মণিপুরে প্রথম বার লড়েই প্রধান বিরোধী দল তৃণমূল
জোট বা ত্রিশঙ্কু জটের জটিলতা আর রইল না। দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে টানা তৃতীয় বার মণিপুরের সচিবালয় দখলে রাখল কংগ্রেস। ৬০ আসনের মণিপুর বিধানসভায় একক ভাবে কংগ্রেস দখল করল ৪২টি আসন। গো-বলয় কিংবা পঞ্চনদের দেশে ভরাডুবির মাঝে প্রত্যন্ত উত্তর-পূর্বে, রাজকুমারী চিত্রাঙ্গদার দেশে এই লক্ষ্যভেদ এ বারের ভোটে কংগ্রেসের অন্যতম সান্ত্বনা পুরস্কার। তবে দুই-তৃতীয়াংশের এই প্রবল সমর্থনের মাঝেও ‘কাঁটা’ একটা আছে। আর সেই কাঁটার নাম তৃণমূল কংগ্রেস।
রাজ্যে প্রথম বার নির্বাচনে লড়তে নেমে দলছুট বিধায়ক, প্রাক্তন স্পিকার, হাফ-ডজন প্রাক্তন মন্ত্রী ও প্রাক্তন কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস মণিপুর রাজনীতিতে ‘ভারী কদম’-ই রাখলেন। বিধানসভার দশ শতাংশের বেশি আসন (৭ টি আসন) দখল করে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলের সম্মান পাচ্ছে তৃণমূল। শতাংশের হিসেবে তৃণমূলের দখলে রাজ্যের মোট ভোটের ১৯ শতাংশেরও বেশি। বহুধা বিচ্ছিন্ন মণিপুরের বিরোধী ভোটের রাজনীতিতে একক ভাবে তৃণমূলের পিছনে এই ১৯ শতাংশ মানুষের ‘সমর্থন’ কংগ্রেসের উদ্বেগের কারণ।
ইম্ফলে তৃণমূলের বিজয় মিছিল। ছবি: উজ্জ্বল দেব।
এরই পাশাপাশি, কংগ্রেসের উদ্বেগের আর এক কারণ ‘নাগা পিপল্স ফ্রন্ট’। নাগা অধ্যুষিত মণিপুর থেকে নাগাল্যান্ডের শাসক জোট এনপিএফ এ বার মণিপুর নির্বাচনে ৪টি আসন জিতে বিধানসভায় চতুর্থ বৃহত্তম দল। মণিপুরের কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহ ভিন্ রাজ্য থেকে আসা এই দুই দলের বিরুদ্ধে ব্যাপক তোপ দেগেও শেষ পর্যন্ত সফল হলেন না।
২০০৭ সালের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস পেয়েছিল ৩০টি আসন, ভোট পেয়েছিল ৩৫.২২ শতাংশ। এ বার ৪২টি আসন পেয়ে জুটেছে ৫২ শতাংশ। রাজ্যের ৬০টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছিল একমাত্র কংগ্রেস। তৃণমূলের প্রার্থী ছিল ৪৭ আসনে। পিডিএফ জোট, মণিপুর স্টেট কংগ্রেস পার্টি, বিজেপি ও এনপিএফ যথাক্রমে ৪৩, ৩৪, ১৯ ও ১২টি আসনে প্রার্থী দেয়। জোটে ছিল সিপিআই-ও। গত ভোটে সিপিআই ৪টি আসন নিয়ে কংগ্রেসের জোট সরকারে সামিল ছিল। এ বার কংগ্রেসের সঙ্গে জোট ভেঙে পিডিএফ জোটে সামিল হয় সিপিআই, সিপিএম-ও। খাতাই খুলতে পারেনি তারা।
ভোটের ফল বেরনোর পর বিরোধীরা কংগ্রেসের বিরুদ্ধে রিগিং-এর অভিযোগ এনেছে। কংগ্রেস মানুষকে অভিনন্দন জানিয়েছে। মণিপুরবাসীকে অভিনন্দন জানিয়েছেন ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। নিজের রাজ্য, পশ্চিমবঙ্গ ছেড়ে এ বারই প্রথম মণিপুরে তৃণমূলের হয়ে প্রচারে এসেছিলেন মমতা। এবং কয়েক ঘণ্টার সফরে একেবারে নিজস্ব ঢঙে তৃণমূলের পালে হাওয়া টেনে আনেন তিনি। সমস্ত প্রোটোকল, নিরাপত্তা বলয় ভেঙে যে ভাবে তিনি ‘বন্দি’ শর্মিলা চানুর কাছে হাজির হন তাতে মণিপুরবাসী, বিশেষ করে মহিলারা, দিদিকে নিজেদের লোক হিসেবেই বরণ করেন।
তবে মণিপুর বিধানসভায় ৭টি আসন বা ১৯ শতাংশ ভোট পেয়ে তৃণমূল ‘জাতীয় দল’ হওয়ার পথে আরও এক ধাপ এগোলেও, আগামী পাঁচ বছর রাজ্যে শাসক কংগ্রেসের উপর চাপ তৈরির পরিকল্পনা তাদের পূরণ হল না। এ বারের ভোটের প্রথম থেকেই কংগ্রেস খানিকটা কোণঠাসা ছিল। ছিল প্রবল বিরুদ্ধ প্রচার, জঙ্গি-জোটের কংগ্রেস-বয়কটের ডাক ইত্যাদি। সব মিলিয়েই উদ্বেগে ছিলেন ইবোবি সিংহ। সেই পরিস্থিতিতে, ভোটের পরে মণিপুরে কংগ্রেসকে ‘সমর্থন’-এর ব্যাপারে তৃণমূল নেতৃত্ব দিল্লির কংগ্রেস নেতাদের আশ্বস্তও করেছিলেন। কিন্তু সেই সুযোগ তৃণমূল পেল না। ‘হ্যাট্রিক’ করা মুখ্যমন্ত্রী ওক্রাম ইবোবি সিংহের সেটাই স্বস্তির কারণ। তাঁর প্রতিক্রিয়া, “জোট গড়া নিয়ে অনেক জল্পনা চলছিল। মণিপুরের মানুষ দেখিয়ে দিলেন, তাঁরা কংগ্রেসের সঙ্গেই রয়েছেন। আমাদের আর কাউকে প্রয়োজন নেই।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.