হাওড়ায় দলীয় প্রতিবেদনে আত্মসমালোচনা
ধারাবাহিক ‘বিপর্যয়’ কাটিয়ে উঠতে পারেনি সিপিএম
ঞ্চায়েত নির্বাচনের আর বেশি দেরি নেই। অথচ ২০০৮ সালে হাওড়া জেলায় পঞ্চায়েত নির্বাচনে সিপিএমের যে বিপর্যয় ঘটেছিল, সেই ধাক্কা এখনও সামলে ওঠা যায়নি। এই পরিস্থিতিতে দলের জেলা নেতৃত্ব বেশ চিন্তিত। তাঁদের উদ্বেগ ধরা পড়েছে গত জানুয়ারি মাসে অনুষ্ঠিত দলের জেলা সম্মেলন উপলক্ষে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে সাফ জানানো হয়েছে, এক দিকে যেমন জেলায় বামবিরোধী গ্রাম পঞ্চায়েতগুলির দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলতে দল ব্যর্থ হয়েছে, অন্য দিকে যে দুর্নীতির যে অভিযোগগুলি বামবিরোধী পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে উঠেছে সেই দোষ অনেকটাই দেখা দিয়েছে বামশাসিত পঞ্চায়েতগুলিতেও।
জেলায় মোট ১৫৭টি গ্রাম পঞ্চায়েত, ১৪টি পঞ্চায়েত সমিতি এবং জেলা পরিষদ। এক সময়ে এর সিংহভাগ বামফ্রন্টের হাতে থাকলেও, ২০০৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে শুধুমাত্র জেলা পরিষদই বামফ্রন্ট নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছিল। অন্য দিকে চারটি বাদ দিয়ে বাকি পঞ্চায়েত সমিতি এবং অধিকাংশ গ্রাম পঞ্চায়েতই চলে যায় বামবিরোধীদের হাতে। এর পরে হয় লোকসভা নির্বাচন। তাতেও এই জেলায় অনেকটাই জমি হারায় বামফ্রন্ট। শেষ পর্যন্ত বিধানসভা নির্বাচনে জেলার ১৬টি আসনেই বামফ্রন্ট কংগ্রেস-তৃণমূল জোটের কাছে হেরে যায়।
প্রতিবেদনে বামবিরোধী গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতিগুলির বিরুদ্ধে সমালোচনা করে বলা হয়েছে, জেলায় গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে চলছে চূড়ান্ত স্বজন-পোষণ ও দুর্নীতি। চলছে দলবাজি। ঠিকাদারির কাজ পাওয়াকে কেন্দ্র করে পঞ্চায়েত কর্তাদের মধ্যে ‘কাটমানি’ নেওয়ার প্রতিযোগিতা চলছে। পরিকল্পিত স্থায়ী উন্নয়নের পরিবর্তে ‘সস্তা জনপ্রিয়তা’র লক্ষে ভোটবাক্সের দিকে তাকিয়ে কার্যধারা পরিচালিত হচ্ছে।
একই ভাবে প্রতিবেদনে বামফ্রন্ট পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তোলা হয়েছে। বলা হয়েছে, “কংগ্রেস এবং তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলি যে ব্যাধিতে আক্রান্ত আমাদের পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিও যে তা থেকে পুরোপুরি মুক্ত সে কথা বলা যাবে না।”
নিজেদের দখলে থাকা গ্রাম পঞ্চায়েতগুলিতে এই পরিস্থতির জন্য দলীয় পঞ্চায়েত সদস্য এবং সংশ্লিষ্ট লোকাল ও জোনাল কমিটির নেতৃত্বকে দায়ী করেছেন সিপিএমের জেলা নেতারা। তাঁদের বক্তব্য, গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্যদের পঞ্চায়েতের কাজে নিয়মিত যুক্ত থাকার ক্ষেত্রে অনীহা দেখা যাচ্ছে অনেক ক্ষেত্রে। পঞ্চায়েত-স্তরে কাজকর্ম পরিচালনার জন্য দলীয় স্তরে সে ‘সমন্বয় সমিতি’ রয়েছে তার সভা নিয়মিত হয় না। কংগ্রেস এবং তৃণমূলের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার কথা বলা হলেও বাস্তবে তা করা হয়নি। দলের লোকাল এবং জোনাল কমিটিগুলি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেনি।
বামফ্রন্টের দখলে থাকা পঞ্চায়েতগুলির কাজকর্মে যাতে স্বচ্ছতা থাকে, সে বিষয়টিও মাথায় রাখা হয়নি বলে সিপিএমের জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দলের সংশ্লিষ্ট এলাকার স্থানীয় নেতাদের দায়ী করেছেন তাঁরা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ক্ষেত্রে দলের স্থানীয় নেতাদের যে ভূমিকা নেওয়া প্রয়োজন ছিল বাস্তবে তা নেওয়া হয়নি। অন্য দিকে, কংগ্রেস এবং তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েতগুলিতে বিরোধী নেতার ভূমিকাও পালন করতে ব্যর্থ হয়েছেন দলের প্রতীকে নির্বাচিত প্রার্থীরা।
বিপর্যয় সামলে ওঠার জন্য ২০০৯ সাল থেকে বার বার এ বিষয়ে বিভিন্ন নির্দেশ দেওয়া হলেও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে যে সেই নির্দেশ পালিত হয়নি সে কথাও প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে। সিপিএমের এক জেলা নেতার বক্তব্য, “পরিস্থিতির উন্নতি তো দূরের কথা, বিধানসভা নির্বাচনের পরে তা আরও শোচনীয় হয়েছে।”
একই ভাবে সমালোচনা করা হয়েছে জেলা পরিষদে দলীয় সদস্যদের কয়েক জনের বিরুদ্ধেও। দলের যে সভায় জেলা পরিষদের কাজকর্মের বিষয়ে আলোচনা করা হয় তাতে অধিকাংশ কর্মাধ্যক্ষ হাজির থাকেন না। কয়েকজন কর্মাধ্যক্ষের কাজকর্ম আশানুরূপ নয় বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে।
এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আন্দোলনকেই হাতিয়ার করতে চাইছেন জেলা নেতৃত্ব। তাঁরা জানান, পঞ্চায়েতগুলিতে ক্রমাগত আমলাতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ বাড়ছে। শাসকদলের হাতিয়ারে পরিণত হচ্ছে পঞ্চায়েতগুলি। একই সঙ্গে পঞ্চায়েত পরিচালনার ক্ষেত্রে বেড়ে চলেছে তৃণমূলের খবরদারি। এই দুইয়েরই বিরুদ্ধে জেলা জুড়ে আন্দোলন করা হবে সিপিএম নেতৃত্ব জানিয়েছেন।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.