পঁচিশ হাজারি ব্যবধানই উমার ‘মুখতোড়’ জবাব |
দিগন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় • নয়াদিল্লি |
উত্তরপ্রদেশে পদ্ম ফোটাতে ব্যর্থ বিজেপির বহু তাবড় নেতা। একে একে হেরে গিয়েছেন প্রদেশ সভাপতি, দুই প্রাক্তন সভাপতি এমনকী, বিরোধী দলনেতাও। রাজনাথ সিংহ, মুরলীমনোহর জোশীর গড়গুলিতেও তাঁদের পছন্দের প্রার্থীরা মুখ থুবড়ে পড়েছেন।
ব্যতিক্রম এক জনই, উমা ভারতী।
মধ্যপ্রদেশ থেকে এসে উত্তরপ্রদেশে প্রথম নির্বাচন লড়লেন। শুধু লড়লেনই না। বুন্দেলখণ্ডের রুক্ষ মাটিতেও বিজেপির পতাকা তুললেন। ২৫ হাজারেরও বেশি ব্যবধানে জিতে রেকর্ড গড়লেন বিজেপির অগ্নি-কন্যা।
তবু কোনও উচ্ছ্বাস নেই, ঢাক পেটানো নেই। ভোটের বিশাল ব্যবধান দিয়েই নিঃশব্দে বার্তা দিলেন দলের নেতৃত্বকে। জয়ের পরে আজই ট্রেনে চেপে পাড়ি দিয়েছেন ভোপালে। পরশু হোলি খেলবেন ভাইপো-ভাইঝিদের সঙ্গে। পরের সপ্তাহে আসবেন দিল্লিতে।
বুথ ফেরত সমীক্ষা বলেছিল, বুন্দেলখণ্ডে বিজেপির ভাঁড়ার শূন্য। গুম মেরে গিয়েছিলেন। আত্মবিশ্বাসই হারিয়ে ফেলেছিলেন যেন। আজ ভোটবাক্স খোলার পরে বেলা যত গড়িয়েছে, কেটে গিয়েছে গুমোট ভাবটা। নিজে অন্তত জিতেছেন। তবে হতাশা কাটেনি। ঘনিষ্ঠ মহলে জানিয়েছেন, দল তাঁকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী ঘোষণা করলে এই অবস্থা বদলে দিতে পারতেন! এক সময়ে মধ্যপ্রদেশে যেমন তাঁকে নিজের মতো ঘুঁটি সাজানোর সুযোগ দেওয়া হয়েছিল, উত্তরপ্রদেশে সেই সুযোগ পেলে ১০০ আসনের গণ্ডি পেরিয়ে যেত দল। |
প্রকাশ্যে উমা শুধু বলছেন, “সর্বশক্তি দিয়ে দল ভোটে লড়েছে। উত্তরপ্রদেশের উন্নয়নই এখন আমার লক্ষ্য।” তাঁর ঘনিষ্ঠ নেতারা কিন্তু ক্ষোভ প্রকাশ করতে ছাড়ছেন না। বলছেন, “দেখুন, দিদি (উমা) যেমন ওবিসি নেত্রী, তেমন হিন্দুত্বের মুখও বটে। দল সমীক্ষা করেই টিকিট দিয়েছে। কিন্তু তার মধ্যেও দেড়শো আসন বিলি করা হয়েছে রাজনাথ সিংহ, কলরাজ মিশ্র, মুরলীমনোহর জোশীদের কথায়। তাঁদের বাছাই করা প্রার্থীদের প্রায় সকলেই হেরেছেন। দিদিকে আটকানোর জন্য যাঁরা উঠেপড়ে লেগেছিলেন, তাঁরা সকলেই ব্যর্থ।” বুন্দেলখণ্ডের ১৯টি আসনের মধ্যে মাত্র ৩টিতে জিতেছে বিজেপি। তার মধ্যে এক জন হলেন উমা ভারতী। এ তো ‘মুখতোড়’ জবাব।
ক্ষুব্ধ এই নেতাদের প্রশ্ন, এর পরেও কি টনক নড়বে না দিল্লির নেতাদের, যাঁরা শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে কৌশল রচনা করেন? উমাকে দলে ফেরানোর সময় দলের শর্ত ছিল, মধ্যপ্রদেশে রাজনীতি আর করা যাবে না। আডবাণীও উমাকে ফিরিয়ে এনে উত্তরপ্রদেশে তাঁকে মুখ্যমন্ত্রীর প্রার্থী হিসেবে তুলে ধরার কথা বলে আসছেন। অনেকের আপত্তি উপেক্ষা করে গডকড়ী উমাকে আনলেন বটে, কিন্তু দলে কোঁদলের জের আর ষড়যন্ত্রের ভয়ে মুখ্যমন্ত্রী প্রার্থী করতে পারলেন না।
ভোটের আগে দলের নির্বাচন কমিটির বৈঠকে নেতাদের টিকিট কাড়াকাড়ি দেখে উমা রাগে সভা ছেড়ে বেরিয়ে এসেছিলেন। পরেও কোনও দিন আর যাননি। ক্ষোভ জানাননি সংবাদমাধ্যমের সামনেও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। এক বার দল থেকে বেরিয়ে জগৎটাকে পরখ করেছেন। আর সেই ভুল করবেন না। বরং এ বারের ভোটের ফলাফল দেখিয়েই দলে সমালোচনার মুখ বন্ধ করবেন। দলকে সাজাবেন উত্তরপ্রদেশে। প্রস্তুতি শুরু করবেন লোকসভা নির্বাচনের। কারণ, ধীরে ধীরে দিল্লির রাজনীতিতে প্রত্যাবর্তনই যে তাঁর লক্ষ্য। |