলা হয় না। কারণ ওখানে রং খেলা হলে মন্দির যেমন নোংরা হবে, একই সঙ্গে অসুবিধায় পড়বেন দর্শনার্থীরা।
১৮৬৯ সালে ৮২ ফুট উঁচু রাধাগোবিন্দ জিউয়ের দ্বিতল মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন জগদানন্দপুর গ্রামের বাসিন্দা রাধামোহন ঘোষ চৌধুরী। মন্দিরটি বেলে পাথরের তৈরি। ১৯৬৭ সালে রাজ্য সরকারের পুরাতত্ত্ব বিভাগ মন্দিরটি অধিগ্রহণ করেছিল। রাধামোহনবাবুর পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বাবা কৃষ্ণদুলালের মৃত্যু পরে রাধাগোবিন্দ জিউ মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেন রাধামোহনবাবু। বৃন্দাবনের লালবাবু মন্দির দেখে তিনি বেলে পাথর দিয়ে মন্দির তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। জনশ্রুতি, মথুরা-বৃন্দাবন ও মির্জাপুর থেকে ভাগীরথী পথে দাঁইহাট পর্যন্ত বেলে পাথর নিয়ে আসা হয়। এর পরে খাল কেটে নৌকা করে তা জগদানন্দপুরে পৌঁছয়। মন্দিরটি তৈরির জন্য উত্তরপ্রদেশ থেকে ১৫-২০ জন কারিগর এসেছিলেন যাঁরা প্রায় ২০ বছর ধরে মন্দিরটি তৈরি করেন।
রাধমোহনবাবুর বর্তমান বংশধর, শেওড়াফুলির বাসিন্দা অমলেন্দুকৃষ্ণ চৌধুরী জানান, তাঁর কাকা রামেশ্বর ঘোষ চৌধুরী নদিয়ার মায়াপুরে গৌড়ীয় মঠের হাতে মন্দির পরিচালনার দায়িত্বভার তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেন, “দোলের সময় আমাদের পূর্ব পুরুষেরা ঘণ্টা-ঢোল বাজিয়ে প্রসাদ বিতরণ করতেন। ৪-৫ দিন ধরে উৎসব চলত। ওই মন্দিরের পরিচালক কিশোরীমোহন ব্রহ্মচারী বলেন, “মন্দিরকে রক্ষা করতে গ্রামবাসীদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তা হলেই এই মেলার উদ্যোগ সার্থক হবে।” |