সোনার দোকানে ডাকাতির ঘটনার তদন্তে এসেছিল তামিলনাড়ুর থিরিপ্পু থানার পুলিশ। ফরাক্কার লাগোয়া বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিন যুবককে আটকও করেছিল ভিন-প্রদেশের ওই পুলিশকর্মীরা। কিন্তু তাদের নিয়েই চেন্নাই ফিরে যাওয়ার আগে সোমবার রাতে নিউ ফরাক্কা স্টেশনে ধৃতদের এক আত্মীয়কে পিটিয়ে মারার অভিযোগে জড়িয়ে পড়ল তামিলনাড়ুর ওই চার পুলিশ কর্মী।
কেন? মির্জা বকুল আলি (৩০) নামে ওই যুবক ডাকাতির ঘটনায় ধৃত তার জামাইবাবু মির রাজ আলির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন বলে বাড়ির লোক জানিয়েছেন। কিন্তু মঙ্গলবার সকালে তাঁর দেহ মিলল ফরাক্কা থানা থেকে খানিক দূরে এক নর্দমার মধ্যে। অভিযোগ, তামিলনাডু পুলিশের ওই কর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছেন। পিটিয়ে মারার কথা না মানলেও দক্ষিণ ভারতীয় ওই পুলিশ কর্মীদের সাফাই, ধৃতদের সঙ্গে দেখা করার জন্য বার বার আব্দার করতে থাকায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওই পুলিশ কর্মীরা লাঠি নিয়ে বকুলকে তাড়া করেছিলেন। আর সেই সময়েই অন্ধকারে পালাতে গিয়ে একটি নালার মধ্যে পড়ে মারা যান বকুল। |
ফরাক্কা থানার পুলিশ অবশ্য তামিলনাডু পুলিশের কথাই সমর্থন করছে। তারা জানায়, ভিন দেশি ওই চার পুলিশ কর্মীই আহত বকুলকে নালা থেকে তুলে হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বেকাদায় পড়ে মাথায় চোট পাওয়া বকুল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই মারা যান। মুর্শিদাবাদ জেলা পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “বকুলের মৃত্যুর তদন্ত শুরু হয়েছে। তামিলনাডুর ওই চার পুলিশকর্মীকেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মৃতের বাড়ির তরফে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে সেই মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” ফলে ‘চোর’ ধরতে এসে তামিলনাডু পুলিশের চার কর্মীই এখন জেলা পুলিশের ঘেরাটোপে।
তামিলনাড়ুর একটি দোকানে ১৯ ফেব্রুয়ারি রাতে প্রায় সাত কোটি টাকার সোনা ও হিরে চুরি হয়। শনিবার সে রাজ্যের সিআইডির ডাকাতি দমন বিভাগের অফিসারদের নিয়ে ফরাক্কায় দুষ্কৃতীদের খোঁজে তল্লাশি চালায় একটি দল। একটি হোটেল থেকে ওই তিন জনকে গ্রেফতারও করা হয়। ধৃতদের দু’জন ফরাক্কার দেলওয়াড়পুর গ্রামের বাসিন্দা। নাম, হাকিমুল শেখ ও মির রাজ আলি। অন্যজন ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জের সুভেনটোলা গ্রামের জিয়াউল শেখ। ধৃতদের জঙ্গিপুর মহকুমা আদালতে হাজির করানো হলে আদালতের নির্দেশে তাদের পাঁচ দিনের ট্রানজিট রিমান্ডে তামিলনাড়ূ নিয়ে যাচ্ছিলেন ওই পুলিশ কর্মীরা।
সেই সময়ে মির রাজ আলির সঙ্গে দেখা করে তাকে জামা-কাপড় দিতে গিয়েছিলেন বকুল আলি আর তাঁর তিন আত্মীয়। বকুলের সঙ্গী মির মুকুল আলি বলেন, “আমরা দাদার সঙ্গে দেখা করে জামা-কাপড় দেওয়ার চেষ্টা করতেই লাঠি উঁচিয়ে তেড়ে আসে ওই পুলিশ কর্মীরা। আমরা পালিয়ে গেলেও বকুল ধরা পড়ে যায়। আধঘণ্টা পরেও ওকে দেখতে না পেয়ে আমরা খোঁজ শুরু করি। জানতে পারি, একটা নালা থেকে বকুলের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ ওই বেনিয়াগ্রাম স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়েছে। মুকুলের অভিযোগ, “তামিলনাড়ুর ওই পুলিশকর্মীদের আমরা বোঝানোর চেষ্টা করি। কিন্তু ওঁরা ভাষা না বুঝতে পারায় আমাদের উপরে চোটপাট করতে থাকেন। আমাদের চোখের সামনেই বকুলকে লাঠি দিয়ে পেটাতে শুরু করে। আমাদের সন্দেহ পুলিশের মারেই মৃত্যু হয়েছে তার।” |