টাকা নয়ছয়-সহ নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে। এই অবস্থায় মেয়াদ ফুরোনোর আগেই ইস্তফা দিতে চলেছেন ওই প্রতিষ্ঠানের সম্পাদক স্বপন বসু। তাঁর পাল্টা অভিযোগ, রাজ্যের কারিগরি শিক্ষামন্ত্রী রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের প্রশ্রয়ে পরিষদের কিছু সদস্য তাঁর এবং প্রতিষ্ঠানের পরিচালকমণ্ডলীর নামে কুৎসা ছড়াচ্ছেন। এই পরিস্থিতিতে তাঁর পক্ষে সুষ্ঠু ভাবে পরিষদের কাজকর্ম চালানো সম্ভব নয়। তার জেরেই ইস্তফার সিদ্ধান্ত।
ঐতিহ্যবাহী এই সারস্বত প্রতিষ্ঠানে ‘সিন্ডিকেট-সংস্কৃতি’ মাথাচাড়া দিয়েছে বলে মঙ্গলবার অভিযোগ করেছেন সাহিত্য পরিষৎ রক্ষা সমিতি এবং সাহিত্য পরিষৎ সুহৃদ সমাজের সদস্যেরা। পরিষদের বর্তমান কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অসততা এবং বিদেশে প্রাচীন বই পাচারের মতো গুরুতর অভিযোগ তুলেছে ওই দু’টি সংগঠন। এর মধ্যে সাহিত্য পরিষৎ রক্ষা সমিতির সভাপতি রবিরঞ্জনবাবু। তিনি অবশ্য বলেন, “বিশেষ একটি রাজনৈতিক দলের সমর্থকদের আখড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে সাহিত্য পরিষৎ। সম্পাদক যদি ইস্তফা দেন, তা হলে বলব, ওঁর শুভ বোধ জেগেছে। এতে প্রতিষ্ঠানের ভালই হবে।”
সাহিত্য পরিষৎ রক্ষা সমিতি এবং সাহিত্য পরিষৎ সুহৃদ সমাজের পক্ষ থেকে এ দিন সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক এবং তাঁর এক নিকটাত্মীয়ের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনা হয়। বর্তমান পরিচালন সমিতির কয়েক জন কর্মাধ্যক্ষের বিরুদ্ধেও তাদের একই অভিযোগ। ওই দুই সংগঠনের পক্ষে সঞ্জয় ভট্টাচার্য এ দিন বলেন, “ভবন সংস্কারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া অর্থের মধ্যে এক কোটি সাড়ে ২২ লক্ষ টাকা খরচ করা হয়েছে। কিন্তু দরপত্র ডাকা হয়েছে মাত্র সাড়ে ১৬ লক্ষ টাকার কাজের জন্য।” ভবন সংস্কারের সময় ‘স্ক্র্যাপ’ বা ছাঁট-সামগ্রী বিক্রি করে বর্তমান পরিচালন সমিতি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলেও অভিযোগ করেছেন সঞ্জয়বাবু।
দু’টি সংগঠনের আরও অভিযোগ, পুরনো বই ‘ডিজিটাইজ’ করে যে-সিডি তৈরি হয়েছে, প্রতিষ্ঠানের বর্তমান সম্পাদক সেটি থেকে কপি করে অন্য দেশের কয়েক জন লেখকের কাছে পাচার করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা এই সব অভিযোগের জবাবে সাহিত্য পরিষদের সম্পাদক বলেন, “লিখিত ভাবে এই সব অভিযোগ পেলে আমি তথ্য-সহ জবাব দিতে প্রস্তুত। এর আগে পুলিশ এবং ভিজিল্যান্স কমিশনও পরিচালন সমিতির বিরুদ্ধে এই ধরনের অভিযোগের তদন্ত করে কিছু পায়নি।” লিখিত ভাবে ওই সব অভিযোগ আনা হলে তিনি আদালতে যেতে পারেন বলেও জানিয়েছেন স্বপনবাবু।
পরিচালন সমিতির পক্ষ থেকে পরিষদের বার্ষিক সভার কথাও সাধারণ সদস্যদের জানানো হয়নি বলে এ দিন অভিযোগ করা হয়। অভিযোগকারী দুই সংগঠনের পক্ষে শঙ্করপ্রসাদ নস্কর বলেন, “পরিষদে নির্বাচনের নামে প্রহসন চলে। ভোটার তালিকা দেওয়া হয়নি আমাদের। ডাকের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দের সদস্যদের বাড়িতে ব্যালট পেপার পৌঁছে দেওয়া হয়।” জবাবে স্বপনবাবু বলেন, “এই অভিযোগও লিখিত ভাবে জানালে তথ্য-সহ জবাব দিতে পারি।” |