কোর্টে সুশান্তকে চটির বাড়ি, প্রশ্ন নিরাপত্তা নিয়ে
ঙ্কাল-মামলায় অভিযুক্ত হয়ে যতবারই মেদিনীপুর আদালতে এসেছেন সুশান্ত ঘোষ, বাইরে বিক্ষোভ হয়েছে। মঙ্গলবার প্রাক্তন মন্ত্রী তথা বর্তমান বিধায়ককে চটি দিয়ে সপাটে মারল এক যুবক। এর জেরে নিরাপত্তার ব্যাপারে রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সুশান্তবাবু। তাঁর অভিযোগ, “আক্রান্ত হতে পারি, এমন আশঙ্কা ছিলই। কিন্তু রাজ্য সরকারের কাছে আবেদন করেও রক্ষী পাইনি। রাজ্য সরকারই হয়তো চাইছে আক্রান্ত হই।”
দাসেরবাঁধ কঙ্কাল-কাণ্ডে ১৭ জন জেলবন্দি এবং জামিন পাওয়া ৩ জনের (সুশান্তবাবু ছাড়া তাঁর এক সময়ের আপ্ত-সহায়ক দেবাশিস পাইন এবং গড়বেতার সিপিএম কর্মী কিরীটী রায়ের শর্তাধীন জামিন মঞ্জুর করেছে কলকাতা হাইকোর্ট) এ দিন হাজিরা ছিল মেদিনীপুরের চতুর্থ অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অভিজিৎ সোমের এজলাসে। আদালত থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িতে উঠছিলেন সুশান্তবাবু, তখনই তাঁর গালে-মাথায় চটি দিয়ে মারে এক যুবক। উত্তেজনা ছড়ায় আদালত চত্বরে। দু’পক্ষের আইনজীবীরা পর্যন্ত বচসা-হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে অবশ্য প্রবীণ আইনজীবীদের মধ্যস্থতায় পরিস্থিতি আয়ত্তে আসে। ওই যুবককে গ্রেফতার করে পুলিশ। যুবকের বিরুদ্ধে রাতেই মেদিনীপুর কোতয়ালি থানায় খুনের চেষ্টার অভিযোগ দায়ের করেন সুশান্তবাবু। ওই যুবকের ছেলে আবার পাল্টা মারধরের অভিযোগ দায়ের করেছেন দুই আইনজীবী-সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে।
সেই মুহূর্ত। আদালত থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠার সময়েই সুশান্ত
ঘোষকে চটি মারে এক যুবক। মঙ্গলবার সৌমেশ্বর মণ্ডলের তোলা ছবি।
আদালত চত্বরে সুশান্তবাবুকে হেনস্থা করার ঘটনায় ক্ষুব্ধ সিপিএম প্রশ্ন তুলেছে গড়বেতার বিধায়কের নিরাপত্তা নিয়েই। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক বিমান বসু বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘তৃণমূল-পুষ্ট কিছু দুষ্কৃতী এজলাসের ঘরের বাইরে সুশান্ত ঘোষকে হেনস্থা করেছে। আমরা বুঝতে পারছি না, এটা কী করে সম্ভব’! পাশাপাশিই বিমানবাবুর বক্তব্য, ‘বিধায়ক হিসাবে এখনও সুশান্তবাবুকে নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি। রাজ্যে আইনের শাসন বলবৎ করতে বর্তমান তৃণমূল সরকার যে ব্যর্থ হচ্ছে, এই ঘটনা তার নমুনা’। বিধায়ককে হেনস্থার ঘটনায় যুক্ত ‘অপরাধীদের শাস্তি’ দাবি করেছেন বিমানবাবু।
নিরাপত্তা পর্যালোচনার জন্য গঠিত সরকারি কমিটিই ইতিমধ্যে সুশান্তবাবুর জন্য ‘ওয়াই প্লাস’ ক্যাটিগরির নিরাপত্তার বন্দোবস্ত রাখার সুপারিশ করেছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও সুশান্তবাবু কেন নিরাপত্তা পাননি, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রও। নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে সুশান্তবাবু বিধানসভার স্পিকারকে চিঠি দিয়েছিলেন। বিরোধী দলনেতাও এই নিয়ে কথা বলেন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিবের সঙ্গে। তার পরেও রাজ্য সরকারের মনোভাবে ক্ষুব্ধ সিপিএম নেতৃত্ব। দলের এক রাজ্য নেতার কথায়, “সুপ্রিম কোর্টের শর্ত অনুযায়ী, নির্দিষ্ট দিনে আদালতে হাজিরা না-দিলে সুশান্তবাবুর জামিন আবার নামঞ্জুর হয়ে যেতে পারে। সুশান্তবাবুর যে জীবনের ঝুঁকি আছে, সাধারণ জ্ঞান থেকেই তা বোঝা যায়। তার পরেও কেন তিনি নিরাপত্তা পাবেন না, সেটাই বিস্ময়কর!” রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী মদন মিত্র বলেন, “ওঁকে লোকে জুতো মেরে থাকলে আমি কী করব? মানুষ তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে।” প্রাক্তন মন্ত্রীর নিরাপত্তা যথেষ্ঠ কি না, তা জানতে চাইলে মদনবাবু বলেন, “নিরাপত্তার ব্যাপারে পুলিশ যা করা উচিত, তা-ই করবে।”
পুলিশের দাবি, বিধায়কের হাজিরার কথা ভেবে আদালত চত্বরে বাড়তি পুলিশই মোতায়েন করা হয়েছিল। কঙ্কাল-মামলায় অভিযুক্তদের অন্যতম আইনজীবী প্রদীপ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “পুলিশের গাফিলতির জন্যই এই ঘটনা।”
জামিনে মুক্ত সুশান্তবাবু, দেবাশিস পাইন মঙ্গলবার সকাল ১০টা নাগাদ কলকাতা থেকে মেদিনীপুর আদালতে এসে পড়েন। পরে জেলবন্দি অন্য অভিযুক্তদেরও আদালতে হাজির করানো হয়। তবে আলিপুর থেকে বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি শক্তি ভট্টাচার্যের আসতে দেরি হওয়ায় মামলা শুরু হয় দেরিতে। তাঁর দেরি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন বিচারকও। সকাল থেকেই আদালত চত্বরে বিক্ষোভ চলছিল। মূলত গড়বেতার তৃণমূল কর্মী-সমর্থকেরাই আদালত চত্বরে ভিড় করেছিলেন। কেউ কেউ কঙ্কাল সেজেও এসেছিলেন। দুপুর পৌনে তিনটে নাগাদ এজলাস থেকে বেরিয়ে যখন গাড়িতে উঠছিলেন সুশান্তবাবু, তখনই শ্যামাপদ কুণ্ডু নামে গড়বেতার আমলাগোড়ার এক যুবক তাঁর গালে ও মাথায় চটি দিয়ে মারে। তার অভিযোগ, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে সে সিপিএমের হাতে অত্যাচারিত হয়েছে। মার খেয়ে ৬ বার হাসপাতালেও ভর্তি হয়েছে। শুধু বিরোধী বলেই তার দুই ছেলেকে স্কুলে ভর্তি নেওয়াও হয়নি। সুশান্তবাবুর আইনজীবীরাই তাকে ধরে আদালতের মধ্যে নিয়ে যান। তখন অন্য এক দল আইনজীবী আবার প্রশ্ন তোলেন, কেন পুলিশ থাকতে আইনজীবীরা ধরপাকড়ের কাজে হাত লাগাচ্ছেন। এই নিয়েই দু’পক্ষে হাতাহাতি বাধে। পরে পুলিশ শ্যামাপদকে গ্রেফতার করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
কঙ্কাল-মামলায় এ দিনও অবশ্য চার্জ গঠন হয়নি। অভিযুক্তপক্ষের আইনজীবীরা চার্জশিটের সব কাগজপত্র পাননি বলে এ দিনও বিচারকের কাছে অভিযোগ করেন। অন্য দিকে, কী কী কাগজপত্র অভিযুক্তপক্ষকে দেওয়া হয়েছে, তার তালিকা পেশ করে সরকারপক্ষ। দু’পক্ষের বক্তব্য শুনে বিচারক আগামী ১৬ এপ্রিল এই মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেন। ওই দিন চার্জ গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.