হাওড়ায় দলীয় প্রতিবেদনে আত্মসমালোচনা
চার জনের মৃত্যু, সন্দেহ তাড়ি থেকেই বিষক্রিয়া
বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হল চার যুবকের। সোমবার ঘটনাটি ঘটেছে খানাকুলের শাবলসিংহপুর গ্রামে।
পুলিশ জানায়, মৃতদের নাম অভিরাম সানকি (৩০), বেচারাম সানকি (৩৮), জলধর সানকি (৩৮) এবং শশধর সানকি (৩৫)। অভিরাম এবং বেচারাম দুই ভাই। অন্য দু’জন তাঁদের জ্যাঠতুতো ভাই। সোমবার সন্ধ্যায় তালের রস থেকে তৈরি তাড়ি খেয়েছিলেন সকলে। তারপরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খেত থেকে আলু তোলা শেষ করে ওই চার জন মাঠেই তাড়ি খেতে বসেন। যে গাছটি থেকে তাঁরা রস পেরেছিলেন, সেটি স্থানীয় এক ব্যক্তির। জলধরের বড় দাদা ভগীরথ সানকি বলেন, “সাড়ে ৬টা নাগাদ ওরা প্রায় হামাগুড়ি দিয়ে বাড়ি ফিরল। তখন থেকেই ওদের পায়খানা-বমি হচ্ছিল। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা বের হচ্ছিল। পেটে অসহ্য যন্ত্রণার কথা বলছিল।” মৃতদের পরিবারের লোকজন জানান, চার জনকে স্থানীয় এক হাতুড়ের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তাঁর দেওয়া ওষুধে কোনও উপশম হয়নি। উল্টে চার জন আরও নেতিয়ে পড়েন।
রাত ১১টা নাগাদ তাঁদের আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তখনই বেচারামকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই বাকিদেরও মৃত্যু হয়। ভগীরথবাবু বলেন, “বছরের পর বছর আমরা ওই গাছের রস খাই। কিন্তু এর আগে কোনও দিন কোনও শারীরিক সমস্যা হয়নি।”
— নিজস্ব চিত্র।
মঙ্গলবার ওই গাছ মালিক এবং অভিরামের পিসতুতো দাদার ছেলেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছে পুলিশ। তদন্তকারী অফিসারেরা জানান, দেহগুলি পাঠানো হয়েছে ময়না-তদন্তের জন্য।
প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের ধারণা, তাড়িতে বিষক্রিয়ার ফলেই ওই চার জনের মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে। যদিও আরামবাগ আবগারি দফতরের ওসি শ্যামাপদ রাজবংশী বলেন, “তালের তাড়ি খেয়ে কারও মৃত্যু হয় না। সকালে পাড়া রস যত দেরিতেই খাওয়া হোক, তার মাদক ক্রিয়া নেহাতই কম। ময়না-তদন্তেই চিত্র পরিস্কার হবে।” পুলিশের পাশাপাশি আবগারি দফতরের কর্মীরাও ঘটনাস্থলে যান।
খানাকুল ২ ব্লকের বিএমওএইচ অভিজিৎ কাঁড়ার বলেন, “স্বাস্থ্য নিয়ে এত প্রচারের পরেও প্রায় বেঘোরে মরতে হল ওই চার জনকে। তাঁদের প্রথমেই সরকারি হাসপাতালে আনা উচিত ছিল। কিন্তু তা না করার ক্ষেত্রে স্থানীয় কোনও হাতুড়ের ভূমিকা ছিল কিনা, তা আমরা খতিয়ে দেখছি।” অভিজিৎবাবুর আরও বক্তব্য, “শাবলসিংহপুরেই প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র আছে। সেখানে না নিয়ে গিয়ে ঘণ্টাখানেক দূরত্বে আরামবাগ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে সময় নষ্ট করা হল কেন, তা-ও দেখা হচ্ছে।” সংশ্লিষ্ট হাতুড়ে চিকিৎসক স্বদেশ জানার দাবি, “আমি ঘণ্টা দু’য়েক দেখেই সকলকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে বলেছিলাম। শাবলসিংহপুরে সঠিক চিকিৎসা হবে কিনা, তা ভেবেই আরামবাগে নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিই।”
বেচারামের স্ত্রী করুণা বলেন, “আমাদের সংসারগুলো ভেসে যাবে। সরকার কিছু একটা ব্যবস্থা করুক।” শাবলসিংহপুরের পঞ্চায়েত প্রধান তথা ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সিপিএমের পূর্ণিমা ঘোড়ুই বলেন, “চারটি পরিবারই বিপিএলভুক্ত ছিল বলে জানি। এখনও তাঁদের একই অবস্থান আছে কিনা, তা দেখতে হবে। সেই মতো পঞ্চায়েতগত ভাবে সাহায্য পেতে পারেন। তা ছাড়া, প্রয়োজনে একশো দিনের কাজ, স্বনির্ভর গোষ্ঠীর কাজ তো করতেই পারেন ওঁরা। সর্বোপরি, পঞ্চায়েত ওঁদের পাশে থাকবে।” প্রধানের বক্তব্য, “ঘটনাটির পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হোক। তাড়ির নেশা কমাতে প্রশাসন পঞ্চায়েতকে সাহায্য করুক।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.