দোল-ব্যবসা
বিদেশিদের ঘর ভাড়া দিয়ে ঠিকানা বদলেছে ঢাকানগর
ত সাত দিন ধরে গৌরসুন্দর দাস সপরিবারে রাস্তার ধারে বারান্দায় রাত কাটাচ্ছেন। অন্য এক বাসিন্দা জয় দাস তাঁর নিজের সাজানো বসতবাড়ি ছেড়ে আশ্রয় নিয়েছেন জীর্ণপ্রায় একটি বাড়িতে। নীলু মাঝি অবশ্য সব ঘর ছেড়ে কোনও রকমে একটা ঘরে মাথা গুঁজে আছেন দিন চারেক ধরে। আরও সপ্তাহ খানেক এ ভাবেই থাকতে হবে তাঁদের।
ওঁরা সকলেই নবদ্বীপ পুরসভার ১৯ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের কোলেরডাঙা, ঢাকানগর এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। আর ওই কোলেরডাঙা এলাকাতেই একাধিক বড় বড় মঠে দোল উপলক্ষে কয়েক হাজার বিদেশি এবং দেশি ভক্তদের সমাগম হয়। ফলে মাথা গোঁজার ঠাঁই পাওয়া যায় না। এই অবস্থায় দোল উপলক্ষে ওই এলাকায় ভাড়া বাড়ির ব্যাপক চাহিদা। তার সুযোগ নিয়ে অস্থায়ী আস্তানা হিসেবে ওই বিদেশি ভক্তদের কাছে চড়া ভাড়ায় নিজেদের বাড়ি ছেড়ে দিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা এ ক’দিন কোনও রকমে দিন গুজরান করেন অন্যত্র। যত দিন যাচ্ছে এ ব্যবসা ততই বাড়ছে।
দৈনিক ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত ঘরপিছু ভাড়া। সাত-দশ-পনেরো দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত ওই বাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়ে থাকে। এ জন্য এককালীন মোটা অঙ্কের টাকাও মিলছে, যা রোজগার হিসেবে মন্দ নয় বলে এলাকার বাসিন্দারা জানান। ফলে বড় বড় মঠ-মন্দির এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থারও বেশ খানিকটা বদল ঘটেছে। পুরসভার শেষ প্রান্তে দক্ষিণ দিকে যার পরেই নবদ্বীপ-কৃষ্ণনগর রাজ্য সড়ক শুরু, সেই এলাকা গত ৮-১০ বছর আগেও জলা-জঙ্গলে ভরা ছিল। এখন সেই জায়গা চেনার উপায় নেই। এলাকার ছবিটাই বদলে গিয়েছে।
কেশবজী গৌড়ীয় মঠের মধুসূদন মহারাজ বলেন, “প্রায় ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মন্দির তৈরি হয়েছে। এখনও কাজ চলছে। এ বারে প্রায় ২০ হাজার ভক্ত এসেছেন। তার মধ্যে রয়েছেন বিভিন্ন দেশের প্রায় দেড় হাজার বিদেশি ভক্ত। এত মানুষকে পরিপূর্ণ পরিষেবা দেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয় মানুষেরা গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাঁদেরও কিছু আর্থিক সুরাহা হয়।” ফলে দোল উৎসবের সময়ে রূপ বদলে যায় অত্যন্ত গরীব এলাকা বলে পরিচিত কোলেরডাঙা বা ঢাকানগরের।
স্থানীয় বাসিন্দা গৌরসুন্দর দাস উৎসবের সময়ে চায়ের দোকান খুলে বসেন। সেই সঙ্গে আইসক্রীম, লস্যি, সরবতও বিক্রি করেন তিনি। তাঁর কথায়, “আমার বাড়ির চারটে ঘরই ভাড়া দিয়েছি। কটা দিন তো! বারান্দায় শুয়ে থাকছি।” নীলু মাঝি বা জয় দাসের মত কেউ ৫টা, কেউ আবার ৬টা ঘর ভাড়া দিয়েছেন বিদেশিদের। নীলুবাবু বলেন, “সাত দিন ধরে নবদ্বীপ মহামণ্ডল পরিক্রমার জম্য মঠের ১৮ থেকে ২০ হাজার ভক্ত আসেন। প্রায় ১০ দিন থাকেন। ভারতীয়রা মন্দিরের ঘর, মঠ-মন্দিরে এবং চত্বরে বিরাট মণ্ডপে থাকতে পারেন। বিদেশিদের জন্য এই রকম কোনও থাকার ব্যবস্থা নেই। ওই বিদেশিদের ঘর ভাড়া দেওয়ার জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ধার-দেনা করে নতুন ঘর বানানোর পাশাপাশি শৌচালয় সংস্কারও করতে শুরু করেছেন।”
মঠের বর্তমান আচার্য ভক্তি বেদান্ত মাধব মহারাজ এবারের উৎসব প্রসঙ্গে বলেন, “সাত দিন ধরে পরিক্রমা চলবে। ২০ হাজার ভক্ত এসেছেন। ঘর ভাড়া দিয়ে আর্থিক ভাবে এলাকাবাসী উপকৃত হন, তা আমরাও চাই। বিদেশিদের আমরাই পরামর্শ দিয়ে থাকি কারও বাড়িতে নিশ্চিন্তে থাকার জন্য।” কোলেরডাঙা আপাতত তাই বিদেশীদের দখলে!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.