পাঁচ রাজ্যেও অস্তিত্ব মুছল বামেদের
দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে দলের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট উত্তরপ্রদেশের সংগঠনের দায়িত্বে। কিন্তু সেই উত্তরপ্রদেশে সমাজবাদী পার্টি যে বিপুল ভাবে ক্ষমতায় আসতে চলেছে, তা আগাম আঁচই করতে পারেনি সিপিএম। সাধারণ সম্পাদক তো নিশ্চিত ছিলেন, সিপিএম একটি আসন পাচ্ছেই।
পঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচনে সিপিএম, সিপিআই, মনপ্রীত বাদলের পঞ্জাব পিপল্স পার্টি মিলে ‘সাঁঝা মোর্চা’ তৈরি করেছিল। সিপিএম প্রার্থী দিয়েছিল ন’টি আসনে। নির্বাচনী প্রচার থেকে ফিরে কারাট বলেছিলেন, কংগ্রেস ক্ষমতায় আসছে। বাম জোটের ফলও ভাল হবে।
সাধারণ সম্পাদকের কোনও ‘ভবিষ্যৎবাণী’-ই মেলেনি। উল্টে আজ তাঁর বিরুদ্ধে ‘রাজনৈতিক রণকৌশল’ মেনে না চলার অভিযোগ উঠেছে। দলের মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, উত্তরপ্রদেশে সিপিএম কেন সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে হাত মেলাল না? সিপিএমের অন্দরমহলের পাশাপাশি অন্যান্য বাম দলের নেতারা মনে করছেন, বামঐক্য ধরে রাখা বা দেশের আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রয়াত হরকিষেণ সিংহ সুরজিৎ বা জ্যোতি বসু যে ভূমিকা পালন করতেন, প্রকাশ কারাট তাতে পুরোপুরি ব্যর্থ।
লখনউয়ের গদিতে মুলায়ম সিংহ যাদব বসতে চলেছেন, আজ তা স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে এক পলিটব্যুরো সদস্য বলেন, “আমাদের রাজনৈতিক রণকৌশলের প্রথম কথাই হল বামদলগুলির মধ্যে ঐক্য মজবুত করা এবং অ-কংগ্রেসি, অ-বিজেপি দলগুলিকে নিয়ে বাম গণতান্ত্রিক জোট তৈরির চেষ্টা করা। সেই অনুযায়ী উত্তরপ্রদেশে বামদলগুলির পাশাপাশি সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে জোটে যাওয়াই উচিত ছিল।”
কিন্তু সমাজবাদী পার্টি তো দূরের কথা, সিপিআই বা অন্য দলগুলির সঙ্গেও জোট করেনি সিপিএম। পলিটব্যুরো সূত্রের খবর, উত্তরপ্রদেশের রাজ্য কমিটি রিপোর্ট দিয়েছিল, মুলায়মের দল খুব একটা ভাল ফল করবে না। সেই জন্যই সপা-র সঙ্গে হাত মেলানোর কথা ভাবা হয়নি। অথচ সংসদে এর আগে বিভিন্ন ইস্যুতে সপা-র সঙ্গে কক্ষ সমন্বয় বা যৌথ আন্দোলনের পথে হেঁটেছে সিপিএম। অভিযোগ উঠেছে, কারাটের এই একগুঁয়ে ‘একলা চলো’ নীতির কারণেই পাঁচ রাজ্যে একটি আসনও জোটেনি সিপিএমের। প্রশ্ন উঠেছে কারাটের নিজস্ব ‘রাজনৈতিক বোধ’ নিয়েও। ২০০৯ সালে লোকসভা ভোটে কিন্তু মায়াবতীর সঙ্গে জোট তৈরি করেছিলেন কারাট। উত্তরপ্রদেশে সিপিএমকে তার মাসুল দিতে হয়েছে। এ দিন কলকাতায় সিপিএম নেতা বিমান বসু অবশ্য মুলায়মকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেছেন, তাঁর দলের জয়ে দেশে বাম-গণতান্ত্রিক-ধর্মনিরপেক্ষ আন্দোলনই শক্তিশালী হবে।
পলিটব্যুরো নেতা সীতারাম ইয়েচুরির কথায়, “দলের এই ফলাফল দুর্ভাগ্যজনক। এ নিয়ে দলে আলোচনা হবে।” উত্তরপ্রদেশের নির্বাচন নিয়ে সিপিএম কেন বামদলগুলির সঙ্গেও আলোচনায় গেল না, তা নিয়ে আগেই অসন্তোষ জানিয়েছে সিপিআই। কারাট-শিবিরের পাল্টা যুক্তি, মুলায়মের সঙ্গে গেলে হয়তো সিপিএম অনেক বেশি ভোট পেত। কিন্তু দলের নিজস্ব শক্তি টের পাওয়া যেত না। মায়াবতী-সরকারের বিরুদ্ধে যে ভোট পড়বে, তা উত্তরপ্রদেশ রাজ্য কমিটি ঠিকই আঁচ করেছিল। কিন্তু সেই ভোট ভাগ হয়ে যাওয়ার বদলে পুরোটাই যে সপা-র ঝুলিতে যাবে, তা তারা বোঝেনি। উত্তরপ্রদেশ রাজ্য কমিটির সম্পাদক এস পি কাশ্যপ বলেন, “কোরাওঁ আসনটি আমরা পেতাম। সেখানে সপা আমাদের ভোট কেটে নেওয়ায় বসপা জিতে গিয়েছে। আমরা দ্বিতীয় হয়েছি।”
পলিটব্যুরো সূত্রের বক্তব্য, ২০০৫ সালে কারাট দায়িত্বে আসার পরে অসম, ওড়িশা, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ ও বিহার বিধানসভা থেকে সিপিএমের অস্তিত্ব মুছে গিয়েছে। এ বার পাঁচটি রাজ্যেও দাঁত ফোটাতে পারল না সিপিএম। মণিপুরের মতো রাজ্য থেকেও নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল তারা। নিশ্চিত ভাবেই এ নিয়ে কোঝিকোড় পার্টি কংগ্রেসে প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে প্রকাশ কারাটকে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.