|
|
|
|
নিত্য ভোগান্তি হলদিয়ায় |
ট্রাক টার্মিনাস তৈরি হয়নি এখনও |
দেবমাল্য বাগচি • হলদিয়া |
রাজ্যে শিল্পায়নের ‘মুখ’ হলদিয়া বিপর্যস্ত ‘পার্কিং’য়ের সমস্যায়। অথচ শিল্পশহরে নিত্য যাতায়াত অসংখ্য ট্রেলার-ট্যাঙ্কারের। কিন্তু ‘ট্রাক টার্মিনাস’ই নেই। ফলে সাধারণের চলাফেরা দুর্বিষহ হয়ে উঠছে দিনে দিনে। রাস্তায় গাড়ি দাঁড় করিয়েই দিনের পর দিন চলছে লোডিং-আনলোডিং। হলদিয়া-মেচেদা ৪১ নম্বর জাতীয় সড়ক, হলদিয়া পেট্রোকেমিক্যাল লিঙ্করোডসবেরই এক হাল। ভারী যানবাহন দাঁড় করিয়ে লোডিং-আনলোডিংয়ে যেমন রাস্তার ক্ষতি, তেমনই বাড়ছে দুর্ঘটনাও।
সমস্যার কথা সবারই জানা। অভিযোগ, হেলদোল নেই কারও। বছর দশেক আগে কথা হয়েছিল, সমস্যা সমাধানে উদ্যোগী হবে হলদিয়া পুরসভা। ট্রাক টার্মিনাস গড়ার জন্য হলদিয়া উন্নয়ন পর্ষদের তরফে পুরসভাকে প্রায় ১৫ একর জায়গাও দেওয়া হয়। বন্দর কর্তৃপক্ষও পৃথক ভাবে প্রায় ১০ একর জায়গা দেয় পুরসভাকে। অথচ বছরের পর বছর পেরিয়ে গেলেও কিছুই না হওয়ায় বছর পাঁচেক আগে এইচডিএ ওই জমি ফিরিয়ে নেয়। আড়াই মাস আগে পুরসভার হাতছাড়া হয়েছে বন্দরের জমিও। উপ-পুরপ্রধান নারায়ণ প্রামাণিকের যুক্তি, “আমরা চেয়েছিলাম কাজটা করতে। কিন্তু অর্থের অভাবে তা বাস্তবায়িত করা যায়নি। বন্দর কর্তৃপক্ষ ও এইচডিএ জমি ফিরিয়ে নিয়েছেন।”
উন্নয়ন পর্ষদ ওই ‘ট্রাক টার্মিনাস’ প্রকল্প হলদিয়া লিঙ্করোডের ধারে একটি বেসরকারি সংস্থাকে হস্তান্তরিত করেছে। তাতেও কাজ বিশেষ হচ্ছে না বলেই অভিযোগ শিল্পনগরীর বাসিন্দা থেকে শুরু করে পরিবহণ ব্যবসায়ীদের। স্থানীয় পরিবহণ ব্যবসায়ী জগৎ বেরার কথায়, “পার্কিং জোনের খুব প্রয়োজন। আমরা চাই, উন্নত পরিকাঠামো-সম্পন্ন ট্রাক টার্মিনাস গড়ে উঠুক। সড়কেই ট্রাক-ট্রেলার সারিবদ্ধ ভাবে দাঁড়িয়ে থাকছে। সমস্যা তো হচ্ছেই।”
জাতীয় সড়ক সংযোগকারী পেট্রোকেমিক্যাল লিঙ্করোডে সমস্যা আরও প্রকট। ওই সড়কের ধারেই ছোটবড় নানা শিল্পকারখানার অবস্থান। সেখানে যেমন রয়েছে সাধারণের আনাগোনা, তেমনই রয়েছে শিল্পসামগ্রী বহনে ব্যবহৃত যানের যাতায়াত। ইদানীং মঞ্জুশ্রী থেকে সিটিসেন্টার--টানা সাড়ে ৭ কিলোমিটারের ওই পথেই ট্যাঙ্কার-ট্রেলারের ‘পার্কিং’ চলছে অবাধে। সব মিলিয়ে ভোগান্তি চরমে। এ ছাড়াও জাতীয় সড়কের শেষপ্রান্ত রানিচকে বন্দরমুখী রাস্তা সংকীর্ণ ও রেলগেট থাকায় রাতে যানজটের সমস্যা চলছেই। রাস্তার ধারে দঁড়িয়ে থাকা গ্যাস ও তেলবাহী ট্যাঙ্কারে দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে।
স্থানীয় বাসিন্দা, পেশায় চিকিৎসক অসিতকুমার ভুঁইয়ার কথায়, “এ ভাবে ট্রাক, ট্যাঙ্কার যদি দাঁড়িয়ে থাকে, দুর্ঘটনার আশঙ্কা বাড়বেই। প্রশাসনিক নজরদারি অনেক কঠোর করতে হবে। উপযুক্ত ব্যবস্থা-সম্পন্ন ট্রাক টার্মিনাস প্রয়োজন।” হলদিয়ার মহকুমা পুলিশ আধিকারিক (এসডিপিও) অমিতাভ মাইতি সমস্যার কথা প্রকারান্তরে স্বীকার করে বলেছেন, “হলদিয়া শিল্পাঞ্চলে ক্রমাগত শিল্পকারখানা ও মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। নয়াচরেও শিল্প হবে। তাই পুলিশকর্মীর সংখ্যাও বাড়াতে হবে। কমিশনারেটের পরিকল্পনা রয়েছে। তবে লজিস্টিক হাব বা ট্রাক-ট্রার্মিনাস না হলে সমস্যার সমাধান কষ্টকর।” যদিও বন্দর কর্তৃপক্ষ পুরসভাকে দেওয়া জমি ফিরিয়ে নিয়েছে, তবু সিটিসেন্টারের কাছে প্রস্তাবিত ‘ট্রাক টার্মিনাস’ হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন হলদিয়া বন্দরের প্রশাসনিক আধিকারিক অমল দত্ত। তিনি বলেন, “জমি ফেরত নেওয়া হলেও প্রকল্পটি হবে। তবে কী ভাবে গড়া হবে, তা এখনও ঠিক হয়নি।” |
|
|
|
|
|