এ বারের মাধ্যমিকের শুরুটাই হয়েছিল বিভ্রান্তি দিয়ে। শেষ দিনের পরীক্ষাতেও বিতর্ক পিছু ছাড়ল না।
মঙ্গলবার মাধ্যমিকের অঙ্ক প্রশ্নপত্রের দু’টি প্রশ্নকে কেন্দ্র করে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়। দু’টি ক্ষেত্রেই বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে বাংলা ভাষায় লেখা প্রশ্নকে কেন্দ্র করে। মধ্যশিক্ষা পর্ষদের তরফে একে ‘ছাপার ভুল’ বলে চিহ্নিত করা হলেও মাধ্যমিকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষায় দু’টি প্রশ্নে এমন ভুলের জেরে বিভ্রান্ত হয়ে পড়ে পরীক্ষার্থীরা। পর্ষদ অবশ্য জানিয়েছে, ছাত্রছাত্রীদের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। ছাত্রস্বার্থের কথা মাথায় রেখেই খাতা দেখা হবে।
এ দিনের পরীক্ষায় মূলত বিভ্রান্তি তৈরি হয় ৯এ এবং ১৪এ প্রশ্ন দু’টিকে কেন্দ্র করে। দু’টি প্রশ্নেই তিন করে মোট ছ’নম্বর রয়েছে। বাংলা প্রশ্নপত্রে ৯এ নম্বর প্রশ্নে গোলকের ব্যাসার্ধের মান নির্দিষ্ট করে দিয়ে একটি ‘প্রমাণ’ করতে দেওয়া হয়েছে। ইংরেজি প্রশ্নে ওই গোলকের ‘ডায়ামিটার’ বা ব্যাসের মান নির্দিষ্ট করা হয়েছে। অর্থাৎ ‘ব্যাস’ আর ‘ব্যাসার্ধ’ এই দু’টি শব্দ নিয়েই যত গোল। ১৪এ প্রশ্নে বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে ‘ইউনিট’ বা একক নিয়ে। অঙ্কের শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানিয়েছেন, ৯এ-তে একটি ‘প্রমাণ’ করতে দেওয়া হয়েছে। অথচ প্রশ্নের তথ্যেই ভুল। এক শিক্ষিকা বলেন, “গোলকের ব্যাসের মান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ধরে নিয়ে অঙ্কটা কষলে প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু ব্যাসার্ধের মান নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে ধরলে আর সেই ‘প্রমাণ’ করা যাবে না। ইংরেজি প্রশ্নপত্রে যে-অঙ্কটা দেওয়া হয়েছে, সেটাই ঠিক।” ওই শিক্ষক-শিক্ষিকারা জানাচ্ছেন, ১৪এ প্রশ্নটি ভুল না-হলেও সেখানে এককের গোলমাল রয়েছে। তাই উত্তরটাও গোলমেলে আসবে। এ ক্ষেত্রেও ইংরেজিতে একক নিয়ে গোলমাল হয়নি।
মধ্যশিক্ষা পর্ষদের সভাপতি চৈতালি দত্তের অবশ্য দাবি, “বিশেষজ্ঞদের দিয়ে প্রশ্নপত্র দেখানো হয়েছে। তাঁরা জানিয়েছেন, অঙ্ক দু’টোয় পদ্ধতিগত কোনও ভুল নেই। বাংলা বা ইংরেজি, যে-ভাষার প্রশ্ন দেখেই ছাত্রছাত্রীরা সেগুলি করে থাকুক, কষার পদ্ধতি ঠিক হলে নম্বর দিয়ে দেওয়া হবে।” প্রশ্নপত্রের এই বিভ্রান্তিকে ‘ছাপার ভুল’ বলে চিহ্নিত করেছেন পর্ষদ-সভাপতি। তিনি বলেন, “প্রশ্ন যখন তৈরি হয়েছে, তখন আমি দায়িত্বে আসিনি। তা ছাড়া পর্ষদের সভাপতি বা সচিব তো প্রশ্নপত্র দেখেন না। প্রশ্ন তৈরির কোন স্তরে ভুলটা হয়েছে, সেটাও এখন বোঝা যাবে না। তবে অসতর্কতাবশতই এই ভুল হয়েছে। তা ছাড়া অঙ্ক দু’টি তো বাধ্যতামূলক নয়!”
মাধ্যমিকের প্রথম দিনেই প্রশ্নপত্র-বিভ্রাটে বেশ কিছু কেন্দ্রে দুর্ভোগে পড়তে হয়েছিল পরীক্ষার্থীদের। কোথাও নতুন পাঠ্যক্রমের পরীক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছিল পুরনো পাঠ্যক্রমের প্রশ্নপত্র। কোথাও পুরনো পাঠ্যক্রমের পড়ুয়াদের দেওয়া হয় নতুন পাঠ্যক্রমের প্রশ্ন। মঙ্গলবার অঙ্ক পরীক্ষায় বিভ্রান্তি দিয়েই কার্যত শেষ হয়ে গেল মাধ্যমিক। আজ, বুধবার আছে অতিরিক্ত বিষয়ের পরীক্ষা। যদিও পরীক্ষার ফলাফলে অতিরিক্ত বিষয়ের নম্বরের প্রতিফলন থাকবে না বলে ও এই পরীক্ষায় বসা বাধ্যতামূলক নয় বলে অনেক পরীক্ষার্থীই এখন অতিরিক্ত বিষয় নেয় না।
|