|
|
|
|
অবশেষে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর গ্রেডিংয়ে জোর প্রশাসনের |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
স্বর্ণজয়ন্তী স্বরোজগার যোজনা (এসজিএসওয়াই) প্রকল্পে স্বনির্ভর গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে হাজার হাজার। কিন্তু তার পর গোষ্ঠীর উন্নয়ন নিয়ে প্রশাসনিক কর্তাদের তেমন হেলদোল ছিল না। যে সব গোষ্ঠী নিজেরা উদ্যোগী হত কেবলমাত্র তারাই সরকারি সাহায্য বা সহযোগিতা পেত। বাকিরা থেকে গিয়েছে সেই তিমিরেই। অনেক গড়িমসির পর এ বার প্রশাসন ওই সব ‘পিছিয়ে পড়া’ গোষ্ঠীগুলিকে সচল করতে উদ্যোগী হল। গ্রেডিংয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রোজেক্টের সঙ্গেও গোষ্ঠীগুলিকে যুক্ত করে দেওয়া হচ্ছে। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা গ্রামোন্নয়ন দফতরের প্রোজেক্ট ডিরেক্টর অরিন্দম দত্ত বলেন, “এই প্রকল্পের মেয়াদ কিছু দিনের মধ্যেই শেষ হতে চলেছে। তাই দ্রুত গ্রেডিং বা প্রোজেক্টের আওতায় না নিয়ে আসতে পারলে গোষ্ঠীগুলি বঞ্চিত হবে। তাই আমরাও বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখার পাশাপাশি দ্রুত পদক্ষেপ করছি।”
এই জেলায় এসজিএসওয়াই প্রকল্পে ৩৪ হাজার ৯৬০টি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পটি চলতি মাসেই শেষ হয়ে যাবে। পরিবর্তে নতুন প্রকল্প এসেছে এনআরএলএম। কিন্তু পুরনো প্রকল্পের গোষ্ঠীগুলিকে এই নতুন প্রকল্পের আওতায় নিয়ে আসা যাবে কি না, নতুন প্রকল্প থেকে সাহায্য বা সহযোগিতা করা যাবে কি না--সে বিষয়ে প্রশাসনের কাছে এখনও কোনও নির্দেশিকা পৌঁছয়নি। অথচ, দেখা যাচ্ছিল, প্রায় ৩৫ হাজার গোষ্ঠীর মধ্যে সাড়ে ৭ হাজার গোষ্ঠীর কোনও গ্রেডিংই হয়নি। যে সব গোষ্ঠীর প্রথম গ্রেডিং হয়েছে তাদের বেশিরভাগেরও আবার দ্বিতীয় গ্রেডিং হয়নি। আবার দ্বিতীয় গ্রেডিং হওয়া বহু গোষ্ঠী প্রোজেক্টের আওতায় আসেনি। কয়েকটি মাত্র গোষ্ঠীকে প্রোজেক্টের আওতায় নিয়ে আসা গেলেও তারা সে ভাবে সফল হয়নি। হাজার সমস্যায় জেরবার হচ্ছে গোষ্ঠীগুলি। গুটিকয় গোষ্ঠী ছাড়া কেউই সে ভাবে উন্নতি করতে পারেনি বা স্বনির্ভর হতে পারেনি। ফলে নতুন গোষ্ঠীও বেশি তৈরি হচ্ছিল না। কারণ, পাশাপাশি থাকা গোষ্ঠীগুলির দুরবস্থা দেখে অন্যরা আগ্রহ প্রকাশ করছিল না। এত দিনে গোষ্ঠীগুলির প্রতি নজর দিচ্ছে প্রশাসন। তাও প্রকল্পটি চলতি মাসের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে বলেই বিশেষ তৎপরতা শুরু হয়েছে। এক মাসের মধ্যে বঞ্চিত গোষ্ঠীগুলিকে কিছুটা এগিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে কিছু উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে, এত অল্প সময়ে কতটা কাজের কাজ হবে, সে নিয়ে বিস্তর সংশয় রয়েছে। প্রশাসনিক কর্তাদের আশা, এসজিএসওয়াই প্রকল্পের পরিবর্তে যে এনআরএলএম প্রকল্প নিয়ে আসছে কেন্দ্রীয় সরকার, তাতে পুরনো গোষ্ঠীগুলিকে ভবিষ্যতে আওতাভুক্ত করা হবে। তখন ওই গোষ্ঠীগুলিকে আরও সাহায্য করা সম্ভব হবে।
সে জন্য পুরনো গোষ্ঠীগুলির গ্রেডিং এবং তাদের প্রোজেক্টের আওতাভুক্ত করা জরুরি। সেই কাজেই এখন জোর দেওয়া হচ্ছে। গত বছর এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ৭ মাসে জেলায় যা কাজ হয়েছিল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি---৪ মাসে তার চেয়ে অনেকটাই এগিয়েছে প্রশাসন। প্রশাসনিক পরিসংখ্যান বলছে, ৭ মাসে যেখানে প্রথম গ্রেডিং হয়েছিল ১৮৩০ গোষ্ঠীর, সেখানে ৪ মাসেই প্রথম গ্রেডিং হয়েছে ৩ হাজার ১৪০টি। আর দ্বিতীয় গ্রেডিং যেখানে হয়েছিল ৪২০টি, সেখানে এ বার হয়েছে ১৫১১টি। এই গ্রেডিং অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, প্রতিটি গ্রেডিংয়ে প্রতিটি গোষ্ঠী ১০ হাজার টাকা করে আবর্তনীয় তহবিলের টাকা পায়। যে টাকা দেয় সরকার। আর ওই টাকা কাজে লাগিয়ে কয়েকগুণ ব্যাঙ্ক ঋণ পায় গোষ্ঠীগুলি। যা থেকে মুরগি পালন, গো-পালন, জৈব সার তৈরি, মৎস্য চাষ-সহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ করা সম্ভব। সে জন্যও সরকার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত ঋণ ছাড় দেয়। আগের ৭ মাসে যেখানে ২৩৪টি গোষ্ঠীকে প্রোজেক্টের আওতায় নিয়ে আসা গিয়েছিল, সেখানে এই ৪ মাসেই ২৬১টি গোষ্ঠীকে প্রোজেক্টের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। ফলে গত বার যেখানে গোষ্ঠীগুলির জন্য মাত্র ২ কোটি ১৮ লক্ষ টাকা খরচ করা গিয়েছিল এ বার সেখানে ৪ কোটি ২২ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। অথচ, আগে টাকা থাকলেও কেবলমাত্র প্রশাসনিক উদাসীনতার জন্য কাজ এগোয়নি বলে অভিযোগ। ফলে, স্বনির্ভর গোষ্ঠীগুলি হতোদ্যম হয়ে পড়ছিল। কিন্তু এখন দ্রুত কাজের জেরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন দফতরের কাছে আরও ৬ কোটি টাকা চাওয়া হয়েছে। এ ভাবে চলতে থাকলে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর জগতে ফের জোয়ার আসবে বলেই সকলের আশা। লাভবান হবেন গরিব মহিলারা। |
|
|
|
|
|