গর্ভাবস্থার সাড়ে ৬ মাসেই কন্যা-সন্তানের জন্ম দিয়েছিলেন তিথি বেরা। সন্তানের ওজন ছিল মাত্র ৬৪০ গ্রাম! যা দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েছিলেন পরিবারের সকলে। বিস্মিত চিকিৎসকেরাও প্রথমে হতাশার সঙ্গেই জানিয়েছিলেন, ‘চেষ্টা করতে পারি। কিন্তু শিশুটিকে বাঁচানো যাবেই--এমন নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।’ কারণ, এই ধরনের ‘প্রি-ম্যাচিওর’ সদ্যোজাতকে বাঁচানোর পরিকাঠামো মেদিনীপুরের মতো মফস্সলে নেই। শেষ পর্যন্ত চিকিৎসক ও নার্সদের আন্তরিক চেষ্টাতেই প্রাণরক্ষা হল ওই সদ্যোজাত শিশুকন্যার। এক কথায়, প্রায়-অসম্ভবকেই সম্ভব করলেন সদর-শহরের চিকিৎসকেরা। ফের প্রমাণ হল, পরিকাঠামোর খামতি অনেক সময়েই ঢেকে দেওয়া সম্ভব সদিচ্ছার জোরে।
|
মায়ের কোলে পাঁচ মাসের তিয়াসা। — নিজস্ব চিত্র। |
যে চিকিৎসকের নেতৃত্বে এই অসাধ্যসাধন হয়েছে তাঁর ব্যাখ্যা, “আমেরিকার মতো উন্নতদেশ বলছে, ২০-২১ সপ্তাহের শিশুকেও বাঁচানো যায়। সে দেশের পরিকাঠামো উন্নত, তাই সম্ভব হয়। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত আমরা ধরে নিই, ২৮ সপ্তাহ পর্যন্ত শিশু মায়ের পেটে থাকলে তবেই তাকে বাঁচানো সম্ভব। ৩৫ সপ্তাহের আগে শিশুর গঠন সম্পূর্ণ হয় না। সদ্যোজাতের ওজন এক কেজি হলেও চেষ্টা করলে বাঁচানো যায়। সাড়ে ৮০০ গ্রাম, ৯০০ গ্রামের সদ্যোজাতকেও অনেক সময়ে বাঁচানো গিয়েছে। কিন্তু এই বাচ্চাটি যে একেবারে সাড়ে ৬০০ গ্রামেরও কম ছিল! তবু আমাদের চিন্তা ও নার্সদের ক্রমাগত চেষ্টায় প্রাণরক্ষা সম্ভব হয়েছে।” এই ঘটনা শহরের যে বেসরকারি নার্সিংহোমে, সেখানেও পরিকাঠামোর বহু ঘাটতি। তবু অসাধ্যসাধনের ঘটনায় খুশি সংশ্লিষ্ট সব মহলই।
এই শিশুকন্যাটির জন্ম হয়েছিল গত বছর ২৯ সেপ্টেম্বর। টানা ৫ মাস নার্সিংহোমে থাকার পরে মঙ্গলবারই তাকে ছেড়ে দেওয়া হল। এখন শিশুটির ওজন দেড় কেজি। নাম রাখা হয়েছে ‘তিয়াসা’। মেদিনীপুর শহরের হাতারমাঠের বাসিন্দা তিথি বেরা মেয়েকে কোলে নিয়ে বলেন, “আমার কাছে ওই চিকিৎসকেরা ভগবান। মেয়ের অবস্থা দেখে এক সময়ে শুধু কেঁদেছি। আজ খুব ভাল লাগছে। চিকিৎসক ও নার্সরা ছাড়া আমি আজ হাসিমুখে বাড়ি ফিরতে পারতাম না।” |